ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যা সন্দেহ

সেগুনবাগিচার হোটেল থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ২৯ অক্টোবর ২০২১

সেগুনবাগিচার হোটেল থেকে ঢাবি শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচার আবাসিক একটি হোটেল থেকে আদনান সাকিব রাব্বি (২৫) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে পুলিশ কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে দ্বিতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙ্গে তার লাশ উদ্ধার করে। পরে বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ আদনানের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ ও নিহতের সহপাঠীরা জানান, চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কাজনিত হতাশা থেকে আদনান সাকিব আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। নিহত আদনান ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। নিহতের রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আদনান হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ১০ মিনিট আগে কী করেছিলেন সেটাও মনে রাখতে পারতেন না। তিনি পড়ালেখাও করতে পারতেন না। এজন্য চাকরি পাওয়া নিয়ে হতাশা ছিল তার। সাইফুল জানান, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। দুই বছর আগে গার্হস্থ্য অর্থনীতির ছাত্রী নুসরাত আফরিনকে বিয়ে করে সে। তার সঙ্গে আদনানের কোন সমস্যা দেখিনি। তার একটাই চিন্তা ছিল। ভাল চাকরি। চাকরি পাবে না এই হতাশায় সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা। আদনানের বড় ভাই মোঃ মাহে আলম জানান, দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সে সবার ছোট ছিল। তাদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার সোনাখুলিতে। বাবার নাম আবদুল মালেক। তিনি জানান, আদনান সাকিব আত্মহত্যা করবে, ভাবতে পারিনি। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানান, আদনান ভাল ছাত্র ছিল। গত পরশু সে নিখোঁজ হয়। বুধবার আমরা তার স্ত্রীকে নিয়ে থানায় জিডি করি। পরে খবর পেলাম রাতে আমাদের প্রিয় ছাত্রের লাশ আবাসিক হোটেলে ঝুলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী জানান, খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক খবরটি আমরা বুধবার রাতে পেয়েছি। আদনান সাকিবকে আগের দিন থেকে হলে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে থানায় অভিযোগ করা হলে মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে তা নিশ্চিত করে পুলিশ। পরে সেগুনবাগিচা কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে দ্বিতীয় তলা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা জানান, আদনান সাকিব বিবাহিত ছিলেন। বুধবার আদনানের খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী নুসরাত আফরিন শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে আদনানের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে সেগুনবাগিচার কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে তার অবস্থান পাওয়া যায়। সেখানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন খাতায় তার নাম দেখা যায়। পরে হোটেলের দ্বিতীয় তলার ১০৭ নম্বর কক্ষের দরজা ভেঙ্গে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচানো অবস্থায় আদনান সাকিবের ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। এসআই পলাশ সাহা জানান, হোটেল কক্ষ থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। সেখানে লেখা ছিল, আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী জানান, খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক খবরটি আমরা গতকাল (বুধবার) রাতে পেয়েছি। আদনান সাকিবকে আগের দিন থেকে হলে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে থানায় অভিযোগ করা হলে মুঠোফোন নম্বর ট্র্যাক করে তা নিশ্চিত করে পুলিশ। পরে সেগুনবাগিচা কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলে দ্বিতীয় তলা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে চলতি বছরের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। মৃত্যুর এক সপ্তাহের বেশি সময় পর হাফিজুরের মরদেহ শনাক্ত করে তার পরিবার। হাফিজ এলএসডি নামে একটি মাদক নিয়ে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়। এরপর জুন মাসে আজিমপুর সরকারী স্টাফ কোয়ার্টারের একটি বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান তুষ্টির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শ্বাসকষ্ট ও এ্যাজমা ছিল বলে জানা যায়। আর সেপ্টেম্বরে চানখাঁরপুলের একটি বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মাসুদ আল মাহাদী অপুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অপুর রুমমেটরা মনে করেন অপু আত্মহত্যা করেছিলেন।
×