ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যন্ত্রের ভাষার প্রেমে

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৪ নভেম্বর ২০২১

যন্ত্রের ভাষার প্রেমে

ছোট বেলায় একটা বাক্সে চৌম্বক, ছোট ছোট মোটর, বিয়েবাড়ি থেকে চুরি করা ঝাঁরবাতি দিয়েই দিন কাটত। তখন মনে করতাম একটা কিছুতে পাওয়ার অন অফ করাই খেলা। পাওয়ার দেয়া-না দেয়াকে বুলিয়ানে ১ আর ০ বলে। প্রোগ্রামিং শিখতে গিয়ে জানতে পারি ১ আর ০ দিয়েই সব কিছু করা যায়। এটা শুধু অন অফ না, একটা কম্পিউটার ১ আর ০ সাহায্যে আমাদের থেকে ইনপুট নেয় এবং প্রসেসিং করে আমাদের আউটপুট দেয়। এসব মজার জিনিসগুলো থেকেই প্রযুক্তির প্রেমে পড়া। কথাগুলো বলছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়েল নাথ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ২ বছরে তৈরি করেছেন দুটি মানব রোবট। ‘কোয়ান্টা রোবটিক্স’টিমের হয়ে রোবট ‘সিনা’ ও ‘ব্লুবেরি’ তৈরিতে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। কথা হয় চট্টগ্রামের এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। সেখানে উঠে আসে প্রযুক্তির প্রতি তার আগ্রহের কথা। জুয়েলের প্রযুক্তি প্রেম আজকের নয়। ছোটবেলা থেকেই আবিষ্কারের স্বপ্ন বুনতেন। তখন থেকেই প্রযুক্তির প্রতি তার একটা ভালবাসা কাজ করতো। বিজ্ঞানকে আরও গভীরভাবে জানা, নতুন কিছু দেখলে সেটা কিভাবে কাজ করে তা জানার আগ্রহ, এগুলোই বিজ্ঞানপ্রেমী করে তুলে জুয়েলকে। স্কুল-কলেজে পড়ার সময় থেকে স্বপ্ন শুরু জুয়েলের। কলেজের আইসিটি বইয়ে প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচয়। তবে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পান বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। ডিপার্টমেন্টের সিনিয়রদের হাত ধরে শুরু হয় প্রোগ্রামিং নিয়ে পথ চলা। জুয়েল বলেন, আমার সামনে রোবটিক্স, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটিসহ অনেক রাস্তা। মানুষ ইংরেজী, জার্মান, স্প্যানিস ভাষা শেখে। আর আমি শিখছি মেশিনের ভাষা (প্রোগ্রামিং)। সেই মেশিনের ভাষাটা শেখার সময় মেশিনের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা থেকেই রোবট তৈরির চিন্তা মাথা আসে। দুটি রোবট তৈরিতে অবদান রাখতে পেরে উচ্ছ্বসিত জুয়েল। তিনি বলেন, সাধারণত আমরা কোড লিখার পর কোডটাকে কম্পাইল এবং রান করে কম্পিউটার স্ক্রিনে আউটপুট দেখি। কিন্তু কোডের কাজটা যখন বাস্তবে একটা মেশিনের ভেতর রান করে আউটপুটটা দেখি, তখন সেটা আসলেই অনেক আনন্দের আর অনেক ভাল লাগার বিষয়। এটা দেখে শুধু আমি নই বরং অন্য প্রোগ্রামাররাও নিজেদের প্রোগ্রামিং শেখার গুরুত্বটা ভালভাবে বুঝতে পারে। এটা আমাকে প্রোগ্রামিং ও প্রযুক্তির প্রতি জানার ইচ্ছা আর বাড়িয়ে দেয়। বাবা-মা সব সময় সাহস জুগিয়ে যান বলেই সামনে এগিয়ে যেতে পারছেন বলে মনে করেন জুয়েল। তবে তার মেন্টর হিসাবে কাজ করেছেন রোবট তৈরির প্রধান উদ্যোক্তা সঞ্জিত ম-ল। বাবা মায়ের পরিশ্রমকে গুরুত্ব দিতে গিয়েই জীবনে ভাল কিছু করতে চান জুয়েল। ভবিষ্যতে প্রোগ্রামিং ও রোবট নিয়ে কাজ করতে চান জুয়েল। চট্টগ্রামের ছোট্ট গ্রামের স্কুল ফতেয়াবাদ আর্দশ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উঠে আসা জুয়েলের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিতে পৃথিবীকে আরও ভাল কিছু উপহার দেয়া। ভবিষ্যতে নিজেদের রোবটকে আরও স্মার্ট করতে ও বিভিন্ন কাজে পারদর্শীভাবে গড়ে তুলতে মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
×