ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক শিল্পে বাড়তি ক্রয়াদেশ

প্রকাশিত: ২১:১১, ২৮ অক্টোবর ২০২১

পোশাক শিল্পে বাড়তি ক্রয়াদেশ

বাংলাদেশের রফতানিমুখী পোশাক শিল্প-কারখানা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে মূল নিয়ামক শক্তি হিসেবে অবদান রেখে আসছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের চাহিদা অনেক। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোয় আমাদের পোশাক শিল্পের আবেদন নতুন কিছু নয়। সঙ্গত কারণে রফতানি বাণিজ্যে পোশাক শিল্পের অংশীদারিত্ব আন্তর্জাতিক বাজারে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে। গত দেড় বছর ধরে করোনা সংক্রমণে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় হরেক রকম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় রফতানি নির্ভর অর্থনীতির সমৃদ্ধ খাতগুলো। যার মধ্যে পোশাক শিল্প উল্লেখযোগ্য। ছোঁয়াচে এই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার পরিস্থিতির ন্যায্য দাবি ছিল। করোনা এখনও সম্পূর্ণ নির্মূল না হলেও পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রনে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতির মূল প্রবৃদ্ধির খাতগুলো। করোনাকালে স্থবির হয়ে পড়া পোশাক শিল্প ও নতুন উদ্যম আর চাহিদায় ক্রমেই গতিশীল হওয়ার চিত্র শুধু আশাব্যঞ্জক নয়, বরং ক্রয়াদেশ বেড়ে যাওয়াও এক অবশ্যম্ভাবী রফতানি-বাণিজ্যের নব সংযোগ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তেমন শুভ সঙ্কেত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের উৎসাহ জোগাবে। ক্রয়াদেশ বাড়ার সঙ্গে বিভিন্ন কারখানায় টাঙানো হয়েছে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। গত বছরের তুলনায় ২০% বেশি অর্ডার পাওয়া পোশাক শিল্প-কারখানায় নতুন লোকবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি এসেছে। যেখানে আগে ছাঁটাই পর্বে অনেক শ্রমিককে চাকরি ছাড়তে হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাশাসিত সরকারের জন্যই অনেক অর্ডার বাংলাদেশ গার্মেন্টসে স্থান্তারিত করা হয়। আরও আগে চীনের পোশাক শিল্প-কারখানার অনেক ক্রয়াদেশ ইউরোপ আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে চলে আসে। বলতে গেলে আমাদের পোশাক শিল্প-কারখানার এখন রমরমা অবস্থা। নতুন লোকবল নিয়োগ ছাড়াও অনেক শিল্প দুই সিফটে উৎপাদন করতে বাধ্য হচ্ছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে দেশে রফতানিমুখী ৩ হাজার ৩৮৪টি পোশাক শিল্প-কারখানা চালু রয়েছে। শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ছাব্বিশ হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে ১৬ হাজার নারী এবং ১১ হাজার পুরুষ। পোশাক শিল্পে মূলত নারী শ্রমিকরাই সংখ্যায় এগিয়ে। হিসাবের বাইরে আরও ১ হাজারের বেশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে ৪০ থেকে ৪২ লাখ শিল্প শ্রমিক কারখানায় নিয়মিত কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে ইউরোপ আমেরিকায় ব্যাপক হারে টিকা প্রদানের কারণে চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ফলে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়াও অনিবার্য। বাজার অর্থনীতি তার পুরনো চেহারায় ফিরে গেলে নতুনরূপে তার কার্যক্রম আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়তেও সময় লাগছে না। তারই অবশ্যম্ভাবী ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে নতুন নতুন ক্রয়াদেশ। রফতানি বাণিজ্যের যে খাতটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে মজবুত করে যাচ্ছে সেই পোশাক শিল্পের এই আশাব্যঞ্জক বৈশ্বিক চাহিদা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার নিয়ামক শক্তি বলাই যেতে পারে। যাদের শ্রমশক্তি আর মূল্যবান সময়ের বিনিময়ে এই ব্যাপক চাহিদা মেটানো হবে তাদের অধিকার এবং ন্যায্য পাওনা যথাযথভাবে সংশ্লিষ্টদের কাছে চলে যাওয়াও এক প্রকার দায়বদ্ধতা। তারাও যেন এই শিল্পের সুফল এবং ব্যাপক সফলতার অংশীদারিত্ব পেতে পারে সেদিকে নজরদারি প্রয়োজন।
×