ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নের কৌশল প্রণয়নের দাবি

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ২২ নভেম্বর ২০২১

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নের কৌশল প্রণয়নের দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সদ্য সমাপ্ত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের ফলাফলকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে বাংলাদেশের জন্য হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছেন নাগরিক সমাজ সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ। তাঁদের বলেন, এই সম্মেলনে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের বিষয়ে, বিশেষ করে অভিযোজন এবং ক্ষয়-ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে কোনও উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেই। যে কারনে জলবায়ু পবিপদাপন্ন দেশগুলোর অভিযোজন কার্যক্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতি এবং ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় নিজস্ব অর্থায়নের উপর জোর দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক কৌশল প্রণয়নের জণ্য সরকারের কাছে দাবি জানায় নাগরকি সমজি সংগঠনের কয়েকটি নেটওয়ার্ক। “কপ ২৬ এর ফলাফল এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রেক্ষিত” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সেমিনার থেকে এই দাবি তুলে ধরেন। ভার্চুয়াল সেমিনারের আয়োজন করে করে কোস্ট ফাউন্ডেশন, এওএসইডি, বিপনেট সিসিবিডি, সিপিআরডি, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ, কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ক্লিন) এবং ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ, বাংলাদেশ (ইক্যুইটিবিডি)। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ইক্যুইটিবিডির মোস্তফা কামাল আকন্দ। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের জলবায়ু নেগোশিয়েমন টীমের প্রধান অধ্যাপক ড. আইননু নিশাত, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম. মোস্তফা সরোয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরীফ জামিল, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জলবায়ু আলোচক কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিপনেট সিসিবিড’র মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, সিডিপির মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন মাসুম, এওএসইডি-খুলনার জনাব শামীম আরেফিন, এনজিও ব্যক্তিত্ব এমরানুল হক এবং দৈনিক জনকণ্ঠের কাওসার রহমান। ইক্যুইটিবিডি’র সৈয়দ আমিনুল হক সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সৈয়দ আমিনুল হক বলেন যে, কপ ২৬-এর কাছে বিশ্বব্যাপী গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো, অভিযোজন কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য এবং ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অধিকতর অর্থায়নের জোর প্রত্যাশা ছিলো। আশা করা হয়েছিলো যে, এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত অর্থায়নের জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দ সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কিছু উন্নত দেশ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্রদের বিরোধিতার কারণে এটি ঘটেনি। তিনি ২০৫০ সালের মধ্যে তাদের তথাকথিত ‘নেট জিরো ইমিশন’ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কিত যুক্তরাজ্যের অবস্থানের নিন্দা করেন, কারণ এটি প্রকৃতপক্ষে বড় নির্গমনকারীদের ‘শূন্য নির্গমন’ লক্ষ্যেরে পরিবর্তে তাদের গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজস্ব অর্থায়নের কৌশল সহ “শূন্য নির্গমন” লক্ষ্যমাত্রার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। ব্যারিস্টা শামীম হায়দার পাটোয়ারি এমপি বলেন, কপ ২৬ এর ফলাফল আসলেই হতাশাজনক, কারণ এর কারণ সিদ্ধান্তগুলি সামগ্রিকভাবে প্যারিস চুক্তির ঈইউজ (সাধারণ কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব¡) নীতিকে ভেঙে দিয়েছে, বাস্তুচ্যুতিসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষয়-ক্ষতি বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং ঝুঁিকপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার বিষয়গুলো বিবেচনার বদলে তারা নানা ধরণের ব্যবসায়িক ধাঁচের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সোচ্চার ও জোরালো ভূমিকার প্রশংসা করেন, পাশাপাশি সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনায় সরকারি প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু সম্মেলনে আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে সরকারকে আরও অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে হবে। ড. মোস্তফা সরোয়ার বলেন, প্রস্তাবিত নেট জিরো নির্গমন" লক্স্যমাত্রা একটি মিথ্যা এবং চাতুর্যপুর্ন সমাধান প্রস্তাব এবং যুক্তরাজ্য দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে এই লক্ষ্য গ্রহণের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা প্রকৃতপক্ষে একটি কার্বন ঔপনিবেশিকতার দিকে চলে যাচ্ছে। কারন তারা অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর দুর্দশা নিয়ে বাণিজ্য করার অপচেষ্টা। দরিদ্র এবং দুর্বল দেশগুলি কার্বন নির্গমন কম করে এবং ভবিষ্যতে বড় দূষণকারী দেশগুলো তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তথাকথিত কার্বন ক্যাপচার কার্যক্রম গ্রহণ করতে বাধ্য করবে। কামরুল ইসলাম চৌধুরী উন্নত দেশগুলির ‘নিউ কালেকটিভ এন্ড কোয়ািন্টফাইড গোল অন ফাইনান্স (এনসিকিউজি)’-এর সমালোচনা করেন। তিনি বলে, প্রক্রিয়টি চূড়ান্ত করার জন্য এমভিসিগুলির কোনও অংশগ্রহণ নেই। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী বাধ্যতামূলক অর্থায়নের সুবিধা থেকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বঞ্চিত হতে পারে এবং এটি জলবায়ু অর্থায়ন কার্যক্রমে বেসরকারি খাতকে সুবিধা দেওয়ার একটি কৌশলও বলে আমরা মনে করি। শরীফ জামিল বলেন, কয়লা ব্যবহার ও বিকল্প জ্বালানী বিষয়ে সরকারের অবস্থানের মধ্যে অসামঞ্জস্য রয়েছে। তিনি দেশের নিজস্ব সমস্যাগুলো আগে উপলব্ধি করার পরামর্শ দেন এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর কার্বন হ্রাস কৌশল এবং বিকল্প শক্তির কৌশল নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। জনাব শামীম বলেন, কপ ২৬-এ, উন্নত দেশগুলি ২০২৩ সালের মধ্যে ১০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসছে, এই বিষয়ে তারা তাদের দায়িত্ব অস্বীকার করেছে, যা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অভিযোজনের জন্য থোক বরাদ্দেরও সমালোচনা করেছেন। এছাড়াও ভবিষ্যতে নাগরিক সমাজ প্রতিনিধি এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞদেরকে আলোচনা প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেন।
×