ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘কালজয়ী গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ’

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৮ অক্টোবর ২০২১

‘কালজয়ী গানের মাঝেই বেঁচে থাকবেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতের সমান্তরালে বহমান ছিল তাঁর জীবনের গতিবিধি। সুরেলা কণ্ঠের আশ্রয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন শ্রোতার অন্তরে। গেয়েছেন ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, জারি, সারি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদিসহ রকমারি আঙ্গিকের গাান। ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশনায়ও রেখেছেন অনন্য কীর্তির স্বাক্ষর। তাঁরই কল্যাণে লোকগান বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে শহুরে জীবনে। তাঁর গাওয়া ‘ও কি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘মাঝি বাইয়া যাও রে’সহ অসংখ্য গানের সুরে আপ্লুত হয়েছে নাগরিক মন। যান্ত্রিক জীবনের খুঁজে পেয়েছেন মৃত্তিকাসংলগ্ন শিকড়ের ঠিকানা। বৃহস্পতিবার ছিল সেই কিংবদন্তি লোকসঙ্গীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের ১২০তম জন্মদিন। সেই সূত্র ধরে উচ্চারিত হলো শিল্পীর বর্ণিল শিল্প-জীবনের কথা। দিবসটি উপলক্ষে ‘লোকসঙ্গীত সম্রাট আব্বাসউদ্দীন আহমদ ও তাঁর শিল্পী জীবন’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। এতে আব্বাসউদ্দীনের শিল্পী জীবনের মূল্যায়নে বক্তারা বলেন, শরীরী অস্তিত্ব না থাকলেও কালজয়ী গানের মাঝে বেঁচে থাকবেন তিনি। নিছক বিনোদনের বাইরেও দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয় তাঁর গানে। হেমন্ত বিকেলে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সজ্জিত ছিল স্মৃতিচারণ ও আলোচনায়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠসৈনিক বুলবুল মহলানবীশ। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌসী রহমান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। মূল প্রবন্ধে বুলবুল মহলানবীশ বলেন, শৈশব থেকেই সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আকর্ষণ অনুভব করতেন পশ্চিমবঙ্গে কুচবিহারে জন্ম নেয়া এই শিল্পী। নিজ গ্র্রামের চাষীদের কণ্ঠে ভাওয়াইয়া গান শুনে শুনে অনায়াসেই সেই গান কণ্ঠে তুলে নেয়ার ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা ছিল তাঁর। যে কোন গান একবার দুবার শুনলেই তাঁর কণ্ঠস্থ হয়ে যেত। এক মাস রোজা রাখার পর ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ গানটি না গাইলে বাঙালীর ঈদ সম্পূর্ণ হয় না। হয়তো অনেকেই জানেন না এই গানের জন্ম-ইতিহাস। এই গান রচনার মূল প্রণোদনাকারী হিসেবে এককভাবে যে নামটি উচ্চারণ করা প্রয়োজন সে নামটি হলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ। এক বন্ধুর বিয়েতে কলকাতায় যাওয়ার সুযোগ হলে গ্রামোফোন কোম্পানির বিমলবাবুকে গান রেকর্ডের ব্যবস্থা করে দেয়ার অনুরোধ জানান। বিমলবাবু আব্বাস উদ্দীনের গান শুনে খুশি মনেই সেই ব্যবস্থা করে দিলেন। আব্বাসউদ্দিন কাজীদা বলে ডাকতেন কাজী নজররুল ইসলামকে। নজরুলের কিছু গান আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়েছে এবং সেগুলোও জনপ্রিয় হয়েছে। আলোচনায় ফেরদৌসী রহমান পিতৃ স্মৃতিচারণ করেন। বাবা আব্বাসউদ্দীনকে নিয়ে কথা বলেন এই ফেরদৌসী রহমান। অধ্যাপক ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন আব্বাসউদ্দীন আহমদ।
×