ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইআরএল ২য় ইউনিটের মূল কাজ ১১ বছরেও শুরু হয়নি

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৭ অক্টোবর ২০২১

ইআরএল ২য় ইউনিটের মূল কাজ ১১ বছরেও শুরু হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৫৫ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে মাত্র ১৫ লাখ টন পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল)। চাহিদা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি শোধনক্ষমতা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কিন্তু দীর্ঘসূত্রতা এতটাই যে, প্রকল্প গ্রহণের এগারো বছরেও এর কাজ শুরু করা যায়নি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১৯৬৮ সালের মে মাসে উৎপাদন শুরু করা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বার্ষিক শোধনক্ষমতা ১৫ লাখ মেট্রিক টন। প্রায় দুই দশক আগেই এ স্থাপনাটির আয়ুষ্কাল অনেকটাই ফুরিয়েছে। পরিশোধন ক্ষমতা নেমে এসেছে ১২ লাখ টনে। স্থাপনাটি ৫৩ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে আসছে। পুরনো হওয়ার পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন একটি ইউনিট স্থাপন জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু জরুরী এই কাজটি যে জরুরী ভিত্তিতে হচ্ছে না, তা এরইমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে ২০১০ সালে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। ফলে আগের ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির মোট শোধনক্ষমতা উন্নীত হবে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে। এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবায়নে বেশ ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদিকে, বাড়ছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ব্যয়ও। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে ১৮ থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত গড়াতে পারে। কিন্তু এরপরও দেশের চাহিদা বিবেচনায় যত দ্রুত সম্ভব এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। কারণ, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার প্রশ্ন। জানা যায়, প্রকল্প গ্রহণের এগারো বছরে এর ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। গত সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান), যা এখনও অনুমোদিত হয়ে আসেনি। ফলে কবে নাগাদ বাস্তবায়নের কাজ মাঠে গড়াচ্ছে তা এখনও অনিশ্চিত। ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ লোকমান জনকণ্ঠকে জানান, এটি অনেক বড় একটি প্রকল্প। শুধু তা-ই নয়, এ ধরনের কাজে অনেকগুলো দিক বিবেচনায় নিতে হয়। অনেক সতর্কতাও অবলম্বন করতে হয়। তাছাড়া দেড়বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির কারণে ছিল এক ধরনের প্রতিকূলতা। তিনি বলেন, গত প্রায় একমাস ধরে আমরা বিভিন্ন টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করেছি ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেডের সঙ্গে। মোট ৫৩৫ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যারমধ্যে ৩৬০টির সমাধান হয়েছে। মাসখানেকের মধ্যে বাকি ১৭৫টি পয়েন্টের সুরাহা করা হবে। ইস্টার্ন রিফাইনারির এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দ্বিতীয় ইউনিটে থাকবে ২১টি প্রসেসিং ইউনিট এবং ২৮টি ইউটিলিটি ইউনিট। ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান জমা দেয়া হয়েছে, যা অনুমোদন দেবে মন্ত্রণালয়। তবে প্রকল্পের কাজ মাঠ পর্যায়ে কবে শুরু হতে পারে সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তা। ২০১০ সালে গৃহীত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জ্বালানি পরিশোধন ক্ষমতা বার্ষিক ৩০ লাখ মেট্রিক টন বেড়ে চাহিদা ও শোধনের মধ্যে অনেকটাই ভারসাম্য আসবে। কিন্তু এগারো বছর পরও এই ডিপিপি অনুমোদনের অপেক্ষায় কেন, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই। তবে বিলম্বে হলেও এখন কাজে গতি আসবে বলে ধারণা দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করণে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান টেকনিপ। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিপিসির চুক্তি হয় ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি। এর আগে ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রিফাইনারির বিদ্যমান স্থাপনার কাজটিও করেছিল এই প্রতিষ্ঠান। দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়েছে ফরাসী এই কোম্পানির পূর্ব অভিজ্ঞতা। বিপিসির (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন) প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে বেশ কয়েক ধরনের জ্বালানি। এরমধ্যে রয়েছে এলপিজি, ডিজেল, গ্যাসোলিন, গ্রুপ-৩ বেসঅয়েল, জেট এ-১, ফুয়েল অয়েল, বিটুমিন ও সালফার। তন্মধ্যে বাংলাদেশে ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সড়কের কাজে বিপুল চাহিদা বিটুমিনেরও। ইস্টার্ন রিফাইনারির উৎপাদিত বা পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও বিটুমিনের গুণগত মান খুবই উন্নত। সরকারী বেসরকারী সকল সেক্টরই জ্বালানির জন্য এ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে থাকে।
×