ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করদাতাদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:০৭, ২৪ নভেম্বর ২০২১

করদাতাদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদের যোগান আরও বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জানান, দেশের সম্মানিত করদাতাদের টাকায় নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। নাগরিকরা যে কর দিচ্ছেন, সেই করের টাকা দিয়ে সরকার বিনিয়োগ করে দেশের উন্নয়নের জন্য। এ কারণে রাষ্ট্রের উন্নয়নে, দেশের উন্নয়নে কিছু করার জন্য সে দায়বদ্ধতা থেকেই যোগ্য সবাইকে কর দেয়া উচিত। বুধবার ঢাকার অফিসার্স ক্লাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক আয়োজিত সেরা করদাতাদের ‘ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সেরা করদাতা হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ‘ট্যাক্স কার্ড’ এবং সর্বোচ্চ ও দীর্ঘসময় আয়কর প্রদানকারী ৫২৫ জন ব্যক্তি সেরা করদাতা সম্মাননা পেয়েছেন। ট্যাক্স কার্ডের জন্য ব্যক্তি শ্রেণিতে ৭৫ জন, কোম্পানি ক্যাটাগরিতে ৫৪ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১২ করদাতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার উষালগ্নে ১৯৭২ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠন করে এদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ধারাবাহিক উন্নয়নের ভিত রচনা করেছিলেন। তিনি অনুধাবন করেছিলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারকে যে উন্নয়ন ব্যয় করতে হয় তার মূল যোগান আসে রাজস্ব ব্যবস্থা থেকে। ১৯৭২-১৯৭৩ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৬৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছিল যা সময়ের পরিক্রমায় মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর তুলিতে আঁকা সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ আরও অনেক বাড়াতে হবে। দেশের সম্মানিত করদাতাদের টাকায়ই নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। তিনি বলেন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রাণশক্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে জনগণের স্বতর্স্ফূত অংশ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ার নব্য টাইগার হিসাবে আবির্ভুত হচ্ছে। আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশে পরিনত হবে। সাফল্যের এই ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজি অর্জন ও বাংলাদেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা এবং ২০৪১ সালের সুখী, সমৃদ্ধ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার জন্য সঠিক অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি করে দেয়া। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন অভিযাত্রাকে সফল করতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদের যোগান বাড়াতে হবে। রাজস্ব অনুপাত এখনও প্রতিবেশী ও উন্নয়ন প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় কম। এ বিষয়ে আমাদের আরও কাজ করতে হবে। এনবিআর-এর রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২০০৫-০৬ সালের ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে সাড়ে সাত গুণেরও বেশি বেড়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লক্ষ ৫৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত এক যুগে আয়কর-এর পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বার গুণ বেড়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে একটি করদাতা-বান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। করদাতার সংখ্যাও প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে। ফলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশার কথা হলো, জনগণের মধ্যে কর প্রদানের আগ্রহ বাড়ছে। সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কতৃক আয়োজিত ‘সেরা করদাতা সম্মাননা ও ট্যাক্স কার্ড’ অনুষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, সম্মানিত সর্বোচ্চ করদাতাদের সম্মাননা প্রদান এটি শ্ধু একটি পুরস্কারই নয়, এটি একটি স্বীকৃতি, একটি উৎসাহ, একটি অনুপ্রেরণা। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সম্পদশালী সবাইকে তাদের দায়বদ্ধতা থেকে কর দেয়া উচিত। সেরা করদাতাদের হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, ‘ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করা অপরাধ নয়, কিন্তু সবারই দায়বদ্ধতা আছে। রাষ্ট্রের উন্নয়নে, দেশের উন্নয়নে কিছু করার জন্য সে দায়বদ্ধতা থেকেই যোগ্য সবাইকে কর দেয়া উচিত। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশত বার্ষিকীর এই দিনো যার যার অবস্থান থেকে একটু একটু করে দেশের উন্নয়নে কর দেই। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসাবান্ধব পলিসি করার কারণে দেশের সবক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। বাড়ছে রাজস্ব আদায়। কর আহরণ বৃদ্ধি করতে হলে করবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। গত কয়েক বছরে ভ্যাট ও আয়কর আদায়ে বেশকিছু পরিবর্তন ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে হয়রানি কিছুটা কমলেও পুরোপুরি দূর হয়নি। ব্যবসায়ীরা হয়রানি মুক্ত থেকে ব্যবসা করার সুযোগ পেলে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে।
×