ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাসযোগ্য থাকল না বগুড়া নগরী

প্রকাশিত: ২০:৩৫, ২০ নভেম্বর ২০২১

বাসযোগ্য থাকল না বগুড়া নগরী

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ার নগরীর প্রধান চওড়া রাস্তা কবি নজরুল ইসলাম সড়কের একাংশ দখলে নেয় মোটরসাইকেল। কাছাকাছি স্থানে মোটর যানবাহনের পার্কিং স্পট (নবাববাড়ি রোডের ধারে) আছে। তারপরও মোটরসাইকেল আরোহীগণ প্রধান সড়ক সঙ্কুচিত করে গাড়ি রাখেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রিক্সা মোটরগাড়ি পথচারী চলাচলে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বগুড়া নগরীর এই চিত্রের সঙ্গে যোগ হয়ে আছে দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কখনও ড্রেনের বর্জ্য তুলে রাস্তার ওপর রাখা, বর্জ্য অপসারণ না করা, সড়ক দখল করে দোকান ও নির্মাণ সামগ্রী রাখা, অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা, প্রধান সড়কগুলোতে যান্ত্রিক যানবাহনের স্ট্যান্ড, যান চলাচলের ফুটপাত দখলসহ নানা সমস্যায় বগুড়া নগরীর মানুষের ভোগান্তি কমছে না। কেউ পায়ে হেঁটে পথ চলতে গেলে পদে পদে হোঁচট খেতে হয়। রাস্তা পারাপার দুরূহ হয়ে পড়ে। কখনও দুর্ঘটনা ঘটে। ফিডার সড়কগুলোর আরও দূরাবস্থা। অনেক স্থানে সড়ক বাতি নেই। বলাবলি হয় একদার সুন্দর বগুড়া নগরী বহুতল নগরীতে পরিণত। তবুও বুঝি আর বাসযোগ্য থাকল না। দেশের প্রাচীন (প্রায় পৌনে দু শ’ বছরের) নগরী বগুড়া। সেই নগরী ছিল ছোট্ট। ছিল সাজানো গোছানো। পৌরসভার আয়তন ছিল ১৪ দশমিক ৭৬ বর্গকিলোমিটার। ২০০৪ সালে রাতারাতি কলমের এক খোঁচায় ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটারে সম্প্রসারিত হয়। ১২টি ওয়ার্ড পরিণত হয় ২১ ওয়ার্ডে। দুই ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভার সঙ্গে একীভূত হয়। কয়েকটি এলাকার ইটভাঁটি পৌর এলাকার মধ্যে পড়ে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়ে বর্তমানে প্রায় সাত লাখ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে বাস ৭ হাজার ৯শ’ জনের। নগরবিদগণের মতে জনসংখ্যা অন্তত দশ লাখ। পৌরপিতা তাই মনে করেন। বগুড়া নগরীর (পৌর এলাকার) সমস্যাগুলো দূরীভূত করতে প্রায় তিন বছর আগে ১৪টি সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার বিভাগ। পৌরসভাও সঙ্গে থাকে। সমাধানের চেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে। কোন কাজ না হওয়ায় নিত্যদিন বেড়ে যাওয়া সমস্যা আরেকটি সমস্যারও সৃষ্টি করছে। ফলে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর সঙ্গে নতুন সমস্যা যোগ হয়ে আরও বাড়ছে। শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিনটি রেলগেট বন্ধ হলে চরম ভোগান্তি। বিকল্প কোন সড়ক নেই। গোহাইল রোডের ধারে ঐতিহ্যবাহী এ্যাডওয়ার্ড পার্কের তিনটি গেটের আশপাশে রাস্তার ওপর যত্রতত্র বসেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সার স্ট্যান্ড। যা পৌরসভা অনুমোদিত নয়। সেখানে পৌরসভা যে মার্কেট করে দিয়েছে সেই দোকানঘরের সামনে জনচলাচলের প্যাসেজেও নানা ধরনের পণ্যের স্তুপ সাজিয়ে দখল করা হয়েছে। শেরপুর রোডের ধারে জিলা স্কুলের একাংশের প্রাচীরের সামনে শেরপুরগামী অলিখিত মিনিবাস স্ট্যান্ড, তার অল্প দূরে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক (অটো) স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। যার কোন অনুমতি নেই। সাতমাথা টেম্পল রোড সংলগ্ন কৃষ্ণচূড়া চত্বর ও নবাববাড়ি সড়কের ধারে জিলা স্কুলের সামনে ভ্রাম্যমাণ ফাস্ট ফুড, চটপটি ফুচকা পিয়াজিসহ মুখরোচক নানা খাবার গ্যাসের চুলা ও স্টোভে ভেজে বিক্রি হয়। রাস্তা দখল করে কাস্টমারদের বসার জন্য চেয়ার ও বেঞ্চ পাতা হয়। রেল স্টেশনের কাছে হকার্স মার্কেট ও প্রেসক্লাবের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ইজিবাইক, ইঞ্জিন রিক্সা স্ট্যান্ড সারাক্ষণ জ্যাম সৃষ্টি করছে। কবি নজরুল ইসলাম সড়কের দুই ধারে সন্ধ্যার পর মোটরসাইকেলের অঘোষিত পার্কিং স্পটে পরিণত হয়েছে। রেলগেট বন্ধ হলে যান চলাচল ডেডলক হয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস ও এ্যাম্বুলেন্স আটকে থাকে। কাঁঠালতলা থেকে ফতেহ আলী ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তার ওপর বসে ভাসমান দোকানপাট। করতোয়া সেতুর অপর প্রান্তে চেলোপাড়া এলাকায় গাবতলি ও চন্দনবাইশা রোডের দুই ধারে গড়ে উঠেছে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা, ইজিবাইকের স্ট্যান্ড। এভাবে অলিখিত নিয়মের যানজটে নাকাল নগরবাসী। ড্রেনেজ ব্যবস্থা এতটাই বেহাল যে সামান্য বৃষ্টিতেই নিচু অঞ্চল জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়। প্রধান সড়ক জলমগ্ন হয়ে পড়ে। ড্রেনের বর্জ্য সরাসরি রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ না করায় পথের ধারে স্তুপ হয়ে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ইয়াকুবিয়ার মোড় থেকে কালিবাড়ি পর্যন্ত শহীদ আব্দুল জব্বার সড়কের দুই ধারে শোরুম, কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, শপিংমল এক সময় নগরীর সৌন্দর্য ছিল। ক’বছর ধরে একের পর এক কোচিং সেন্টার এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে শিফট ভিত্তিক কোচিংয়ে বিকেল থেকে রাত অবধি রাস্তা জ্যাম হয়ে থাকে। জলেশ্বরিতলার এই এলাকাটির পরিচিতি ছিল অভিজাত এলাকা। তা আর রইল না। এদিকে বগুড়ায় বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে কখনও নক্সা পাল্টিয়ে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। এত বড় নগরীতে কার পার্কিংয়ের নির্ধারিত কোন স্থান নেই। কেন্দ্রস্থল সাতমাথায় জিলা স্কুলের ধারে স্বল্প পরিসরের কার পার্কিং আছে। যানবাহন বেড়ে যাওয়ায় এই পার্কিং স্পট কুলাচ্ছে না। বগুড়া নগরীর সম্প্রসারিত পৌর এলাকাকে দেখে মনে হবে না শহর। কাঁচা সড়কের ধারে পাকা ভবনে মানুষের বাস। পৌর সুবিধার বালাই নেই। ভেতরে ঢুকলে মনে হবে গ্রাম। এলাকার লোক ধান শুকাচ্ছে। অঙ্গিনায় খড়ের পালা। আশপাশে আবাদি ভূমি। কাঁচা সড়কের ওপর দিয়ে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা চলছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পৌর কর্র্তৃপক্ষ সমস্যা খুঁজে বের করার পর সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়। তারপর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়।
×