ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক বছরের ব্যবধানে দখলদার বেড়েছে পাঁচ হাজার ছোট-বড় ৭১০ নদ-নদী দখলদারদের কবলে পঞ্চাশ বছরে শতাধিক নদী বিলীন

বেপরোয়া নদীখেকোরা ॥ কোনভাবেই দখল থামানো যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৩ নভেম্বর ২০২১

বেপরোয়া নদীখেকোরা ॥ কোনভাবেই দখল থামানো যাচ্ছে না

বিকাশ দত্ত ॥ মাকড়সার জালের মতো নদীখেকোরা অতি ধীর গতিতে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নানান ছলছুঁতায় এক হাত দুই হাত করে এগিয়ে যায়। এর পর সুযোগ বুঝে খুঁটি গাড়ে, বালি ফেলে। তারপর হঠাৎ করেই স্থাপনা গড়ে তোলে। এভাবেই দিনের পর দিন তারা নদী দখল করছে। কোনভাবেই নদী দখল থামানো যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৩ হাজার ২৪৯ জন দখলদার চিহ্নিত করা হয়েছে। দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবার নতুন করে নদীর জায়গা দখল হয়ে যাচ্ছে। আইনজীবীদের মতে, দেশের নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাশয়ের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরির নির্দেশ আছে। সেখানে তথ্য গোপন ও নদীর প্রস্থ ও সীমানার নক্সা ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে করা সম্ভব, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। উচ্ছেদ করার পর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয় না। যারা দখল করে তাদের সঙ্গে অনেকটা কানামাছি খেলা করা হয়। নদী দখল করাটা ফৌজদারি অপরাধ। যারা দখল করছে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আদালত অথবা ঢাকার চার নদীর দখলের ক্ষেত্রে আদালত অবমাননার মামলা করা যেতে পারে। পাশাপাশি নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রয়েছে আদালতের রায় ও নির্দেশনা। একই সঙ্গে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে এর বর্তমান অবস্থা আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে আর্থিক স্বাধীনতাসহ তিন ধরনের সুপারিশ করেছে আইন কমিশন। অবৈধ দখল উচ্ছেদের জন্য বছরব্যাপী ব্যাপক কার্যক্রম (ক্র্যাশ প্রোগ্রাম) ঘোষনার মধ্যেও দখল থেমে নেই। এরই মধ্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী দখল উদ্ধারসহ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ খবর জানা গেছে। দখলদারদের থাবা থেকে কোনভাবেই মুক্তি মিলছে না ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর ঢাকা বুড়িগঙ্গার। দিন দিন দখল হয়ে নালায় পরিণত হচ্ছে নদীটি। শুধু বুড়িগঙ্গা নয় অবৈধ দখলদারিত্ব আর দূষণে বিপন্ন হতে চলেছে তুরাগ নদী। কালের পরিক্রমায় গতি হারাতে বসেছে তুরাগ। দখল-দূষণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চললেও পরিত্রাণ মেলেনি তুরাগের। ঢাকা বিভাগে এমন ১৫১টি নদী ও ১ হাজার ১১২টি খাল দখলের কবলে পড়েছে। আর এ সমস্ত নদীতে অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৮ হাজার ৮৯০ জন। মাঝে মধ্যে এ সমস্ত নদী থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হলেও আবার তারা নদী দখল করছে। দেখা গেছে, ঢাকা বিভাগে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও নদ-নদী, খাল-বিল উদ্ধারে সর্বোচ্চ হার ৮৮ দশমিক ৩ ভাগ নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আর সর্বনিম্ন ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ জেলায়। নদীখেকোরা শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই তৎপর। দেশে ছোট বড় ৭১০টি নদ-নদী থাকলেও তা দখলদারদের হুমকির মুখে পড়েছে। তাদের লালসার কারণে আজ নদীগুলো নালায় পরিণত হয়েছে। গত ৫০ বছরে প্রায় একশ’ নদী বিলীন হয়ে গেছে। আর মৃত্যুর প্রহর গুনছে শতাধিক নদী। দখলের কারণে দেশের নদ-নদীগুলো তাদের অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ভরাটের কারণে পানি প্রবাহ কমে গেছে। ¯্রােতস্বিনী নদী আজ সরু নালায় পরিণত হয়েছে। ছোট বড় তিন শতাধিক নদী বিলীন হতে বসেছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এএসএম আলী আকবর জনকণ্ঠকে বলেছেন, নদীর বেদখল মুক্ত জায়গা আর দখল হচ্ছে না। উচ্ছেদের পর পুনরায দখল হচ্ছে এমন রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। দিনে দিনে নদী দখল বেড়েছে। তাদের ঝেটিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্যদিকে হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচ আরপিবি) প্রেসিডেন্ট এ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আইনের দুর্বলতা রয়েছে। যারা নদী দখল করে তাদের সঙ্গে কানামাছি খেলা চলে। উচ্ছেদ করতে গেলে অনেক সময় লাগে। দখলের পর তারা দুই-তিন বছর থাকতে পারে। পাশাপাশি উচ্ছেদের পর আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয় না। যারা দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলা করা যেতে পারে। ঢাকার চার নদীর বিষয়ে আদালতের রায় আছে, যারা দখল করবে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করবে। আশার কথা কিছু কিছু ক্ষেত্রে আদালতের রায় ও আদেশ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বুড়িগঙ্গাসহ চার নদী রক্ষা করে ঢাকার ভেনিস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আশা করা হচ্ছে বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ দূর করে লন্ডনের টেমস নদীর মতো করা হবে। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জনকণ্ঠকে বলেন, নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। সারাদেশে একাদশ শতাব্দীতে ছোট বড় প্রায় দেড় হাজার নদী ছিল। বর্তমানে অধিকাংশ নদী নাব্য হারিয়েছে। এ সুযোগে অব্যাহত দখল, অবকাঠামো নির্মাণ ও দূষণে ধ্বংসের মুখে সারাদেশের নদ-নদী-জলাশয়। নদী থেকে সকল দখলদার-মাছ প্রকল্প-সøুইসগেট-বাঁধ-স্বল্প দৈর্ঘ্যরে সেতু অপসারণ করতে হবে অবিলম্বে। জাতিসংঘ পানি প্রবাহ আইন ১৯৯৭ ও হাইকোর্টের সকল রায় মেনে, সকল নদীর সীমানা নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি, নদী রক্ষা না হলে দেশ রক্ষা হবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী রক্ষায় তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় বার বার প্রকাশ করেছেন। নদী রক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছে, প্রয়োজন নির্বাহী ক্ষমতা সম্পন্ন একটি শক্তিশালী নদী কমিশন। তবে আমাদের উচ্চ আদালত নদীকে জীবন্ত সত্ত্বা হিসেবে ঘোষণা করেছেন, অতএব এই সত্ত্বার ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী দখল এবং দূষণমুক্ত করে দৃষ্টিনন্দন ও পর্যটন এলাকায় রূপান্তর করে গড়ে তুলতে হবে। নদী দখল একটি ফৌজদারি অপরাধ, নদী দখল-দূষণের দায়ে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদ- দেয়ার আইন থাকলেও এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়নি। রাজধানী ঘিরে রাখা এসব নদী এক সময়ে প্রধান নৌপথ হলেও এখন দখল ও দূষণে জর্জরিত। কোথাও বালি ফেলে ভরাট করেছে প্রভাবশালী দখলদাররা। কোথাও আবার কলকারখানার রাসায়নিক বর্জ্যে নষ্ট করছে নদীর পানিসহ আশপাশের পরিবেশ। নদীগুলো দখলমুক্ত করতে সরকারের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের লম্বা হাতে। নদী দখলের তালিকা ক্রমান্বয়েই দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হচ্ছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৬৪ জেলায় এই দখলদারের সংখ্যা ৬৩,২৪৯ আর উচ্ছেদ হয়েছে ১৮৭৮২। উচ্ছেদের হার ২৯ দশমিক ৬৯ ভাগ। এর আগের বছরে দখলদারের সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০। এক বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, গোপালগঞ্জে উচ্ছেদ অভিযান হতাশাজনক। শক্তিশালী অবৈধ দখলদার ব্যবসা, শিল্প ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, বিদ্যুত সোলার প্লান্ট, ইটভাঁটি ডকইয়ার্ড স্থাপনের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার চারপাশে জেলাসমূহের নদ-নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, বংশী, পুঙলী, মেঘনা ও পদ্মা নদীর জমি দখল করছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কল্যাণ সমিতি গড়ে তোলা হয়েছে সীমানা প্রাচীর দিয়ে। ঢাকা বিভাগের অবৈধ দখলদারের মধ্যে ঢাকা জেলায় ৬ হাজার ৭৫৮ জন, নারায়ণগঞ্জ ৭৮৫, মুন্সীগঞ্জ ১১৭, গাজীপুর ১০৫, মানিকগঞ্জ ১৩৯৯, শরীয়তপুর ২৬১, কিশোরগঞ্জ ১২৩, নরসিংদী ২৫০, মাদারীপুর ৩৮৩, গোপালগঞ্জ ৫৪০, রাজবাড়ী ৪০৬, ফরিদপুর ১৮৩৪, টাঙ্গাইল জেলায় ১৭৮৮ জন রয়েছে। এ সমস্ত জেলা থেকে ১৪৫২ জন অবৈধ দখলদারকে ও ৫৯৩৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এই উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকারে ঘিরে আছে চারটি নদী বুড়ীগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ। ক্রমেই সরু হয়ে যাচ্ছে ঢাকার চার পাশের সব নদী। চারটি নদীর মধ্যে তুরাগের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বিভিন্ন ধরনের শিল্পকারখানা গড়ে তুলে এটি এমনভাবে দখল করা হয়েছে যে এটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। কমিশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকা- ॥ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন নদী রক্ষায় কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সারাদেশের নদ-নদী, হাওড়, বাঁওড় ও সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন ও নদী সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা করে কমিশনের স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরির জন্য ১০টি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আওতাধীন একটি প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির নাম নদী দূষণ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং অন্যান্য দূষণ থেকে ৪৮টি নদী রক্ষা ও নদীর তথ্য ভা-ার তৈরি ও গবেষণা প্রকল্প (১ম পর্ব)। এই প্রকল্পের অগ্রগতি জুলাই ২০২১ পর্যন্ত ৭১ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া নদ-নদীর অবৈধ দখলদারদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং প্রকাশিত তালিকা অনুসারে সময়াবদ্ধ উচ্ছেদ কার্যক্রম (ক্র্যাশ প্রোগ্রাম) পরিচালনা করা। আদালতের অধিকাংশ রায়ই বাস্তবায়িত হয় না ॥ নদী দখল রোধে উচ্চ আদালতের আদেশ কিছু বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশই উপেক্ষিত। দখল দূষণ রোধে উচ্চ আদালত গত দশ বছরে অর্ধ শতাধিক আদেশ দিয়েছেন। যার কিছু আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকিগুলোর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চলছে। যদিও আইনজীবীদের মতে, আদালতের আদেশের পর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ৭০ ভাগই কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর রায়গুলোর কিছু কাজ বাকি আছে। বাস্তবায়ন হতে কিছু সময় লাগবে। নদী রক্ষায় আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ১৩শ’ নদীর দেশ বলা হলেও বর্তমানে তা নেই। দেশে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৭১০টি। এর মধ্যে ৩শ’ বড় নদী ও ৪শ’ শাখা-উপনদী রয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী হিসাব পরিচিত ৫৭টি নদী। এর মধ্যে ভারত থেকে প্রবাহিত ৫৩টি নদী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৩টি নদী। যারা দখল-দূষণে নদীকে আক্রান্ত করেছে তারা মানবতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে অভিযান চালানো উচিত। নৌকার মাঝিরা নিশ্চিন্তে ঘুমাক ॥ নদী দখলকারীকে সব ধরনের নির্বাচন ও ঋণ গ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। তুরাগ নদী রক্ষাসংক্রান্ত রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ নদী রক্ষায় যুগান্তকারী নির্দেশনা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাসহ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, নদীসমূহ বাঁচা মড়ার ওপর বাংলাদেশের অস্তিত্ব জড়িত। নদীগুলো চলুক নিরবধি। জোয়ার ভাটার নদীগুলো তার ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে থাকুক। মাঝি মাল্লারা মনের সুখে আবার নদীতে প্রাণ খুলে ভাটিয়ালি গান গেয়ে উঠুক। বাংলার দামাল ছেলেরা নদীতে মনের সুখে আবার দাপাদাপি করুক। মৎস্যজীবীদের মুখের হাসি আবার ফিরে আসুক। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দে নৌকার মাঝিরা নিশ্চিন্তে ঘুমাক। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। এসব বিষয় বিবেচনা করে তুরাগ নদকে লিগ্যাল বা জুরিসটিক পারসন হিসেবে ঘোষণা করা হলো। অবৈধ স্থাপনা তৈরি করায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে নদী। নদী রক্ষায় আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে ১৩শ’ নদীর দেশ বলা হলেও বর্তমানে তা নেই। দেশে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৭১০টি। এর মধ্যে ৩শ’ বড় নদী ও ৪শ’ শাখা-উপনদী রয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী হিসাব পরিচিত ৫৭টি নদী। এর মধ্যে ভারত থেকে প্রবাহিত ৫৩টি নদী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবাহিত ১টি ও মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত ৩টি। যারা দখল-দূষণে নদীকে আক্রান্ত করেছে তারা মানবতার শক্র। এদের বিরুদ্ধে আপোসহীনভাবে অভিযান চালানো উচিত। কোন নদীর কত দখলদার ॥ হাইকোর্টের রায়ে শুধু যে তুরাগ নদী আক্রান্ত তা নয়, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৪৫০টি নদী অবৈধ দখলদারদের দ্বারা আক্রান্ত। অন্যদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি নদী দখলদার খুলনা বিভাগে। সেখানে দখলদারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৪৫। এই বিভাগে ২০১৯ সালে উচ্ছেদ করা হয়েছে চার হাজার ৮৯০টি অবৈধ দখলদারকে। নদী দখলদারের সংখ্যা সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে দুই হাজার ৪৪। উচ্ছেদ করা হয়েছে ৫৭৬ জনের অবৈধ স্থাপনা। ঢাকা বিভাগে নদী দখলদারের সংখ্যা আট হাজার ৮৯০; উচ্ছেদ করা হয় এক হাজার ৪৫২ জনের পাঁচ হাজার ৯৩৫টি স্থাপনা। ঢাকা জেলায় বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, ইছামতী, বালু, বংশী, গাজীখালী, কালীগঙ্গাসহ মোট ১১টি নদ-নদী ও ২০১টি খালের উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
×