ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরের ঘটনা সামাল দিতে পুলিশের নানা উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৮ অক্টোবর ২০২১

মিরপুরের ঘটনা সামাল দিতে পুলিশের নানা উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগের মধ্যে মিরপুর বিভাগ এলাকায় বার বার কিশোর-কিশোরী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় থানায় জিডি হচ্ছে। যা ডিএমপির অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশও। তাই মিরপুর এলাকায় অস্বাভাবিক নিখোঁজের ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের মিরপুর বিভাগ। বার বার শিশু-কিশোরী নিখোঁজ হলেও মিরপুর বিভাগ পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত পাচার হওয়ার কোন ঘটনা তারা পায়নি। প্রেমঘটিত কারণেই স্বেচ্ছায় অধিকাংশ বাসা ছেড়েছে। তাদের কেউ কেউ স্বেচ্ছায় ফিরেও এসেছে। আবার তারা (থানা পুলিশ) অবস্থান চিহ্নিত করে অনেককে উদ্ধার করেছে। মিরপুর বিভাগ পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৪২৪ শিশু-কিশোরী নিখোঁজ হয়েছে। এদের প্রত্যেকের সন্ধান পাওয়া গেছে। কেউ ফিরে এসেছে, কাউকে উদ্ধার করা হয়েছে। জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাহতাব উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অস্থিরতা কাজ করছিল। অনেকে অনলাইনে ক্লাস করতে গিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। পরে তারা পালিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়ার পর যাদের উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই প্রেমঘটিত কারণে পালিয়ে গেছে। কেউ কেউ পরিবারের সঙ্গে রাগ করে পালিয়েছে। এদের বয়স ১০-১৭ বছরের মধ্যে। তিনি বলেন, মিরপুর এলাকায় বসবাসকারী মানুষ নি¤œ আয়ের। তাদের মধ্যে সচেতনতাও কম। তবে এ পরিস্থিতি সামাল দিতে উঠান বৈঠক, স্কুল-কলেজে গিয়ে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, বিট পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। ফলে আগের তুলনায় নিখোঁজের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার এম এম মঈনুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের এমন ঘটনা কম-বেশি সব এলাকায় ঘটছে। মিরপুর এলাকা ঘনবসতিপূর্ণ। আমরা নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়ার পরপরই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত ও নিখোঁজদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত ব্যতিক্রম কিছু পাওয়া যায়নি। মাদক, ইভটিজিং ও নিখোঁজসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বুধবার শেওড়াপাড়ায় সামাজিক সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া ও ব্যবসায়িক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসিবুর রহমান বলেন, তার থানাধীন এখন পর্যন্ত যে ক’জন নিখোঁজ হয়েছে, তাদের কেউ কেউ ফিরে এসেছে। অনেককে আমরা উদ্ধার করেছি। পাচারের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে তার থানা এলাকার দশম শ্রেণীর এক ছাত্রী নিখোঁজ হয়। পরে পরিবার জিডি করলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই কিশোরী এক সিএনজি চালকের সঙ্গে পালিয়ে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ চলে যায়। সেখানে পালিয়ে যাওয়া ছেলের বোনের বাসায় উঠে এবং বিয়ে করে। পরিবার গত রবিবার ওই ছাত্রীকে নিয়ে আসে। ছাত্রীকে পেয়ে তার পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। পুলিশ বলছে, নিখোঁজ শিশু-কিশোরীদের একটি অংশ ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে ঘর ছাড়লেও ছেলেদের পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করার ঘটনা নেই বললেই চলে। প্রায় সব জিডিই করেছেন মেয়ে শিশু-কিশোরীর অভিভাবকরা। নিখোঁজ শিশু-কিশোরী ফিরে আসলে বা পুলিশ তাদের উদ্ধার করলে সন্তানকে পেয়ে পরিবার আর মামলা করতে চায় না। মূলত ১৮ বছরের উর্ধে যেসব মেয়ে বাসা ছাড়ে তারা স্বেচ্ছায় যায়। এর নিচে কোন মেয়ে বাসা ছাড়লে পরিবার চাইলে মামলা করতে পারে। কিন্তু অনেক পরিবার মামলা করতে রাজি হয় না। সম্প্রতি মিরপুর এলাকা থেকে শিশু-কিশোরী নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। গত মাসে মিরপুর থেকে তিন শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়। পরে পরিবার জিডি করে। এর কয়েকদিন পর ৬ অক্টোবর কক্সবাজার থেকে তাদের উদ্ধার করে র‌্যাব। তখন র‌্যাব জানিয়েছে, তিন কিশোরী ঘুরতে কক্সবাজার গিয়েছিল এবং সেখান থেকে তারা দেশের বাইরে যেতে চেয়েছিল। এরপর ১৬ অক্টোবর সকালে পল্লবী থেকেই দশম ও ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া দুই ছাত্রী বাসা ছাড়ে। অভিযোগ পেয়ে ওই দিন রাতেই মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার একটি মেয়ে হোস্টেল থেকে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ।
×