ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রায়পুরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৯ অক্টোবর ২০২১

রায়পুরায় আওয়ামী লীগের দু’গ্রæপের সংঘর্ষে নিহত ২, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আধিপত্য বিস্তার ও ইউপি নির্বাচন কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার কাচারিকান্দি গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ জন। বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ঢাকার ধামরাইয়ে নির্বাচনী অফিস ভাংচুর এবং পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেছে। নৌকার প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বুধবার রাতে রোয়াইল, সোমভাগ ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে পোস্টার ছেঁড়া, মারধর ও গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। পুলিশ জানায়, এলাকার আধিপত্য নিয়ে নরসিংদীর রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়নের কাচারিকান্দি গ্রামে শাহআলম মেম্বার ও ছোট শাহ আলমের সঙ্গে দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। এর জেরে ৬ মাস আগে দু’গ্রপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে ছোট শাহআলম গ্রæপের ইয়াসিন ও শাহিন নামে দুজন নিহত হয়। এ ঘটনায় বড় শাহ আলম গ্রæপের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরই মধ্যে ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়। ইউপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য শাহ আলম মেম্বারের লোকজন গ্রামে ঢোকার চেষ্টা চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার ভোরে শাহ আলম মেম্বার গ্রæপের সদস্যরা টেঁটা বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে ঢুকে ছোট শাহ আলমের বাড়িতে হামলা চালায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছোট শাহ আলমের সমর্থকরা বাধা দেয়ার চেষ্টা চালায়। এতে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় প্রতিপক্ষের হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছোট শাহ আলম গ্রæপের সাদির (২২) ও হিরণ (৩৫) নামে দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। হামলায় আটজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলো রমজান (১৮), মোকলেস (২২), আহিদ মিয়া (৪৩), জজ মিয়া (১৪), শামসুন্নাহার (৩৪), দানা মিয়া (৬০) ও আলামিন মিয়া (২০)। টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহতরা হলো নাজির (২১), নাজমা (২৪), দানিস মিয়া (২৪) ও মোঃ হক মিয়া (৫০)। এরা সবাই কাচারিকান্দি গ্রামের ছোট শাহ আলমের সমর্থক। এদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় জজ মিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রায়পুরা থানার ওসি মোঃ আজিজুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর শাহ আলম মেম্বার ও তার সমর্থকরা ভোরে গ্রামে ফিরে আসে এবং প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এতে দুজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। ধামরাইয়ে নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর ॥ ঢাকার ধামরাইয়ে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই নৌকার প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়া নির্বাচনী প্রচারের অফিস ভাংচুরসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন কয়েকটি ইউনিয়নের প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নৌকার মনোনীত প্রার্থী, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বুধবার রাতে রোয়াইল, সোমভাগ ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে এসব ঘটনা ঘটে। রোয়াইল ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু বলেন, বুধবার রাতে আমি সমর্থকদের নিয়ে মতবিনিময় করছিলাম। এ সময় নৌকার লোকজন মোটরসাইকেল নিয়ে আমার অফিসের সামনে হামলা করে। তারা পিস্তল দিয়ে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। প্রত্যেক মোটরসাইকেলে ওদের হাতে লাঠি আর নৌকার প্রতীক লাগানো। রোয়াইল ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, আমার সমর্থকরা এ ধরনের কাজ করবে না। আমার শতভাগ আস্থা আছে। সোমভাগ ইউনিয়ন পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজাহার আলী বলেন, রাতে আমার সমর্থকরা ডাউটিয়া অফিসে বসে নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে মিটিং করছিল। এ সময় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী প্রভাষক আওলাদ হোসেন গোটা মোটরসাইকেল করে ২০/৩০ জন সমর্থকসহ আমার নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালায়। সমর্থকরা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায় তারা। এক পর্যায়ে ক্যাম্পে থাকা চেয়ার-টেবিল, চায়ের কাপ, গ্যাসের চুলা ভাংচুর করে ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে তারা। এ বিষয় জানতে বিদ্রোহী প্রার্থী আওলাদ হোসেনকে ফোন করলে তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এদিকে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তোলেন। ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে পোস্টার ছেঁড়ার সত্যতা মিলেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। রূপগঞ্জে অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্ক ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় তারা প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার রাত একটার দিকে ভোলাব ইউনিয়নের চারিতালুক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর আগে রাত ১২টার দিকে আলগমীর হোসেন টিটুর দুই সমর্থক রিপন ও নাঈম নামে দুই যুবককে হকিস্টিক ও ইট দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তায়েবুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমাকে হয়রানি করার জন্য এরকম করছেন। সাতক্ষীরায় সংঘর্ষে আহত ১৭ ॥ সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে নৌকা ও স্বতন্ত্র (মোটরসাইকেল) প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়েছে। বুধবার রাতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন কোয়ারপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে এ ঘটনায় নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলে বাদী হয়ে ১৫ জন জ্ঞাত ও অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৩শ’ জনকে আসামি করে পুলিশের মামলা ॥ রূপগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে হুমকিস্বরূপ ¯েøাগান দেয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ওপর বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রূপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক কাজল মজুমদার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২০০-৩০০ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় এক পুলিশ কনস্টেবল আহতসহ একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন।
×