ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহীন চৌধুরী ডলি

বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২২ নভেম্বর ২০২১

বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি

যে কোন সম্পর্কের শুরুটা শুভ হওয়া প্রয়োজন। আর সেটা যদি হয় শুভ পরিণয় তবে সেই সম্পর্ক শুরুর আগে যথেষ্ট মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় অভিভাবকরা বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি অনেকক্ষেত্রে চাপিয়ে দেন? বরপক্ষ কনে দেখতে এসেছে, দুই পক্ষের অভিভাবকরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন- তখনই বিয়ে পড়ানো হবে। বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজীও ডাকা হয়। কনের অবস্থা দাঁড়ায়- ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে লেগেছে। কেউ তার শারীরিক- মানসিক ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয় না, অথচ বিয়ের মতো একটা সম্পর্ক শুরু করার পূর্বে প্রয়োজন নিজের মনকে বুঝা এবং সঙ্গী ও তার পরিবার সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল হওয়া। বিয়ে জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যার উপরে নির্ভর করে দু’জন মানুষের ভবিষ্যত জীবনের সুখ ও শান্তি, এমনকি তাদের অনাগত সন্তানের জীবনের চাবিকাঠিও কিন্তু সুপ্ত থাকে বৈবাহিক সম্পর্কের ওপরে। অবশ্যই বিয়ের মতো একটি পবিত্র বন্ধন কেবল দুটি মানুষের মিলন নয়, যারা স্বামী -স্ত্রী হতে চলেছেন। বিয়ে দুটি পরিবার এবং দুটি সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন নির্মাণ করে। এই সুন্দর সম্ভাবনাময় জীবনগুলো আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে যদি নবদম্পতি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন? নতুন জীবন শুরু করার পূর্বে নিজের মন থেকে সম্মতি থাকলে এবং মন থেকে প্রস্তুত থাকলে তবেই বিয়ের কথা ভাবুন। অনেক সময় বাড়ি থেকে দেখেশুনে জোর করে বিয়ে দেওয়ার ফলাফল ভাল হয় না? মনের অমতে বিয়ে করতে হলে পরবর্তী জীবনে দুর্ভাগ্য নেমে আসে। ভেবেচিন্তে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলে বদলে যেতে পারে ভবিষ্যত জীবন। তাই অন্যের কথায় নয় বরং নিজের ওপর ভরসা রাখতে হবে। বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি হিসেবে ইতিবাচক থাকুন ও মন উন্মুক্ত রাখুন? পারিবারিকভাবে আয়োজিত কিংবা অভিভাবকদের সম্মতিতে প্রেমের বিয়ে, যাই হোক- বিয়ের পর বাস্তব জীবনের মুখোমুখি হয়ে অনেকের স্বপ্ন ভেঙে যায়। বিয়ের আগে রোমান্টিকতার পাশাপাশি বাস্তবিক চিন্তাগুলো করতে হবে। বর-কনে উভয়কেই যার যার পরিবারের কাছের অভিজ্ঞ কেউ ইতিবাচকভাবে জীবনের বাস্তবতা বুঝিয়ে বলতে পারেন। নিজের স্বভাবের কোন নেতিবাচক দিক থাকলে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। প্রচলিত প্রবাদ আছে, সব ভাল কিছুর সঙ্গে অল্প কিছু মন্দও থাকে। ভালটুকু অর্জনের পাশাপাশি মন্দ টুকু গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে। বিয়ে জীবনের লম্বা অধ্যায় তাই নিজের সবদিক নিয়ে বিয়ের আগে হবু স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করলে বোঝাপড়ার শুরুটা ভাল হবে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকা, কাক্সিক্ষত বা অনাকাক্সিক্ষত সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন? নতুন একটি পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করুন? তাহলে অনেক সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব হবে। সব পরিবারে কিছু আলাদা নিয়ম-কানুন, আচার-ব্যবহার থাকে। আগে থেকে সেসব জেনে নিতে পারলে যেকোন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। শুধু কনে নয়, বরও নতুন পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য তৈরি থাকুন। দু’জনকেই সঙ্গীর প্রতি সহনশীল হতে হবে। বিয়েতে একটি ছেলের নিবাসের কোন পরিবর্তন সাধারণত হয় না। আমাদের সামাজিক রীতি অনুযায়ী একটি মেয়েকে সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। নিজের চেনা জগৎ, নিজের পরিবার ছেড়ে ভিন্ন একটি পরিবেশে, ভিন্ন পরিবারে আসতে হয়? মেয়েটি দুর দুর বুকে হাজার স্বপ্ন চোখে এঁকে শ্বশুরবাড়িতে যায়। এক্ষেত্রে ছেলেটির পরিবারকে আন্তরিক হয়ে মেয়েটিকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে, ঠিক নিজেদের পরিবারের কন্যা কিংবা বোনের মতো। মেয়েটির মনের ভয়কে জয় করতে স্বামীর এবং স্বামীর বাড়ির লোকজনের সুন্দর ভূমিকা পালন করা জরুরী। শেষ কথা, বিয়ে মানেই আয়োজনের নানা ধরনের প্রস্তুতি। খুঁটিনাটি সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে না নিয়ে কিছু কাজ দায়িত্বশীল কয়েকজনকে ভাগ করে দিতে পারেন বর। বর-কনে নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। বিয়ের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন? সুখী হোক আপনার দাম্পত্য জীবন।
×