ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নদী চলুক নিরবধি

প্রকাশিত: ২১:১৮, ২৫ নভেম্বর ২০২১

নদী চলুক নিরবধি

নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদীগুলোই হুমকির মুখে। দিন দিন মরে যাচ্ছে, দখল হয়ে যাচ্ছে কিংবা দূষণের শিকার হয়ে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ছে নদ-নদী। সরকারের পক্ষ থেকেও দূষণ ও দখলমুক্ত করাতে বারবার উদ্যোগ নেয়া হয়। চলে উচ্ছেদ অভিযান। কানামাছি খেলার মতো আবারও দখল হয়ে যায় দখলমুক্ত নদী। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো শরণাপন্ন হয় আদালতের। আদালত থেকে দূষণ ও দখলমুক্তির নির্দেশ জারি করা হয়। নদী রক্ষায় গঠন করা হয়েছে জাতীয় কমিশন। তবু দূষণ ও দখলমুক্ত হয় না নদী। জনকণ্ঠে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৬৪ জেলায় ৬৩ হাজার ২৪৯ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভয়াবহ চিত্র। এক হিসাব মতে, বাংলাদেশে ছোট বড় ৭১০টি নদ-নদী রয়েছে। এর মধ্যে ৩শ’ বড় নদী ও ৪শ’ শাখা-উপনদী। আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে ৫৭টি। গত ৫০ বছরে প্রায় একশ’ নদী বিলীন হয়ে গেছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে শতাধিক নদী। দখল ও ভরাটের কারণে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আরও অনেক নদী। ¯্রােতস্বিনী নদী পরিণত হচ্ছে নালা-নর্দমায়। শুধু ঢাকা বিভাগেই এমন ১৫১টি নদী ও ১ হাজার ১১২টি খাল দখলদারের হিসাব পাওয়া গেছে। এগুলো কাগজের হিসাব। প্রকৃত অবস্থা আরও খারাপ। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ইতোমধ্যে বেশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকেও উচ্ছেদ অভিযান চলমান। উচ্ছেদের পর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আবার দখল হয়ে যায় নানা অজুহাতে। কোন কোন স্থানে নদী দখল করে মসজিদসহ ধর্মীয় স্থাপনা তৈরি করা হয়, যাতে সরকার উচ্ছেদ অভিযান চালাতে না পারে। এরপর আশপাশে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা। নদীর দখল-দূষণ রোধে উচ্চ আদালত গত দশ বছরে অর্ধ শতাধিক আদেশ দিয়েছেন। অনেক আদেশ বাস্তবায়নও হয়েছে। আদালত বলেছেন, যারা দখল-দূষণে নদীকে আক্রান্ত করেছে তারা মানবতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে অভিযান চালানো উচিত। নদী দখলকারীকে সব ধরনের নির্বাচন ও ব্যাংকঋণ গ্রহণেও অযোগ্য ঘোষণা করেছে আদালত। আমরা মনে করি, এই তথ্যগুলো অবিলম্বে আমলে নিয়ে নদী দখল ও দূষণ মুক্তির জন্য আরও বেশি পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। দখল ও দূষণে একদিকে যেমন নদীগুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে, অন্যদিকে বাংলাদেশও মুখোমুখি হচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের। প্রতিবছর বন্যা ও খড়ার তীব্রতার অন্যতম কারণ নদী দখল। নদী দখলের এই মহোৎসব চলতেই থাকবে, এটা হতে পারে না। সাবির্ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার নদ-নদীর দখল ও দূষণ রোধে আরও কার্যকর উপায় খুঁজতে হবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আদালতের ভাষায় বলতে চাই, নদীগুলো চলুক নিরবধি। জোয়ার ভাটার নদীগুলো তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখাতে থাকুক। মাঝি-মাল্লারা মনের সুখে প্রাণ খুলে গেয়ে উঠুক ভাটিয়ালি গান। বাংলার দামাল ছেলেরা নদীতে মনের সুখে আবার দাপাদাপি করুক। মৎস্যজীবীদের সুখের দিন আবার ফিরে আসুক। তবেই না সার্থক হবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নাম।
×