ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে সরকারী দফতরের কার্যক্রম চলে ভাড়া বাসায়

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০২১

বরিশালে সরকারী দফতরের কার্যক্রম চলে ভাড়া বাসায়

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ দেশের আটটি প্রশাসনিক বিভাগের একটি বরিশাল বিভাগ। ১৯৯৩ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টি জেলা নিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। বিভাগ হওয়ার কারণে বরিশাল নগরীতে সরকারী অধিদফতর, পরিদফতর ও বিভিন্ন সংস্থার বিভাগীয় কার্যালয় চালু হয়েছে। বেড়েছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। তবে, বিভাগ প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পরও বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সরকারী আবাসনের ব্যবস্থা হয়নি। এমনকি, নিজস্ব স্থাপনা না থাকায় ভাড়া বাসায় চলছে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দাফতরিক কার্যক্রম। ফলে নিজস্ব স্থাপনা ও আবাসন সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিশেষ করে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের এ সমস্যা প্রকট। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল নগরীতে ভাড়া বাসায় চলছে মেট্রোপলিটন পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, পরিসংখ্যান অফিস, বিভাগীয় তথ্য অফিস, মহিলাবিষয়ক অধিদফতরসহ প্রায় ২০টি সরকারী বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম। সূত্রমতে, নগরীতে শতাধিক অধিদফতর, পরিদফতর ও বিভিন্ন সংস্থার জেলা কার্যালয় রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় কার্যালয় রয়েছে অর্ধশতাধিক। বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের এ সব সরকারী দফতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য তিন শতাধিক সরকারী বাসা বা ফ্ল্যাট থাকলেও যার ২৫০টি বসবাসের অনুপযোগী। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নগরীতে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষ করে মাঠ প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যদের আবাসন সঙ্কট দীর্ঘদিনের। বিভাগ প্রতিষ্ঠার ২৮ বছর পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই বললেই চলে। উল্টো বিভাগ হওয়ার কারণে সরকারী-বেসরকারী অনেক বিভাগীয় কার্যালয় চালু হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় আবাসনের সুযোগ খুবই সীমিত। নগরীতে কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। বাসা পাওয়ার যোগ্য সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় আট হাজার। কিন্তু, সরকারী বাসা পেয়েছেন মাত্র শতাধিক কর্মকর্তা। বিভাগীয় শহর হওয়ার কারণে একটি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বেসরকারী উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। শহরে বেড়েছে লোকসংখ্যা। বরিশাল ছাড়া বিভাগের অন্য জেলাগুলোতে তেমন একটা ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকার কারণে অনেক অভিভাবক এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছেন। এ সব কারণে বাড়ি ভাড়াও আগের চেয়ে এখন প্রায় দ্বিগুণ। ফলে সরকারী কর্মকর্তারা বেতনের সঙ্গে যে টাকা বাড়ি ভাড়া হিসেবে পাচ্ছেন, তা দিয়ে তাদের সামাজিক মর্যাদা অনুযায়ী বাসা পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে বসবাস ॥ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ও বিভাগীয় শহরের বাহিরের অবস্থা আরও করুণ। বৃহত্তর বরিশাল বিভাগের কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য পাঁচটি আবাসিক ভবনের সবক’টি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ এ সব ভবনে বসবাস করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিবার। আবাসন ভবন ভগ্নদশা হওয়ায় প্রথম শ্রেণীর একাধিক কর্মকর্তারা পরিবার নিয়ে আবাসিক এলাকার বাহিরে ভাড়া বাসায় থাকেন। বিভিন্ন স্থান থেকে বদলি হওয়া সত্ত্বেও আবাসন ভবন বসবাসের অযোগ্য হওয়ার কথা শুনে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপজেলা পর্যায়ে আসতে চান না। আবার নতুন করে যারা আসছেন, তাদের অনেকেই একই সমস্যার কথা চিন্তা করে যোগদান না করে বদলির তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরেও পরিবার-পরিজন নিয়ে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বসবাস করছেন এ সব ভবনে। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালে উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য নদী তীরবর্তী এ উপজেলায় পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, করতোয়া ও তিস্তা নামে পাঁচটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটি ভবন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের জন্য। পুরুষ ও নারী কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা দুটি প্রমোট সেন্টার। বাকি দুটি ভবন কর্মচারীদের থাকার জন্য ডরমিটরি ভবন। এছাড়াও নির্বাহী কর্মকর্তার পৃথক একটি বাসভবন রয়েছে।
×