ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টিকে থাকার লড়াই আজ বাংলাদেশ উইন্ডিজের

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২৯ অক্টোবর ২০২১

টিকে থাকার লড়াই আজ বাংলাদেশ উইন্ডিজের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য কি? এ নিয়ে ৭ বিশ্বকাপের সবই খেলছে বাংলাদেশ দল, কিন্তু আহামরি কোন সাফল্য দেখাতে পারেনি। এরপরও জ্বলজ্বল করে জ্বলছে একটি দারুণ সাফল্য, সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপে জয়। একমাত্র দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুইবার টি২০ বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছে এবং তাদের ব্যতীত আর কোন টেস্ট খেলুড়ে দলকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। সেই ইতিহাস ফিরিয়ে আনার সুযোগ এবার শারজাতে। আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লড়াই শুরু। এ লড়াই চলতি বিশ্বকাপে টিকে থাকার, হারলেই সুপার টুয়েলভ পর্ব থেকে ছিটকে যাওয়া হয়ে যাবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। পরিস্থিতিটা একই ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্যও। তারাও বাংলাদেশের মতোই হেরেছে টানা দুই ম্যাচ। এজন্য ক্যারিবীয়রাও জিততে মরিয়া হয়েই নামবে। বিশ্বকাপ মঞ্চে জোহানেসবার্গে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ জেতার ৭ বছর পর ২০১৪ সালে ঢাকায় জিতেছে উইন্ডিজ। আবার ৭ বছর পর দু’দলের বিশ্বকাপ সাক্ষাতে ফিরে আসবে কোন ইতিহাস? জোহানেসবার্গ নাকি মিরপুর? ৬ দিনের মধ্যে শারজা-আবুধাবি-শারজা, তীব্র গরমে ভর দুপুরে মরুর দেশে ৩ ম্যাচ খেলা বেশ কঠিন পরীক্ষার মধ্যেই ফেলেছে বাংলাদেশ দলকে। তবে গরমের চেয়ে সীমাহীন কষ্ট ও দুর্ভোগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের তীব্র সমালোচনায় ক্রিকেটারদের বিতর্কে জড়ানো এবং মাঠে বাজে পারফর্মেন্স। পরাজয়, সমালোচনা, ক্রিকেটারদের আন্ডার রেটেড পারফর্মেন্স ইত্যাদির মধ্যে পর্যবসিত বাংলাদেশ দল এখন আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে। মূল পর্বে আগে কোন জয় আসেনি, এবারও দুই ম্যাচে ইতিহাস পাল্টেনি। তবে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি, এমনকি সেমিফাইনালে ওঠার যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা তা এখন অস্তমান সূর্য্যরে ন্যায় হলেও ক্ষীণ আশা বেঁচে আছে। আশা নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়, বাংলাদেশ দলও সেই আশাটাকে পুঁজি করে নামবে আজ। প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয় দল বলেই আশাটা আবার নতুন করে ডালপাতা গজাচ্ছে। কারণ স্পিনে বরাবরই দুর্বল ক্যারিবীয়রা প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তান, পাকিস্তানের কাছে এবং সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে পরাস্ত হয়েছে। স্পিনাররাই ছড়ি ঘুরিয়েছেন ক্যারিবিয়ান সব মারদাঙ্গা ও টি২০ ক্রিকেটের ভয়ঙ্করতম ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে। এভিন লুইস কিছুটা ভাল অবস্থায় থাকলেও, ক্রিস গেইল, কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, নিকোলাস পুরান ও ডোয়াইন ব্রাভোরা ব্যাট হাতে তাদের সামর্থ্য দেখাতে পারেননি। তাই স্পিন শক্তিতে বলিয়ান বাংলাদেশ জয়ের আশায় বিভোর হতেই পারে। শারজাতে আগে কখনও টি২০ খেলেনি ক্যারিবীয়রা, বাংলাদেশ খেলেছে ৫ দিন আগেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অবশ্য ৪০ ওয়ানডে খেলেছে উইন্ডিজ এই মাঠে, কিন্তু সর্বশেষটি ২০১৬ সালে। পোলার্ড, গেইল, ব্রাভো ও জ্যাসন হোল্ডারের জানা আছে এই মাঠটি সম্পর্কে। তবে ৫ বছর আগের জ্ঞান দিয়ে এখন কার্যকর কিছু হবে বলে মনে হয় না। আর এবার বিশ্বকাপ ইতোমধ্যেই দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে গেছে ক্যারিবীয়দের। টি২০ ফরমেটে বিশ্বের অন্যতম মারকুটে ব্যাটসম্যানদের ঝাঁক রয়েছে দলে, তারা নখ-দন্তহীন ২ অনুশীলন ম্যাচ ও ২ সুপার টুয়েলভ ম্যাচে। এমনকি ইংল্যান্ডের অফস্পিন মঈন আলী ও লেগস্পিনার আদিল রশিদ ৬ উইকেট নিয়ে স্পিনের বিপক্ষে ক্যারিবীয়দের দুর্দশাগ্রস্ত চেহারাটা সামনে এনেছেন। এমন ব্যাটিং লাইন ধসে পড়ে ৫৫ রানেই গুটিয়ে গেছে দুবাইয়ে। শারজাতেও স্পিনাররা সুবিধা পেতে পারেন। সে কারণে নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান ও শেখ মেহেদি হাসানের স্পিনে আজ ভাল কিছুই প্রত্যাশা করবে বাংলাদেশ। অবশ্য শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচে এখানে স্পিনাররা তেমন ভাল করতে পারেননি। কিন্তু আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ড ম্যাচে স্পিনাররা দাপট দেখিয়েছেন। তবে বোলিংয়ের চেয়ে বাংলাদেশের মূল দুশ্চিন্তা ব্যাটিংয়ে। ২০০৭ সালের টি২০ বিশ্বকাপে ৬ উইকেটে ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয়ার মূলেই ছিল দুর্দান্ত ব্যাটিং পারফর্মেন্স। তাই এ দুই স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য আবারও ব্যাটিংয়ে ভাল কিছু করতে হবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের। আগের দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ টসের পর বলেছিলেন ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ উইকেট। শারজাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কিছুটা ভাল ব্যাটিং করলেও তা কমই হয়েছে। বিশেষ করে ছক্কা হাঁকানোর পারদর্শিতার অভাবে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবিতে টস জিতেই মাহমুদুল্লাহ জানিয়েছিলেন দারুণ এই ব্যাটিং উইকেটে ভাল রান করতে চান। কিন্তু ৯ উইকেটে ১২৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। এখান থেকেই বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের বিপর্যস্ত পরিস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি মাহমুদুল্লাহও স্বীকার করেছেন নিজেদের ব্যাটিং দৈন্য। তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে হারের পর বলেন, ‘অবশ্যই আমরা ব্যাটিং নিয়ে হতাশ। ভাল উইকেট ছিল কিন্তু আমরা ভাল শুরুর অভাবে সবকিছু কঠিন করে ফেলেছি। আমরা বড় হিটের চেয়ে দক্ষতাপূর্ণ হিটে অভ্যস্ত। আমাদের সবকিছু পুনঃবিশ্লেষণ করতে হবে এবং ভাল পরিকল্পনা আঁটতে হবে।’ সেই পরিকল্পনা করার জন্য তেমন বিকল্প নেই বাংলাদেশের স্কোয়াডে এবং সময়ও ছিল মাঝে একদিন। ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ লিটন দাসের বিকল্প সৌম্য সরকারও ব্যর্থতায় নিয়মিত হতে পারেননি। একাদশের বাইরে আরেকজন ব্যাটসম্যান বলতে যিনি আছেন সেই শামীম পাটোয়ারি অনভিজ্ঞ এবং মূলত অলরাউন্ডার। তাহলে আজ কিভাবে জিতবে বাংলাদেশ দল। বাঁহাতি স্পিনার নাসুম সরল স্বীকারোক্তিতে বলেছেন,‘ভাল খেলে জিততে হবে, আমাদের দ্বারা সেটাই হচ্ছে না। ভাল খেলার বিকল্প নেই।’ কিন্তু চেষ্টা করেও পারছেন না ক্রিকেটাররা। তবে তীব্র সমালোচনার ব্যাপারটি এতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ক্রিকেটাররা বলছেন তারা জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছেন, কিন্তু হচ্ছে না। তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা দাবি করছেন বাংলাদেশী ক্রিকেটারদের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের সময় বডি মুভমেন্ট, শরীরি ভাষায় আত্মবিশ্বাসী মনোভাবের লেশমাত্র দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটাতেই ক্রিকেটারদের মধ্যে কিছুটা আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছে, কিন্তু সেটিও বড় ধরনের ভুলে কাজে আসেনি। ফলশ্রæতিতে যে পরাজয় এসেছে, তার হতাশা আষ্টেপৃষ্ঠে বাংলাদেশকে বেষ্টন করে পুরোপুরি নিমজ্জিত করেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে। কিন্তু এখন আর এসব ভেবেও কোন লাভ হবে না। জিততেই হবে। অস্তমান স্বপ্নকে আবার চাঙ্গা করতে হলে আজ জয়ের বিকল্প নেই। হারলে সুপার টুয়েলভ থেকে ছিটকে যেতে হবে, ক্যারিবীয়দের ভাগ্যেও একই ঘটনা। তাই জিততে চাইবে আজ দু’দলই। তাছাড়া ১২ টি২০ ম্যাচের মোকাবেলায়ও কেউ তেমন পিছিয়ে নেই, বাংলাদেশের ৫ জয় এবং উইন্ডিজের ৬। এছাড়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ একবার (২০০৭) এবং উইন্ডিজ (২০১৪) একবার জিতেছে। তাই শারজার উত্তপ্ত দুপুরে আজ লড়াইটা বেশ জমজমাট হওয়ার সম্ভাবনা।
×