ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহিদুল আলম জয়

ব্যর্থতার মাঝেই ‘আলো’ দেখছেন মুশফিক

প্রকাশিত: ০০:০৮, ২৪ নভেম্বর ২০২১

ব্যর্থতার মাঝেই ‘আলো’ দেখছেন মুশফিক

১৪ নবেম্বর শেষ হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। অথচ প্রত্যাশার ডালি নিয়েই সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন বাংলার ক্রিকেটাররা। কিন্তু সিনিয়র ক্রিকেটারসহ সবাই একসঙ্গে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে এর চেয়েও ছাপিয়ে গেছে দলের তারকা ক্রিকেটারদের উল্টাপাল্টা কথাবার্তায়। অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম প্রত্যেকে মাঠের খেলার চেয়ে অসঙ্গতিপূর্ণ কথাতে ব্যস্ত ছিলেন। বিশেষ করে মুশফিকের ‘সমালোচনাকারীদের আয়নায় মুখ দেখতে বলা’ গোটা দেশে সমালোচনার ঝড় তোলে। বিশ্বকাপ শেষে মিরপুরে সফরকারী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে যথারীতি ব্যর্থ; খোলাসা করে বললে নিদারুণ ব্যর্থ হয়ে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে মাহমুদুল্লাহর দল। এই টি২০ সিরিজে টাইগার টিমে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বাদ পড়েন অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার। তেমনি একজন মুশফিক। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে চারদিকে। এক সাক্ষাতকারে মুশি এ বিষয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন। ৩৪ বছর বয়সী এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার স্বীকার করেছেন, বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারেন নি। পাকিদের বিরুদ্ধে সিরিজে দলে না থাকা প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, ক্রিকেটার হিসেবে উত্থান-পতন থাকবেই। এটা প্রথমবার নয়। তবে অনেক দিন পর বাদ পড়েছি। আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। বিশ্বকাপে নিজের কাছে আমার যে প্রত্যাশা ছিল, সত্যি বলতে সে অনুযায়ী খেলতে পারিনি। এই কারণেই যদি বাদ দিয়ে থাকে, ক্রিকেটার হিসেবে আমি সেটা ভালভাবেই নিচ্ছি। সামনে টেস্ট সিরিজ আছে, সেটার প্রস্তুতি নেয়ার বড় ব্যাপার ছিল আমার জন্য। টি২০ সিরিজ খেললে হয়তো মাত্র দু’দিন সময় পেতাম। অনেক দিন পর বড় দৈর্ঘ্যরে ক্রিকেট খেলব। ভাল প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকছে। মুশি বলেন, যেহেতু হতাশাজনক বিশ্বকাপ ছিল, শুধু আমার নিজের জন্য নয়, দল হিসেবেও। সেদিক থেকে মুখিয়ে ছিলাম এই তিনটি টি২০ তে সুযোগ পেলে চেষ্টা করতাম ভুল শুধরে নেয়ার, ভাল করার। বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে দুটি সিরিজ জিতেছে, সেই মোমেন্টাম যেন আবার ফিরিয়ে আনতে পারি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটি হয়নি। তবে দলের সবার জন্য শুভকামনা। সবারই সামর্থ্য আছে। তাদের খেলা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি। বিশ্বকাপের পারফরমেন্স প্রসঙ্গে মুশফিক বলেন, সত্যি বলতে আমি যতগুলো বিশ্বকাপ খেলেছি এবারই সবচেয়ে ভাল খেলেছি। তবে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটির ধারেকাছেও যেতে পারিনি। যে কোন সময় অনেক ক্রিকেটার এসব কারণে বাদ পড়েন। আমি তাদের মধ্যে একজন। আমার কাছে এটা নেতিবাচক মনে হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যেভাবে চেষ্টা করেছি সবসময়। এখনও সেভাবেই করছি। অনেক সময় পারফরম্যান্স হয়, অনেক সময় হয় না। কিন্তু এটাই শেষ নয়। আমার কাছে মনে হয়, সামনে সুযোগ এলে আমি চেষ্টা করব। আমি কখনোই নিজেকে বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য বা সেরা ব্যাটারদের একজন মনে করি না। সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখি যেন পরের সিরিজটা খেলতে পারি। দলের জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারি। গত ১৫-১৬ বছরে এভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রাখার চেষ্টা করি। অভিজ্ঞ দল হওয়ার পরও বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মুশি বলেন, বিশ্বকাপের আগেও আমরা তিনটি সিরিজ জিতেছি। যদিও উইকেটের কথা বলা হচ্ছে যে এখানে ভিন্ন উইকেট ছিল। কিন্তু সেই উইকেটে তো প্রতিপক্ষও দলও খেলেছে! বিশ্বকাপের আগে তাই প্রস্তুতি যেমন দরকার, সেরকমই ছিল। কিন্তু বিশ্বকাপে নির্দিষ্ট দিনে আমরা ভাল করতে পারিনি। সুনির্দিষ্ট কারও দায় নেই। আমি আরেকটু ভাল খেললে দল বের হয়ে আসতে পারত। স্কটল্যান্ডের কাছে হারটা অনেক বাজে ছিল। তবে এরকম কিন্তু নয় যে আমরা টি২০ তে অনেক ফেবারিট বা ফাইনাল খেলব। ভাল খেলতে পারলে হয়তো সুযোগ থাকত। এই সংস্করণে টানা ভাল খেলতে হলে আমাদের ভাল বা স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে হবে। সেখানে অভ্যস্ত হতে পারলে আরেকটু ভাল হতে পারত আমাদের ফল। শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে আমাদের জেতা উচিত ছিল। কাছে গিয়ে জিততে না পারলে যে কোন ড্রেসিংরুমের একটু খারাপ অবস্থা থাকে। ক্রিকেটারদের সাহস কমে যায়। বিশ্বাসে ঘাটতি থাকে। এদিকে পাকিদের বিরুদ্ধে মুশফিক না থাকায় তার শূন্যতা অনুভব করছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, দেখেন মুশফিক কী বলেছে আমি নিজেও জানি না। আগে দেখি এরপর এ নিয়ে কিছু বলতে পারব। আসলে এটা পুরোটাই টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। আমি নিজে এই মুহূর্তে এটা নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না। তবে এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা অবশ্যই মুশফিককে মিস করতে যাচ্ছি। এরই মাঝে পাকিদের বিরুদ্ধে সিরিজের মাঝখানে গুঞ্জন রটে মুশফিককে শোকজ করেছে বিসিবি। কিন্তু এই ঘটনা সত্য নয়। মুশফিককে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ শেষে বিসিবিতে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান মুশফিকের সঙ্গে কথা বলেন। সেই আলাপ-আলোচনাতেই মুশফিকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে আকরাম খান বলেন, তিনটি বিষয়ে মুশফিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রথমটি হলো, মুশফিককে বলা হয়েছে এটা ছিল (টি২০ তে বিশ্রাম দেয়া নাকি বাদ দেয়া) স্রেফ ভুল বোঝাবুঝি। দ্বিতীয় ব্যাপার হলো, নির্বাকরা কখনও কোন প্রেস কনফারেন্স কিংবা মিডিয়া- কোথাও বলেনি যে, তুমি (মুশফিক) টি২০ খেলতে চাওনি। সব কিছু বাদ দিয়ে মুশফিককে টেস্টে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাকিদের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজে বাদ পড়ার পর মিডিয়ায় মুশফিক যে কথা বলেছেন, সে সব বিষয় নিয়েই মুশফিকের সঙ্গে কথা বলেছেন আকরাম। বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বাংলাদেশ টি২০ দলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। সে হিসেবে মুশফিককেও দল থেকে বাদ দেয়া হয়। যদিও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দাবি করেছেন, মুশফিককে বাদ নয় বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েকটি মিডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতকারে মুশফিক দাবি করেন, তাকে বিশ্রাম নয়, বাদ দেয়া হয়েছে। আর বাদ পড়েছেন ধরে নিয়েই তিনি ফেরার জন্য অনুশীলন করছেন। এছাড়া মুশফিক দাবি করেন, নির্বাচকরা নাকি বলেছেন তিনি নিজেই টি২০ খেলতে চাননি।
×