ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ ফাহাদ হোসেন

শীতের ক্যাম্পাস হোক প্রাণবন্ত

প্রকাশিত: ২১:৩৭, ১৪ নভেম্বর ২০২১

শীতের ক্যাম্পাস হোক প্রাণবন্ত

প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ এই শীত যেমনই হোক তার সৌন্দর্য অতুলনীয়। শীতের প্রকৃত সৌন্দর্য গ্রামেই দেখা মেলে। কুয়াশার চাদরে মোড়ানো ঢেকে যাওয়া অন্ধকারে ফেরিওয়ালার হেঁটে যাওয়া, কৃষকের ক্ষেতে কাজ করা, কাঠখড় দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহানো, টিনের চালায় কুয়াশা পড়ার টুং টাং ধ্বনি, গাছের পাতা কিংবা ঢাল হতে গড়িয়ে পড়া কুয়াশার টুপটাপ শব্দ কিংবা সূয্যি মামার মিষ্টি আলোর আভায় তৈরি হওয়া অপরূপ প্রকৃতি গ্রামীণ সমাজকে অসাধারণ সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলে প্রতিনিয়ত। প্রকৃতির সবুজ গালিচায় শিশিরে শিশিরে জমা হওয়া মুক্তো দানা, কুয়াশায় ভেজা মেঠোপথে হেঁটে যাওয়া, খেজুরের রসের সঙ্গে পিঠাপুলি খাওয়া কিংবা মিষ্টি রোদের স্নিগ্ধ আলোয় উষ্ণতার পরশ খুঁজে পাওয়ার মতো অসাধারণ অনুভূতি, অসম্ভব ভাল লাগা গ্রামের প্রকৃতির মধ্যে পাওয়া যায়। এসব সৌন্দর্যের কোন কিছুই শহুরে জীবনে উপভোগ করা না গেলেও শহরের জীবনে শীতের অন্যরকম সৌন্দর্য আছে। ইট-পাথরের আটকে পড়া জীবনে গায়ে চাদর মুড়িয়ে কুয়াশা ভেদ করে ব্যস্ত গন্তব্যে ছুটে চলা, পাড়ার চায়ের দোকানে টুং টাং শব্দ, চায়ের চুমুকে গরম বাষ্পের ধোঁয়ায় উষ্ণতা ছড়ানো, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট অসংখ্য পিঠার দোকানে হরেক রকম ভর্তাযুক্ত গরম গরম পিঠা খাওয়া, কুয়াশার অন্ধকারের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ঝাড়ু দেওয়া, গাড়ির হেড লাইটের আবছা আলোর উৎস হতে হেলপারের হাঁক-ডাক শহরের জীবনে শীতের অন্যরকম আবেশ তৈরি করে। গ্রাম কিংবা শহরের এমন সৌন্দর্যের মতোই শীতের আগমনে অসাধারণ সৌন্দর্য তৈরি হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশালাকৃতির পুকুরে উড়ে আসা সাইবেরিয়ার অতিথি পাখিগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে একাডেমিক ভবন পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে লাগানো ফুলগাছে ফুটে থাকা ফুলগুলো অসম্ভব ভাল লাগার দৃশ্য তৈরি করে। সকালের মিষ্টি রোদের আভায় ফুলের গায়ে জমা শিশির বিন্দুগুলো মুক্তা দানার মতো ঝলমল করতে থাকে। মাঠের সবুজ প্রান্তরে ঘাসের ওপর হাঁটার সময় শিশিরে ভেজা ঘাসগুলো মনে করিয়ে দেয় গ্রামের মেঠোপথে হাঁটার সেই অনুভূতিকে। ফৌজিয়া আক্তার জুঁই বলেন, শীত একটি রোমাঞ্চকর ঋতু। শীতের সকালে গায়ে চাদর জড়িয়ে কুয়াশার বুক ছিন্ন করে ভার্সিটি যাওয়ার মধ্যে কেমন যেন এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির সন্ধান মেলে। মনে হয় কী যেন এক উষ্ণতা সারা গায়ে লেগে আছে। চারদিকে কনকনে হাড় কাঁপানো শীত, নিস্তব্ধতার সময় হালকা একটু উষ্ণতা সবার কাম্য হয়ে ওঠে। শীতের সকালে ক্যাম্পাসের মাঠে বসে রোদ পোহানো এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করে। ক্যান্টিনে বসে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে শীত নিবারণ করার পাশাপাশি গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। শীতের সকালে ক্যান্টিনের চা পানের মজার কথা তুলে ধরে ইংরেজ বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী আহমেদ বলেন, শীতের সকালে প্রচ- ঠা-ায় বিছানা ছেড়ে উঠতেই ইচ্ছা হয় না। তবুও ভার্সিটির প্যারায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে হয়। তবে ক্যাম্পাসে আসার পর সব অভিযোগ নিমেষেই মিলিয়ে যায়। ক্যান্টিনে চায়ের বাষ্পের সঙ্গে বন্ধুদের আড্ডার উষ্ণতা সব খারাপ লাগা দূর করে দেয়। বিশেষ করে ক্যাম্পাসে প্রবেশমুখে রাস্তার দু’ধারে লাগানো ফুল গাছে শিশিরে ভেজা ফুলগুলো দেখার পরে মন যেন স্বপ্নের কোন রাজ্যে হারিয়ে যায়। ঘাসের ডগায় সূর্যিমামার সোনালি আলোর রাশি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে হলুদ সরষে ফুল। হাড় কাঁপানো শীতল হওয়া। পাতাশূন্য গাছ-গাছালি প্রভৃতি জানান দেয় প্রকৃতিতে এসেছে শীতকাল। গ্রাম কিংবা শহরের শহরের সৌন্দর্যের মতো শীতের আগমনে অসাধারণ সৌন্দর্য তৈরি হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) তে শিশিরভেজা সকাল নিয়ে হাজির হয়েছে শীত। এ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইফতিয়া জাহিন রাইদাহ বলেন, প্রকৃতির ক্যাম্পাস বোধহয় তাহাকেই বলে যেখানে দেখতে পাওয়া যায় প্রভাতের শিশির। রাতের শেষে ভোরের আলোকোজ্জ্বল সূর্যের কিরণ যখন প্রতিটি ঘাসের সজ্জায় সজ্জিত হয় সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেন বার বার হৃদয়কে তাড়িত করে। আর এ সবকিছুই নোবিপ্রবিতে লক্ষণীয়। নোবিপ্রবির প্রবেশদ্বার এ ঝরা শিউলির ওপর বিন্দু বিন্দু শিশির যেন চোখ ধাঁধানো বাস্তব অধরা রূপ। তিনি আরও বলেন, ধানের শীষে শিশির বিন্দু বরাবরই হিম হিম শীতের প্রকৃতির নিজস্বতা অবলোকিত হয় নোবিপ্রবিতে। কেন্দ্রীয় মাঠে খালি পায়ে শিশিরভেজা ঘাসে পদচারণ যেন নিজেকে প্রকৃতির সঙ্গে একীভূত করে ফেলে। নোবিপ্রবিতে শরৎ এর কাশফল বিদেয় বেলায়ও যেন মলিন হয়েও মলিন হয় নাহ শিশির ভেজা প্রভাতে। এ রূপ যেন নোবিপ্রবির প্রতিটি ছাত্রজীবনকে শিশিরভেজা প্রভাতের মতোই উজ্জীবিত করে। সবুজ অরণ্য আর টিলায় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শীত যেন নিয়ে আসে এক অপরূপ চিত্র। এ সম্পর্কে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী জুবায়েদুল হক রবিন বলেন, সবুজ এ ক্যাম্পাসে শীত যেন আসে এক অন্যরকম বার্তা নিয়ে। শীতের সকালের কুয়াশা আর শিশির ভেজা ঘাস ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে এক অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র। সবুজ ঘাসের ওপর শিশির বিন্দু যেন শীতের সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণতা দেয়। আর চাদর জড়ানো বিকেলটা ক্যাম্পাসে হেঁটে বেড়ানোটাই যেন উপভোগ্য। অরণ্যঘেরা এই ক্যাম্পাসে শীতকালে দেখা যায় বিভিন্ন ফুলের সমারোহ। নানান প্রজাতির ফুলের সৌরভে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস যেন পরিবর্তিত হয় এক মোহনীয় রূপে। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে এই ক্যাম্পাস অন্যতম। এ সময় ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটির দিনগুলোতে নামে দর্শনার্থীদের ঢল। শিক্ষার্থীদের উৎসব মুখরতায় ক্যাম্পাস যেন তার পরিপূর্ণ রূপ খুঁজে পায় শীতকালে।
×