ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি আজ

প্রকাশিত: ০০:১৩, ২৮ অক্টোবর ২০২১

আত্মবিশ্বাসী শ্রীলঙ্কা-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ আর্থিক সঙ্কট, বোর্ডের (এসএলসি) সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটারদের দ্বন্দ্ব, বাইরে এমনি নানা সমস্যায় জর্জরিত শ্রীলঙ্কা টি২০ বিশ্বকাপে দারুণ কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচে টানা দুই জয়ের পর রাউন্ড ওয়ানে তিন ম্যাচের সবকটি জিতে গ্রুপ ‘এ’-এর সেরা হিসেবে সুপার টুয়েলভে উঠে আসে দাসুন শানাকার দল। আর ‘আসল’ বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে উড়িয়ে তাদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। অর্থাৎ আমিরাতে পা রেখে এখনও পর্যন্ত হারেনি সনাথ জয়সুরিয়া-মাহেলা জয়াবর্ধনের উত্তরসূরিরা। পাথুম নিশাঙ্কা, চারিথ আসালাঙ্কা, ভানুকা রাজাপাক্ষে, হাসারাঙ্গা ডি সিলভার মতো তরুণরা আশাজাগানিয়া ক্রিকেট খেলছেন। বড় দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আজ ‘বড়’ পরীক্ষা তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্লোজ ম্যাচে শেষ ওভারে পাওয়া জয়ে টুর্নামেন্টে এ্যারন ফিঞ্চদেরও শুরুটা ভাল হয়েছে। তবে জয় পেলেও ওই ম্যাচে ব্যাটে-বলে তারকাখচিত দলটির পারফর্মেন্স প্রতাশিত ছিল না। সেটি মাথায় রেখেই আজ মাঠে নামছে অসিরা। দু’দলেরই লক্ষ্য জয়ের ধারা অব্যাহত রাখা। দুবাইয়ে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়। ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ জয়ের পর ছেলেরা বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরা শক্তিশালী। আমাদের তাই সেরাটা উজাড় করে দিতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী। আমরা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’ বলেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। শারজায় সেদিন প্রথমে ব্যাট করে ১৭১ রান করেছিল বাংলাদেশ। জবাবে সাকিব আল হাসানের বোলিং তোপে ৭৯ রানেই ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। জয়ের জন্য ৬ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১০ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ৯২ রান। আস্কিং রেট বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত রান তুলতে মরিয়া ছিলেন ঐ সময় ক্রিজে থাকা দুই ব্যাটার চারিথ আসালঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাক্ষে। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ১৩ ও ১৫তম ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আসালঙ্কা ও রাজাপাক্ষে। দু’টি ক্যাচই মিস করেন লিটন দাস। জীব পেয়ে বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে ম্যাচ বের করে নেন তারা। ষষ্ঠ উইকেটে ৫২ বলে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৮৬ রানের জুটি। ৭ বল বাকি থাকতে লঙ্কানরা তুলে নেয় ৫ উইকেটের বড় জয়। অনেকটা অনভিজ্ঞ দল নিয়ে বিশ^কাপে এ পর্যন্ত সত্যি ভাল করছে দলটি। অধিনায়ক দাসুন শানাকাও বিশ্ব ক্রিকেটে তেমন পরিচিত মুখ নন। ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টে অভিজ্ঞ বলতে আছেন শুধু দিনেশ চান্দিমাল ও কুসল পেরেরা। সহ-অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাও কিছুটা পরিচিতি। তবে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে কুসলের ওপরই সবচেয়ে বেশি ভরসা রাখবে লঙ্কান শিবির। ব্যাটিং বোলিংয়ের বিচারে খুব একটা শক্তিশালী না হলেও এরই মধ্যে নিখুঁত ফিল্ডিংয়ে বিশ্বের নজর কেড়েছে তারকাশূন্য শ্রীলঙ্কা দল। বোলিংয়ে দুই পেসার দুশমান্থ চামিরা ও লাহিরু কুমারার সঙ্গে আছেন স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ও আকিলা দনাঞ্জয়। ইনজুরির কারণে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে খেলতে না পারা তরুণ রহস্য স্পিনার মাহিশ থিকশানা যদি আজ ফিট হয়ে মাঠে নামেন তবে তিনি হতে পারেন প্রতিপক্ষের জন্য মাথাব্যথার কারণ। শ্রীলঙ্কার মতো সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ৫ উইকেটে হারায় অস্ট্রেলিয়া। বোলারদের দুর্দান্ত নৈপুণ্যে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেটে মাত্র ১১৮ রানে বেঁধে রাখে তারা। তবে ১১৯ রানের সহজ টার্গেট স্পর্শ করতে এ্যারন ফিঞ্চদেরও বেশ বেগ পেতে হয়। শেষ ওভারে গিয়ে জয়ের দেখা পায় অসিরা। বল হাতে দু’টি করে উইকেট নেন অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক-জশ হ্যাজেলউড-এডাম জাম্পা। ব্যাট হাতে স্টিভেন স্মিথ ৩৫ ও মার্কাস স্টয়নিস অপরাজিত ২৪ রান করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। জয় দিয়ে আসর শুরু করলেও দলের পারফরমেন্সে সন্তুস্ট নন এ্যারন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে বোলাররা ভালো করলেও, ব্যাটাররা ভালো করতে পারেনি। টি২০তে শ্রীলঙ্কাও বেশ ভাল দল। কিন্তু আমরা আশা করি পরের ম্যাচে দল ভালো খেলেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে।’ একদমই ফর্মে নেই বড় তারকা ডেভিড ওয়ার্নার। আইপিএলেও একাদশে সুযোগ পাননি এই ওপেনার! বিশ^কাপের আগে সর্বশেষ দ্বিতীয়সারির দল নিয়ে অসিরা সিরিজ হেরে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং বাংলাদেশ থেকে। তবে ফর্মে আছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, আছেন স্টিভেন স্মিথ। বোলিংয়ে মিচেল স্টার্ক, কেন রিচার্ডসনের সঙ্গে আছেন লেগস্পিনার এ্যাডাম জাম্পা। টি২০তে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পাল্লাটা সমান-সমান। এখন পর্যন্ত ১৬বারের দেখায় সমান ৮বার করে জিতেছে দু’দল। ২০১৯ সালে সর্বশেষ এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছিল তারা। ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশ করে অসিরা। আর টি২০ বিশ্বকাপে তিনবারের দেখায় ২বার অস্ট্রেলিয়া ও একবার জয় পায় শ্রীলঙ্কা। ২০১০ সালের পর আর বিশ্বকাপের মঞ্চে মুখোমুখি হয়নি দু’দল। পাঁচ ট্রফিতে ওয়ানডে বিশ^কাপটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি বানিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়া টি২০তে এখনো পর্যন্ত শিরোপার দেখা পায়নি। ছোট্ট ফরমেটের বিশ^মঞ্চে অসিদের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১০ সালে রানার্স আপ হওয়া। উইন্ডিজে অনুষ্ঠিত সেবার ফাইনালে প্রবল প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ডের কাছে হারতে হয়েছিল তাদের। আমিরাতের স্পিন-সহায়ক পিচে অস্ট্রেলিয়ার দুর্বলতা চিরায়ত। সুতরাং স্মিথ-ওয়ার্নারদের আজও লঙ্কান ঘূর্ণিবলের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
×