ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৮ অক্টোবর ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাকালীন শিল্প বাণিজ্য উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা একটি সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা। তাদের মতে, করোনার শুরুতেই দ্রুত এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতি সচল রাখা সম্ভব হয়েছিল। সববাধা পেরিয়ে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়লেও সেদিক থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকিমুক্ত। সম্প্রতি গার্মেন্টস খাতের বিপুল পরিমাণ ক্রয়াদেশ প্রমাণ করে অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক পথে ছিলেন এবং সঠিক পথেই আছেন। এছাড়া এলডিসি উত্তরণ, দারিদ্র্য শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের যে রূপকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামী দিনে অর্থনীতি আরও ভাল যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা। বুধবার আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে ‘করোনাকালীন শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনার ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সকাল ১১টায় রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের বলরুমে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিল্পমন্ত্রী এ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন এবং ডি ৮ সিসিআই’র সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ। দেশের অবকাঠামো খাতে আওয়ামী লীগের সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৩ বছর আগে কী ছিল বাংলাদেশ? আজ বাংলাদেশের চেহারা পাল্টে দিয়েছেন শেখ হাসিনা তার ম্যাজিকেল লিডারশিপ দিয়ে। আজকে পাহাড়েও রাস্তাঘাটের চেহারা পাল্টে গেছে। আগামী বছর মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়বে বলেও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় পাকিস্তানের চেয়ে সব সূচকে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, বাংলাদেশের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার প্লাস। আর পাকিস্তানের ২২ বিলিয়ন। গড় আয়ু আজকে আমাদের ৭৩ বছর আর পাকিস্তানের ৬৭। বাংলাদেশের এক টাকা সমান পাকিস্তানের ১ রুপী ৮৪ পয়সার সমান। কার ম্যাজিকেল লিডারশিপে এটা হলো? তিনি শেখ হাসিনা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করে কি ভুল করেছিলেন? না, তিনি সঠিক ছিলেন। এটাই হলো আজকের বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিজের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন না। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রাজনীতি করছেন। এই করোনাকালে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন তিনি নিজের জন্য নয়, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে রাজনীতি করেন। শেখ হাসিনার ট্রু ফলোয়ার হলে দেশ সোনার দেশ হবে। ভ্যাকসিন সংগ্রহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলিসি এবং দক্ষতা সারা দুনিয়ায় প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি শুধু বাংলাদেশে প্রশংসিত প্রধানমন্ত্রী নন, বিশ্বেও প্রশংসিত। ইতোমধ্যে জাতিসংঘসহ বিশ্বের অন্যান্য সংস্থা তাকে সেই সম্মানে ভূষিত করেছে। শুধু বর্তমান নিয়ে নয়, সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ায়ও কাজ করছেন তিনি। যখন অন্য রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনের চিন্তা করে, তখন শেখ হাসিনা ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য কাজ করেন। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নকাজ চলছে, মানুষের সাময়িক সমস্যা হলেও এর ফলাফল হবে জনবান্ধব। আগামী বর্ষার আগেই জনদুর্ভোগ শেষ হবে। সীমান্তসহ দেশব্যাপী যোগাযোগ খাতের যুগান্তকারী উন্নয়ন হচ্ছে বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য নিরলস পরিশ্রম করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজনীতিকে যারা ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে নেয়, তারা ভয়াবহ। উন্নয়ন ও মেগা প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি এবং করোনায় সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেয়া পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা মোকাবেলায় শেখ হাসিনার পদক্ষেপে আজ সারাবিশ্বে প্রসংশিত। জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে জীবনের চাকাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচল রেখেছেন। আগামী বছর জুন মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল উদ্বোধন করেবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী বছর মোট চারটি মেগা প্রকল্প আমরা উপহার দেব। বাংলাদেশের মানুষ যাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে সে জন্য শেখ হাসিনা জেগে থাকেন। নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা জো বাইডেনকে বলছে, বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকাও। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যবসায়ীদের রাজনীতি করা আমি দোষের মনে করি না। কিন্তু রাজনীতিকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা, এটাকে আমি ঘৃণা করি। রাজনীতিকে ব্যবসায় ব্যবহার করলে রাজনীতি থাকে না, ব্যবসাও থাকে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হলে এই ষড়যন্ত্র এই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রুখতে হবে। তা না হলে ব্যবসা করতে পারবেন না। এর জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি দেশের শত্রু, জাতির শত্রু। সাম্প্রতিক সময়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে হামলার বিষয়টি তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের উন্নয়নে এই সাম্প্রদায়িক শক্তি বাধা তৈরি করছে। গত ১২ বছরে কোন ঘটনা ঘটল না কিন্তু এবার নির্বাচনে সামনে রেখে এই ধরনের ঘটনা ঘটল। ওই ঘটনায় থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি যারা একাত্তরে বাংলাদেশ চায়নি, তারা আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা আবারও আগুন সন্ত্রাস, ককটেল আর পেট্রোল বোমা নিয়ে ভাবছে। এভাবে তারা ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করতে চাচ্ছে। এই সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্ভর যোগ্য ঠিকানা হচ্ছে বিএনপি। তাদের পৃষ্ঠপোষক করছে এই দলটি। তারা আবারও পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি এদের ছাতা দিয়ে যাচ্ছে। যারা পূজাম-পে হামলা করেছে, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা করেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে। এদের বিচার হবেই, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে, ছাড় নেই। তিনি বলেন, একটা কথা আমি বলতে চাই, প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমাদের থেকে মুসলমান অনেক বেশি, ২০ কোটির মতো, আমাদের থেকে অনেক বেশি মুসলমান। আমাদের এখানে হিন্দু এক কোটির মতো। এখানে যদি এক কোটি মানুষকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেই ওখানে ২০ কোটি মানুষ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। এ কথাটা আপনারা সবাই ভাববেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় আসন্ন ইউপি নির্বাচন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কাদা ছোড়াছুড়ির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ইউপি নির্বাচনে কী যে অবস্থা! যার সঙ্গে যার বনে না তাকে বলে রাজাকারের ছেলে অথবা রাজাকারের নাতি অথবা নাতির ঘরে বা শান্তি কমিটির মেম্বার ছিল নানা। এসব অভিযোগে স্তূপ হয়ে গেছে পার্টি অফিস। তবে আমরা সবই অনুসন্ধান করি এবং প্রকৃত লোকদেরই দেয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্যেও কিছু ভুল হয়। আমরাও মানুষ। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের কিছু নেতা জনগণের চেয়ে নিজের লোভ খুঁজে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নেতৃত্ব বাছাইয়ে যারা জনগণের জন্য নেতৃত্ব মনোনীত না করে পকেট বাণিজ্য করছেন তাদের সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, আগামী বছর জাতিকে ৪টি মেগা প্রকল্প উপহার দেয়া হবে। এগুলো- পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এমআরটি বা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট এবং এক্সপ্রেসওয়ে। এছাড়া কর্ণফুলী টানেলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই আজ আমরা কেউ ব্যবসায়ী কেউ বা রাজনীতিবিদ হতে পেরেছি। দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কেউ আজকের অবস্থাতে আসতে পারতাম না। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ছিল সাহসী পদক্ষেপ। এরফলে অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি রফতানিখাত সচল রয়েছে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর সামনে রেখে ২০২১ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। করোনাকালীন এই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে চলছে। প্রণোদনার প্যাকেজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে এসএমই খাতে ঋণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। তিনি বলেন, দেশের ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানে আগ্রহী দেখালেও ছোট উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ধরনের মনোভাব থেকে সরে আসা প্রয়োজন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তবে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। এলডিসি উত্তরণের অনেক সুবিধাও রয়েছে। দেশে ১০০টি ইকোনমিক জোন করা হচ্ছে। এখানে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেই বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে হলে সরকারের নীতিগত সহায়তা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে এনবিআরের পলিসিতে বেশকিছু পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাড়াতে হলে নতুন করদাতা খুঁজে আনতে হবে। শুধু যারা কর দিচ্ছেন তাদের ওপর চাপ তৈরি না করে বরং এনবিআরের পলিসিগত বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ডাকতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, করোনাকালীন সময়ে যখনই কোন সমস্যা তৈরি হয়েছে তখনই প্রধানমন্ত্রী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের সাপোর্ট দিয়েছেন।
×