ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে

প্রকাশিত: ২১:১৩, ২৪ নভেম্বর ২০২১

ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ফসলের উৎপাদন ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। অথচ কৃষি খাতটি এখনও এই অঞ্চলের দেশ সমূহের ৫০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যার জীবিকা ও কর্মসংস্থানের প্রধান উপায়। এই বাস্তবতায় এই অঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক সুবিধা বঞ্চিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য এবং জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমন কৌশলগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করার লক্ষ্যে গবেষণাভিত্তিক কৌশল তৈরির ক্ষেত্রেই ন্টারন্যাশনালফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট, সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং সার্ক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড একত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের আধুনিক কৌশল আরও বেশী বেগবান করতে অংশীদারিত্ব প্রকল্প চালু করেছে। অনাদিকাল থেকে কৃষি একটি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে, কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থাকেআরও বেশী ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে শতাব্দীর শেষে ১০-৫০ শতাংশ ফসলের উৎপাদন কমে যেতে পারে। তথাপি, কৃষি খাতটি এখনও এই অঞ্চলের দেশ সমূহের ৫০ শতাংশেরও বেশি জনসংখ্যার জীবন, জীবিকা এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থানের প্রধান উপায়। এই বাস্তবতায় এই অঞ্চলে বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক সুবিধা বঞ্চিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য এবং জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমন কৌশলগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অংশীদারিত্ব প্রকল্পটি দক্ষিণ এশিয়ার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই কৃষির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের আধুনিক কৌশল এবং প্রযুক্তির সমন্বয় করা হবে। চারটি সংস্থার অনুদানে প্রায় ৩১ লাখ ডলারের পাইলট প্রকল্প বা চুক্তিটির বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে যা আগামী বছরগুলোতে বিনিয়োগের হার আরও বাড়বে বলে অংশীদার সংস্থাগুলো আশাবাদী। ইফাদের প্রধান আঞ্চলিক অর্থনীতিবিদ আবদেল কারিম স্মা বলেন, ‘চুক্তিটি খাদ্য নিরাপত্তার উন্নতির জন্য এবং এই অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষিকে উপকৃত করার জন্য সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের সাখে সাথে ইফাদ-এর অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করবে। প্রকল্পটি কৃষি ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং অনুশীলনগুলো দেখবে যা অভিযোজন, পুষ্টি, নারী ও যুবকদের জন্য সমন্নিত উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সার্ক কৃষি কেন্দ্র দক্ষিন এশিয়ার টেকসই এবং স্থায়ীত্বশীল কৃষি অভিযোজন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রচার ও সমর্থন করবে। বর্তমানে, দক্ষিণ এশিয়ার জাতীয় কৃষি গবেষণা এবং সম্প্রসারণ ব্যবস্থার মধ্যে একটি বড় আন্ত:সীমান্ত সহযোগিতা এবং সক্ষমতার সীমাবদ্ধতা রয়ে গেছে। সার্কের মহাসচিব এসালারুয়ান উইরাকুন বলেন, ‘এই প্রথম এ ধরনের আঞ্চলিক প্রকল্পটি সার্কভ‚ক্ত দেশ সমূহের ভেতরে এমন এক সময়ে চালু করা হয়েছে যখন জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি ল্যান্ডস্কেপের জন্য একটি বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ ঝুঁকিরবাস্তবতাবিবেচনাকরে, সার্ক কৃষি কেন্দ্র দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই এবং স্থায়ীত্বশীল কৃষি নিবিড়করণ সম্প্রসারণের জন্য এই সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশ কিছু কৃষি নীতি বাস্তবায়িত হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন এবং প্রশমনের বিষয়ে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়নি। কৃষি উন্নয়নের জন্য ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান ফর অ্যাকশন থাকলেও গবেষণা ভিত্তিক কৌশলগত বিনিয়োগ পরিকল্পনার অভাবে সেগুলো প্রায়ই অকার্যকর রয়েছে। সার্ক কৃষি কেন্দ্রের পরিচালক ড.এম বক্তীয়ার হোসেন বলেন, ‘ঠিক এই অবস্থায় সেন্টার ফল এক্সিলেন্স হিসাবে হিসেবে সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার দক্ষিণ এশিয়ার সার্ক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা করে স্থায়ীত্বশীল কৃষি উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে’। ইফরি অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়, গবেষণা-ভিত্তিক নীতিগত সমাধান কার্যকরভাবে দারিদ্র্য হ্রাস এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টির অবসান ঘটাতে পারে। ইফরির দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক শহিদুর রশিদ বলেন, ‘এই চুক্তিটি গবেষণা-ভিত্তিক নীতিগত সমাধান তৈরি করতে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু-সহনশীল এবং টেকসই খাদ্য সরবরাহকে ত্বরাšি^ত করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং টেকসই কৃষি নিবিড়করণ একে অপরের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।’ বিএআরসি মিলনায়তনে প্রকল্পেটির শুরুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে, সার্ক সদস্য দেশগুলোর আঞ্চলিক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য তাদের ভূমিকা ও দায়িত্বের রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এছাড়্ওা, দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই এবং স্থায়ীত্বশীল কৃষি নিবিড়করণের প্রচারেআঞ্চলিক সহযোগিতার গুরুত্ব্টিও তুলে ধরা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের উপর আঞ্চলিক দেশগুলোতে একটি পুক্সখানুপুক্সখ ম্যাপিং অনুশীলন করা হবে, যেখানে কৃষি-বাস্তুতন্ত্র চিহ্নিত করণ, যথাযথ প্রযুক্তি এবং অনুশীলনগুলো ক্রস-ডিসেমিনেট করা হবে, যা বর্তমান জাতীয় গবেষণা এবং এর প্রচারকে ত্বরাšি^ত করতে সহায়তা করবে। এসডিএফের অফিসার-ইন-চার্জ এবং সোশ্যাল উইন্ডোর পরিচালক অনুজ গোয়েল বলেন, ‘আমরা আশা করি যে আমাদের সম্মিলিত প্রয়াস জলবায়ৃপ রিবর্তনের প্রভাবগুলোর বিরুদ্ধে বিশেষ করে আমাদের ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোজিত সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সকল সদস্য রাষ্ট্রের ক্রমাগত প্রচেষ্টাকে ত্বরানি¦ত করবে। প্রকল্পটি পাইলটিং এর জন্য বিশেষ ফোকাসসহ সার্ক সদস্য দেশগুলোতে (আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানএবং শ্রীলঙ্কা) মহিলা কৃষকদের পাশাপাশি গবেষক, স¤প্রসারণকর্মী এবং নীতি নির্ধারকদের গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রান্তিক কৃষকদের সুবিধা দেওয়াই এ প্রকল্পের লক্ষ্যে থাকবে। এ প্রকল্পটি স্কেলিং আপ করার সাথে সাথে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং জ্ঞানআদান প্রদান কার্যক্রমের মাধ্যমে মালদ্বীপসহ সার্কের সকল দেশসমূহ উপকৃত হবে।
×