ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যয়ের প্রতীক্ষা

পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি উদ্ধারে ধীরগতি

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৯ অক্টোবর ২০২১

পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি উদ্ধারে ধীরগতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মানিকগঞ্জ ॥ পাটুরিয়া ফেরিঘাটের ৫নং পন্টুনের কাছে ডুবে যাওয়া রো রো ফেরি আমানত শাহ দ্বিতীয় দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফেরি উদ্ধারে ধীরগতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফেরি পানি থেকে তুলতে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় আসার কথা থাকলেও এখনও পৌঁছেনি। তবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা। বুধবার চারটি এবং বৃহস্পতিবার একটি ট্রাক উদ্ধার করা হয়। আর ছয়টি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক ভাটিতে আটকে রাখা হয়েছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যয় নামের আরও একটি জাহাজ আসার কথা থাকলেও তার কোন খবর নেই। এদিকে ফেরিডুবির ঘটনায় গঠিত দুটি তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, পাটুরিয়ার ৫নং ঘাট এলাকায় ডুবে যাওয়া রো রো ফেরি আমানত শাহ দ্বিতীয় দিনেও উদ্ধার হয়নি। তবে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ওই ফেরির নিচ থেকে দুদিনে চারটি ট্রাক উদ্ধার করেছে। বিকেল পর্যন্ত বেঁধে রাখা তিনটি কাভার্ডভ্যান নদী থেকে উদ্ধার করে সড়কে তোলা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ১৪টি কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরিটি ডুবে যায়। এখনও তিনটি ট্রাক ডুবে থাকা ফেরির নিচে আটকে আছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা ও ডুবুরী দল সকাল সাড়ে আটটার দিকে উদ্ধার কাজ শুরু করেছে এবং ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটও কাজ করছে। বিআইডবিøউটিএর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোঃ শাজাহান বলেন, আমানত শাহ ফেরিটির বডির ওজন ৪৮০ টন আর ভেতরে পানি থাকায় ওজন আরও বেড়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার ৬০ টন পর্যন্ত উদ্ধার সক্ষমতা রয়েছে। প্রত্যয় নামের যে জাহাজটি অভিযানে যুক্ত হবে সেটি ২৫০ টন পর্যন্ত উদ্ধার সক্ষমতা রয়েছে। হামজা ও প্রত্যয় স্থানীয় বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ফেরিটি উদ্ধার করতে হবে। কারণ উদ্ধারকারী জাহাজগুলোর উদ্ধার সক্ষমতার চেয়ে আমানত শাহর ওজন বেশি। আপাতত হামজা দিয়ে যানবাহনগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, প্রথম দিকে ফেরিতে থাকা মোটরসাইকেল ও ট্রাকগুলোকে উদ্ধার করা হচ্ছে। প্রত্যয় নামে আরও একটি উদ্ধারকারী জাহাজ আসছে। তারপর ফেরিটি উদ্ধার করা হবে। আজ গঠিত তদন্ত কমিটি কার্যক্রম শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমানত শাহ ফেরিটির চলাচলের মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ার পরও জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। চার মাস আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে ফেরিটি ভারি মেরামতের কাজ করিয়ে আনা হয়েছে। ১৯৮০ সালে ফেরিটি তৎকালীন আরিচাঘাট থেকে চালু করা হয়। সাধারণত ৩০ বছর চলার পর মেয়াদ শেষ হয়। মেরামত করে আরও ১০ বছর চালানো যায়। কিন্তু ফেরিটির বয়স ৪০ পার হয়ে গেছে এক বছর আগেই। পাটুরিয়া ঘাটে একটি ভাসমান কারখানা রয়েছে। যেখানে ছোটখাটো মেরামত ও যন্ত্রাংশ বদলানো হয়। এখানেও রয়েছে নানা অনিয়ম। সঠিকভাবে কাজ না করেই ত্রæটিযুক্ত ফেরিগুলো চালানো হয়। যন্ত্রাংশ বদলেও অনিয়ম করা হয়। এ নিয়ে ফেরি মাস্টাররা অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার হয় না বলে জানা গেছে। এদিকে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় নারায়ণগঞ্জ থেকে বুধবার রওনা হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছেনি। কোন কর্তৃপক্ষই এর কোন সঠিক উত্তর দেন না। কোন বিষয় জানতে চাইলেও বলেন না। ডুবে যাওয়া ফেরির নিচে তিনটি ট্রাক আটকে আছে। নদীতে বেঁধে রাখা তিনটি কাভার্ডভ্যান হামজার ক্রেনের সাহয্যে সড়কে তোলা হয়েছে। অন্য ট্রাকগুলো নদীর পাড়ে আটকে রাখা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো সড়কে তোলা হবে। মোটর সাইকেরের সংখ্যা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারছেন না। কর্তৃপক্ষও সঠিকভাবে বলেন না। তবে এ পর্যন্ত চারটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি তদন্ত টিম এবং মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসনের একটি তদন্ত টিম দুপুর থেকে তদন্তের কাজ শুরু করেছে। তারা ফেরির সঙ্গে ডুবে যাওয়া গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ফেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ডুবে যাওয়া ফেরিটিও পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে পৌঁছালে হামজার সঙ্গে মিলে জাহাজ উদ্ধারের কাজ শুরু করবে বলে বিআইডবিøউটিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ঘটনা তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি ॥ সংসদ রিপোর্টার জানান, পাটুরিয়া ঘাটে শাহ আমানত ফেরি দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করবে সংসদীয় কমিটি। এ বিষয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সাব কমিটি গঠন করা হয় বলে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। কমিটির সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে আহ্বায়ক করে গঠিত সাব-কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-রনজিত কুমার রায়, ডাঃ সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল ও মোঃ আছলাম হোসেন সওদাগর। এদিকে কমিটি দেশের সব সমুদ্রবন্দরের জন্য একক আইন করার সুপারিশ করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সকল নদ-নদী পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সার্বিক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি প্রেজেন্টেশন পরবর্তী সভায় উপস্থাপনের সুপারিশ করে কমিটি। বৈঠকে ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল, ২০২১’ প্রয়োজনীয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের পর সংসদে রিপোর্ট প্রদানের জন্য কমিটি সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি মেজর (অব) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোঃ মজাহারুল হক প্রধান, রনজিত কুমার রায়, ডাঃ সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, মোঃ আছলাম হোসেন সওদাগর এবং এস এম শাহজাদা বৈঠকে অংশ নেন।
×