ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় সাকিব

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০২১

আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে অনন্য উচ্চতায় সাকিব

ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে বাংলাদেশের প্রাণ সাকিব আল হাসান। শুধু নামে নয় কার্যক্রমেও সত্যি-ই তাই। অন্তত পরিসংখ্যান এমনটাই বলছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি আর কার্যকর অস্ত্রের নাম এই সাকিব আল হাসান। চলমান বিশ্বকাপের দিকে তাকালেও বিষয়টি খুব সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। এবারের বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডসহ এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে জয় মাত্র দুটিতে। বাকী দুটিতেই পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা। এই সময়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তার দ্যূতি ছড়িয়েছেন ঠিকই। চার ম্যাচ থেকে ১১ উইকেট নিয়ে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ডও। পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে টি-২০ বিশ্বকাপে এখন সবার উপরে অবস্থান সাকিব আল হাসানের। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এতদিন সর্বোচ্চ ৩৯ উইকেট শিকার করে শীর্ষে ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। চলমান টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেই তার রেকর্ডে ভাগ বসান সাকিব আল হাসান। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে মাত্র ৯ রানে ৪ উইকেট শিকার করেছিলেন টাইগার অলরাউন্ডার। আর তাতেই আফ্রিদির রেকর্ড স্পর্শ করেন তিনি। এরপর অপেক্ষায় ছিলেন রেকর্ডটাকে এককভাবে নিজের করে নেওয়ার। খুব বেশি সময় নিলেন না সাকিব। রবিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরের মূলপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা। আর এই ম্যাচেই দুই উইকেট লাভ করেন সাকিব। সিংহলীজদের দুই তারকা ব্যাটসম্যান পাথুম নিসাঙ্কা আর আভিস্কা ফার্নান্দোকে আউট করেন সাকিব। এই দুই উইকেট শিকারেরর মধ্য দিয়েই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সাকিবের সংগ্রহ ৪১ উইকেট। ৩৯ উইকেট নিয়ে বর্তমানে দ্বিতীয় পজিশনে পাকিস্তানের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। তৃতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কার লাসিথ মালিঙ্গা। টি-২০ বিশ্বকাপে যার সংগ্রহে রয়েছে ৩৮ উইকেট। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছেন পাকিস্তানের সাঈদ আজমল। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে তাদের পরে ৩৫টি করে উইকেট নিয়ে যৌথভাবে পঞ্চম স্থানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার অজান্তা মেন্ডিস এবং পাকিস্তানের উমরগুল। বিশ্বকাপের মূল পর্বের প্রথম ম্যাচে হারের দিনে রেকর্ড গড়েছেন সাকিব। এর আগে বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেও এমন চিত্রনাট্য দেখা গেছে এবার। স্কটল্যান্ডের কাছে হার দিয়ে বাছাইপর্বের মিশন শুরু করেছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। সেই ম্যাচেও রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব আল হাসান। দুই উইকেট নিয়ে লাসিথ মালিঙ্গাকে টপকে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহের কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। এবার বিশ্বকাপে আফ্রিদির রেকর্ডটাও নিজের করে নিলেন সাকিব আল হাসান। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা আফ্রিদি ৩৯ উইকেট নিয়েছিলেন ৩৪ ম্যাচে। ১৩৫ ওভার বল করে এই রেকর্ড গড়েছিলেন পাকিস্তানের সাবেক এই অলরাউন্ডার। সাকিব তার চেয়ে ২০৩ বল কম করে রেকর্ডটি নিজের করে নিলেন। বোলিং গড় কিংবা স্ট্রাইকরেটেও আফ্রিদির চেয়ে এগিয়ে সাকিব। ২৩.২৫ বোলিং গড় ও ২০.৭ স্ট্রাইকরেট আফ্রিদির। সাকিবের বোলিং গড় ১৫.৭৫ ও স্ট্রাইকরেট ১৪.৯। এ সংস্করণে সাকিব তিনবার এক ইনিংসে ৪টি করে উইকেট নিলেও আফ্রিদি ম্যাচে ৪ উইকেটের দেখা পেয়েছেন দুবার। ওভার প্রতি রান দেওয়ার গড়ে অবশ্য দুজনের তেমন পার্থক্য নেই। আফ্রিদির ইকোনমি রেট ৬.৬৩। লঙ্কানদের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার চলার সময় পর্যন্ত সাকিবের এ সংস্করণে ইকোনমি রেট ৬.৬৫। একেকটি ম্যাচ যায় আর নতুন সব কীর্তি ধরা দেয় সাকিব আল হাসানের হাতে। এবারের বিশ্বকাপ সাকিব শুরু করেছিলেন অনেকগুলো রেকর্ড সামনে রেখে। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে এক ওভারে জোড়া শিকারের মাধ্যমে এক ঢিলে দুই পাখি মেরেছিলেন এই বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। প্রথমত আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট ও প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১২ হাজার রান ও ৬০০ উইকেট। রবিবার বিশ্বকাপে এককভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হলেন। এমনকি এই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও বাংলাদেশের বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সাকিবকে হাতছানি দিচ্ছে আরও নতুন রেকর্ডের। এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড (১৫) নিজের করে নিতে প্রয়োজন আর মাত্র ৫ উইকেট। এই রেকর্ডটাও নিজের করে নেওয়াটা সাকিবের জন্য এখন কেবলই সময়ের ব্যাপার।
×