ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

স্মার্ট সিটি গড়তে বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তির সবকিছুর সমাবেশ ঘটানো হবে পূর্বাচলে

গিগা সিটি হবে পূর্বাচল

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২০ নভেম্বর ২০২১

গিগা সিটি হবে পূর্বাচল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পূর্বাচল নতুন শহরকে পুরোপুরি প্রযুক্তিনির্ভর ‘গিগা সিটি’ হিসেবে তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য শহরটির সব ধরনের রূপান্তরে তথ্য-প্রযুক্তি যুক্ত করছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি (বিটিসিএল)। প্রযুক্তি বিশ্বের সব ধরনের আইটি সুবিধা পাবে পূর্বাচলের বাসিন্দারা। বিটিসিএল সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের মধ্যেই পূর্বাচল গিগা সিটির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শষ করতে চায় সরকার। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গিগা সিটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল-এর উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) এ কে এম হাবিব বলেন, ‘স্মার্ট সিটি গড়তে বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তির সবকিছুর সমাবেশ ঘটানো হবে পূর্বাচলে। প্রতিটি বাড়িতে থাকবে হাইস্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ ও টেলিফোন সংযোগ।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে নগরপিতারা আধুনিক সিটি গড়তে প্রযুক্তিগত অবকাঠামোকে গুরুত্ব দেন। আমরাও পূর্বাচলে সেই ধরনের প্রযুক্তির সমাবেশ ঘটাব। এই গিগা সিটির বাসিন্দারা কল্পনার চেয়েও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা পাবেন।’ হাবিব জানান, পূর্বাচল গিগা সিটিতে ঘরে ঘরে যে কেবল সংযাগ দেয়া হবে তাতে ট্রিপল-প্লে (ভয়েস, ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ) সুবিধাও থাকবে। বিটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ৫ নবেম্বর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে গিগা সিটি বাস্তবায়ন কমিটি সম্ভাবনা প্রতিবেদন তৈরি করে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, গিগা সিটির আয়তন হবে ৬ হাজার ১৫০ একর। একে ছোট-বড় ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হবে। বিভিন্ন আকারের আবাসিক প্লটের সংখ্যা হবে ২৬ হাজার। এসব প্লটে যেসব হাইরাইজ ভবন হবে সেগুলোতে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট হবে। এতে ১৫ লাখ লোক বাস করবেন। এই সিটির পতিটা ভবনে থাকবে ফাইবার অপটিক সংযোগ। ভবনের বাসিন্দারা ব্যবহার করতে পারবেন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। বর্তমানে কোন ভবনে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পেতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা এসে সংযোগ দিয়ে যায়। কিন্তু গিগা সিটির প্রতিটা ভবনে বিদ্যুত, পানি ও ডিস সংযোগের মতো থাকবে ইন্টারনেট সংযোগও। চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করা যাবে। বিটিসিএল-এর তথ্য মতে, গিগা সিটিতে থাকবে ১ লাখ পিএসটিএন (ল্যান্ডফোন) সংযোগ। থাকবে সর্বাধুনিক জিপন (গিগাবিট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক)। এই সিটিতে ইনস্টল করা হবে ১০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ। যাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে ভয়েস, ইন্টারনেট, এফটিটিএক্স ইত্যাদি। এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে পপ একসেস থাকবে। অন্যদিকে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার জন্য গিগা সিটিতে থাকবে ২ কোটি রাউটার ও হাই-এ্যান্ড সুইচ। পূর্বাচল গিগা সিটির জন্য দুটি কেবল স্থাপন করছে বিটিসিএল। এর একটি যাবে রাজধানীর মগবাজার এক্সচেঞ্জ থেকে কুড়িল বিশ্বরোড, আরেকটি যাবে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে পূর্বাচল প্রকল্প এলাকায়। বিটিসিএল কেবল বসাবে ৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩০ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার হবে গিগা সিটির জন্য। এ ছাড়া প্রটেকশন ও রেস্টোরেশনের জন্য কেবল নেয়া হবে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে। ফলে সব মিলিয়ে বিটিসিএলকে কেবল বসাতে হবে ৭১ কিলোমিটার। রাজউকের প্রকৌশল দফতর জানিয়েছে, রাজধানী শহরের পাশে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ স্বয়ংসম্পূর্ণ নতুন শহর করাই ছিল পূর্বাচল প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ২৭৭ দশমিক ৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ অংশে রয়েছে ৪ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৩৬ একর এবং গাজীপুর অংশে ১৫০০ একর জমি, যা ৩০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। বাকি ১৫০ একর জমি ঢাকা জেলার খিলক্ষেত থানায় কুড়িল ফ্লাইওভার এবং লিংক রোড নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে বিভিন্ন আকারের মোট ২৭ হাজার ১৭১টি প্লট এবং ৬২ হাজার এ্যাপার্টমেন্টের ব্যবস্থা হবে। শুধু তা-ই নয়, এই প্রকল্পকে ঘিরে রাজধানীর কুড়িল ফ্লাইওভার পয়েন্ট থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত মোট সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৪ হাজার কোটি টাকা। এটাকে বলা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় এক্সপ্রেসওয়ে। পশ্চিমের প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে আগের ইস্টার্ন বাইপাসকে সংযুক্তকারী এই সড়ককে কেবল গতিময় স্থাপনাই নয়, বলা হচ্ছে অন্যতম পর্যটন স্থাপনাও। আট লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে থাকছে ৬ লেনের সার্ভিসওয়ে ও দুই পাশে ১০০ ফুটের পাড় বাঁধানো খাল। অত্যাধুনিক এই এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে না কোন ধরনের স্টপওভার পয়েন্ট, সিগন্যালিং সাইন কিংবা অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা। ছোট, মাঝারি ও বড় সব ধরনের যানবাহন চলবে আপন গতিতে। কারোর সঙ্গে কোন সংঘর্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে একটি গাড়ি ৬-৭ মিনিটে বাধাহীনভাবে পার হওয়া যাবে সাড়ে ১২ কিলোমিটার পথ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করব। আগে আমরা রাস্তার কাজটা শেষ করতে চাই। যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে।’
×