ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁ শহরের পূর্ব অঞ্চলে নেই একটি পুলিশ ফাঁড়ি ॥ শহরে দেড় লাখ মানুষ অরক্ষিত!

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২৩ নভেম্বর ২০২১

নওগাঁ শহরের পূর্ব অঞ্চলে নেই একটি পুলিশ ফাঁড়ি ॥ শহরে দেড় লাখ মানুষ অরক্ষিত!

নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ ॥ একই শহর, একটি অংশ নওগাঁ আর অপর অংশটি পার-নওগাঁ। নওগাঁ সদর উপজেলাকে ছোট যমুনা নদী এভাবেই দু’ভাগে বিভক্ত করেছে। মাঝে ছোট যমুনা নদীর ওপর লিটন সেতু। এই সেতুই সেতুু বন্ধনে আবদ্ধ করেছে শহরের পূর্ব-পশ্চিম এই দুই অংশকে। নওগাঁ সদর উপজেলার মোট ইউনিয়ন ১২টি আর পৌর সভার ওয়ার্ড ৯ টি। এর মধ্যে সদরের অপর অংশ পার নওগাঁর তিনটি ইউনিয়ন হলো, তিলকপুর, বোয়ালিয়া ও চন্ডিপুর। পৌর সভার ৩ টি ওয়ার্ড ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড পার নওগাঁতে। নওগাঁ সদর উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৬৩ হাজার। এর মধ্যে পার-নওগাঁ অংশের ৩টি ইউনিয়ন, আর পৌরসভার ৩টি ওয়ার্ডে জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫৫হাজার। এটি নওগাঁ সদর উপজেলার একটি অংশের চিত্র। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এই বিশাল এলাকা ও জনগোষ্ঠি রয়ে গেছে অরক্ষিত। এখানে আইন শৃংখলা রক্ষার জন্য আজ পর্যন্ত স্থাপন করা হয়নি কোন পুলিশ ফাঁড়ি অথবা তদন্ত কেন্দ্র। অথচ জেলা সরকারী বেসরকারী অন্তত ২ ডজন গুরুত্বপূর্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পার নওগাঁতেই অবস্থিত। এছাড়াও বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সারাদিন শুধু নয়, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নওগাঁ সান্তাহার সড়ক দিয়ে শত শত যাত্রী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যস্থলে যাওয়ার জন্য এই সড়ক দিয়েই চলাচল করে। সান্তাহার জংশনটিই নওগাঁর রেলযাত্রীদের একমাত্র ষ্টেশন। পার-নওগাঁতেই আছে ঢাকাগামী বাসষ্ট্যান্ড। এই ষ্ট্যন্ড থেকেই দিন-রাত ছেড়ে যায় প্রায় দেড় শতাধিক ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী কোচ। আবার সমসংখ্যক কোচ ঢাকা থেকে ফিরে আসে এই ষ্ট্য্যান্ডে। এখানেই আছে বগুড়াগামী যাত্রীবাহী বাসষ্ট্যান্ড। ও আন্ত:জেলা ট্রাক টার্মিনাল। পার-নওগাঁতে প্রতিদিন বহিরাগত ৭/৮ হাজার মানুষ তাঁদের বিভিন্ন কাজে আসেন। পার-নওগাঁ থেকে নওগাঁ সদর মডেল থানার দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার। এই পারে আসতে হলে ছোট যমুনা নদীর ওপর লিটন সেতু পার হতে হবে। যানজটের কারনে এই সেতু দিয়ে চলাচল করা একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। ফলে দ্রুত পুলিশের সাহায্য বা সেবার সুযোগ নাই এই বিশাল এলাকার মানুষের। একমাত্র ভরশা টহল পুলিশ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত দিনে এই এলাকা গুলোয় অনেক বড় ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। দেশের অন্যতম চাল মোকাম পার-নওগাঁয় অবস্থিত। অনেক আগে ওই মোকামের এক আড়তের তিন কর্মচারীকে হত্যা করে সিন্ধুক ভেঙ্গে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। সেই ঘটনায় পরবর্তিতে কি হয়েছিলো এখনো তা রয়ে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এছাড়াও ধোপা পাড়ায় গর্ভবতী গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যা, পার্কিং অবস্থায় ঢাকাগামী কোচে আগুন দেয়া। এমন অনেক ঘটনা আতংকিত করে তুলেছিল এলাকাবাসীকে। এই এলাকায় রয়েছে বিদুৎ সরবরাহ কেন্দ্র (নেসকো), টেলিফোন এক্্রচেঞ্জ, ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্্র, পৌর পানি শোধনাগার, ডায়াবেটিক সামতি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা বাসষ্ট্যান্ড, জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস, দেশের বৃহত্তম চালের মোকাম (চাল আড়ৎদার পট্টি), বিজিবি ক্যাম্প, তিনতারা মল্লিকা ইন হোটেল, সীমান্ত পাবলিক স্কুল, শহরের একমাত্র তাজ সিনেমা হল, মরছুলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পার-নওগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়, ষ্টেডিয়াম, চার্চ মিশন, দেশের অন্যতম বৃহৎ আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন কেন্দ্র, ডানা পার্ক, আন্ত: জেলা ট্রাক টর্মিনাল, মারকাস মসজিদসহ অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এটি শুধু আংশিক চিত্র তাও পৌর সভার মধ্যে। এছাড়াও উল্লেখিত ৩ টি ইউনিয়নে অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদিকে নির্মানাধীন নওগাঁ ঢাকা ভায়া নাটোর সড়কটির নির্মান কাজ প্রায় শেষ দিকে। এই সড়কটি খুলে দেয়া হলে উত্তরাঞ্চলের অনেক জেলার দূরপাল্লার যানবাহন এই সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। ফলে পার-নওগাঁর গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। নওগাঁর পার নওগাঁয় অবস্থিত নওগাঁ জেলা ধান্য-চাল আড়তদার ব্যবসায়ি সমিতির সভাপতি নিরোদ বরন সাহা চন্দন বলেন, এপারে (পারনওগাঁ) একটি পুলিশ ফাঁড়ি অথবা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের জোরদাবী আমরা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছি। অনেক আগে এখানের একটি আড়তে একই সাথে আড়তের তিন কর্মচারীকে নির্মম ভাবে গলা কেটে হত্যা করে ওই আড়তের সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় দূর্বৃত্তরা। এছাড়াও নওগাঁ জেলার আর্থিক লেনদেনের ৭০ভাগ লেনদেন হয় এই আড়ৎপট্টিতে। নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল বলেন, সদর উপজেলার একটি বৃহৎ জনগোষ্টির বসবাস পার নওগাঁ এলাকায়। বিগত দিনে নিরাপত্তার কারনে গ্রাহক না আসায় পার-নওগাঁয় অবস্থিত ব্যাংকের শাখা গুলো গুটিয়ে নেয়া হয়। অনেক সরকারী ও বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পার-নওগাঁতেই। ইতোমধ্যে বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের অংশ হিসাবে নওগাঁর সঙ্গে ঢাকা ভায়া নাটোর নতুন সড়ক নির্মান কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। ফলে এইসব বিষয়ের জনগুরুত্ব ও নিরাপত্তার বিষয় অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। পার-নওগাঁয় একটি পুলিশ ফাঁড়ি অথাবা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র এখন সময়ের দাবী। আমি আশা করছি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন পুলিশ প্রশাসন। নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আবদুল মান্নান মিয়া বিপিএম বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলার একটি বৃহৎ এলাকা পার-নওগাঁ অঞ্চল। এখানে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র প্রয়োজন আছে। তবে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের কিছু বিধি বিধান আছে। আমরা সে গুলো গুরুত্ব সহকারে বিশ্লেষন করছি।
×