ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র কান্ডে উত্তাল রাজশাহী

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৪ নভেম্বর ২০২১

মেয়র কান্ডে উত্তাল রাজশাহী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির অডিও ফাঁসের পর রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার সেই মেয়র আব্বাস আলীকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেন তাকে দলীয় সদস্য পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, তা জানতে চেয়ে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার (২৪ নবেম্বর) বিকেলে দলীয় কার্যালয়ে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বৈঠকে আব্বাসকে কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত হয়। তাকে নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠায় এই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। রাজশাহীর পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাজদার রহমান সরকার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াসিন আলীর সভাপতিত্বে বিকেলে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আব্বাস আলীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে কেন দলীয় সদস্য পদ থেকে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না জানতে চেয়ে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শণের নোটিশ দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাজদার রহমান আরও বলেন, বৈঠক শেষে পৌর আহ্বায়কের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের কথা জানিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ আব্বাসের নামে ইস্যু করা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানো হবে। এদিকে, রাজশাহী কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর কুশপুতুল দাহ করেছে সাবেক ছাত্রলীগ ফোরাম নামের একটি সংগঠন। পাশাপাশি তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে সংগঠনটি। মহানগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এই বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় রাজশাহী কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর কুশপুতুল দাহ করে সাবেক ছাত্রলীগ ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। এর আগে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি মহানগরীর বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তির সকাল থেকেই প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহী। কাটাখালী পৌরসভার মেয়রকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকেই মহানগর এবং কাটাখালী পৌর এলাকায় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এছাড়া পৌর মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় মামলাও দায়ের করা হয়েছে। এর আগে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠে থাকা কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী একটি ঘোরায় বৈঠকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালী পৌরসভার অংশের উন্নয়নকাজ নিয়ে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে কটূক্তি করেন। এ ঘটনার অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁসের পর তিনিও ফেঁসে যান। অডিওতে মেয়র বলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। বড় হুজুরের সঙ্গে আমাদের এক লোক বসেছিলে, বসি যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক সঠিক না। এজন্য আমি ওকে থুব না। সব করব, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে মানুষ যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না, আমাক বুঝাই দিছে। এ জন্য আমি ওটাকে চেঞ্জ করছি। ’ সোমবার (২২ নবেম্বর) রাত থেকে মেয়র আব্বাসের এমন দুটি অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে। এরই মধ্যে দাবি উঠেছে গাজীপুরের মেয়রের মতো কাটাখালী পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার। ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপটিতে মেয়র আব্বাসকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই গেটটি দ্রুত নির্মাণ হবে। তবে আমরা যে ফার্মকে কাজটি দিয়েছি, তারা গেটের ওপরে বঙ্গববন্ধুর যে ম্যুরাল বসানোর ডিজাইন দিয়েছে, সেটি ইসলামি দৃষ্টিতে সঠিক না। তাই আমি সেটিকে বাদ দিতে বলেছি। ’ মেয়র বলেন, ‘যেভাবে বুঝেছে তাতে আমার মুনে হইছে যে, ম্যুরালটা হইলে আমার ভুল হয়্যা যাবে। এ জন্য চেঞ্জ করছি। এই খবরটাও যদি আবার যায় তো আবার রাজনীতি শুরু হয়ে যাবে। ওই বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল দিতে চাইয়া দিচ্ছে না! বঙ্গবন্ধুক খুশি করতে যাইয়া নারাজ করব নাকি? এইডা লিয়েও রাজনীতি করবে কিন্তু আমি সিওর। তবে, মেয়র আব্বাস আলী দাবি করেছেন, তিনি এই ধরনের কোনো মন্তব্যই করেননি। কেউ ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। এর বাইরে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আব্বাস আলী কাটাখালী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন।
×