ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্র প্রকাশ করা হবে

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৭ অক্টোবর ২০২১

ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্র প্রকাশ করা হবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন পূজাম-পে সহিংসতায় ইন্ধনদাতাদের নাম জানা গেছে। শীঘ্রই তা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। কুমিল্লায় পূজাম-পে সহিংসতার ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রংপুর-নোয়াখালীর ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা। ইন্ধনদাতাদের মধ্যে কেউ কেউ দেশবাসীর কাছে পরিচিত। তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনতে কিছু আইনী জটিলতা আছে। সেটা দেখার জন্য ফাইল আইন মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় এর আইনগত দিক যাচাই-বাছাই করে দেখছে। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান। তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। এ সময় সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী আজাদ মাসুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মোঃ শফিইল্লাহ সুমন, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, কার্যনির্বাহী সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, শাহজাহান মোল্লা, হাসিফ মাহমুদ শাহ, শাহাদাত হোসেন রাকিব, বেলাল হোসেন, মোঃ রুবায়েত হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লায় পূজাম-পে পবিত্র কোরান রাখাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১০টি মামলা হয়েছে। জবানবন্দীতে রংপুর ও নোয়াখালীর ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে গ্রেফতারকৃতরা। তবে আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়ে আপনাদের সামনে নাম প্রকাশ করব। সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে কিনা সেটা এখনই বলতে চাচ্ছি না। নিশ্চিত হয়েই জানাতে চাই। কুমিল্লায় পূজাম-পে সহিংসতার ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, রংপুর-নোয়াখালীর ঘটনায় ইন্ধনদাতাদের নাম বলেছে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা। ইন্ধনদাতাদের নাম শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হয়েছে, অনেকের নাম জানা গেছে। খুব শীঘ্রই কারা এসব ঘটিয়েছে, তা উদঘাটন করা সম্ভব হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সেখানে বিএনপি-জামায়াত আছে কি না সেটা এখনই বলতে চাইছি না। আমরা নিশ্চিত হয়েই আপনাদের জানাতে চাই। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন, এ দেশ সবার। এ দেশে ধর্ম নিয়ে বৈষম্য হবে না। এ দেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ। আমরা সেই আদর্শই ধারণ করে চলেছি। আমি দেখেছি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই যার যার ধর্ম পালন করে আসছেন এখানে। কিন্তু ইদানীং দেখি পূজাম-পে সহিংসতা হচ্ছে। পূজাম-পে কে বা কারা কোরান শরিফ রেখে দিয়ে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, কোরান শরিফ রাখার পর আমরা এ ঘটনা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম, আমাদের পুলিশের সব পর্যায়ের টিম সেখানে পাঠিয়েছিলাম, যাতে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হয়। আমরা দেখলাম, মসজিদের পাশে একটা পুকুর। পুকুরে মাছ চাষ হতো। পুকুরের মাছ চাষী মসজিদের বারান্দায় একটা ক্যামেরা বসিয়েছেন। যেখানে পরিষ্কার দেখা গেছে, কেউ মসজিদ থেকে কোরান নিয়ে হনুমানের গদার স্থানে রেখে গদা নিয়ে বেরিয়ে এলেন। মন্ত্রী বলেন, যখন এ ঘটনা সামনে চলে এলো, তখন তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি, তার নাম প্রকাশ করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিল জুমার নামাজের পর অসুবিধা হতে পারে। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বলেছিলাম, তার আগেই প্রতিমা বিসর্জন দেবেন এবং তারা তা করেছেন। আমাদের নামাজও ঠিকভাবে শেষ হলো। কিন্তু দুই ভাগে বিতর্ক শুরু হলো। একপক্ষ পুলিশের সামনে হইহুল্লা শুরু করল। আরেক পক্ষ পুলিশকে ব্যস্ত রেখে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করল। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনল। সেখানে বেশ কিছু ভাংচুর হয়েছে। ওই সময় পুকুরে ঝাঁপ দেয়ায় একজন মারা গেছেন। এই সহিংসতা সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করতেই। এর মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে একটি মহল। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের অধীনে মূল দুটি বিভাগ রয়েছে- জননিরাপত্তা বিভাগ এবং সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ। এই দুই বিভাগে ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকটি অনুবিভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আরেকটি বিভাগ যুক্ত হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম ওভাবে শুরু করতে পারিনি। এখনও পরিকল্পনা চলছে কিভাবে সুষ্ঠুভাবে এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। হয়তো আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স, সে নির্দেশনা মেনেই আমরা কাজ করছি। আধুনিক বিশ্বে যে সন্ত্রাস তা সাইবারে চলে গেছে, সেখানে মোকাবেলা করতেও পুলিশকে যুগোপযোগী করা হচ্ছে। আমাদের পুলিশকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। আমরা মাদক তৈরি করি না। মাদকের সাপ্লাই কন্ট্রোল করার জন্য বিজিবিকে শক্তিশালী করছি। আমাদের সমুদ্র সীমান্তেও নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। আমাদের আনসার বাহিনীকে শক্তিশালী করছি। আমাদের সব বাহিনীকে যুগোপযোগী করে একটা পর্যায়ে যখন নিয়ে আসছি তখনই দেখি দেশে একটা সহিংসতার ঘটনা নতুন করে দেখছি। আগে জঙ্গির উত্থান দেখেছিলাম সে রকমই আরেকটা উত্থান ঘটাতে এ ধরনের প্রচেষ্টা। আমরা সুরক্ষা সেবায় পাসপোর্টে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছি। আমরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) করেছিলাম। এখন সেটা সবার হাতে। এরপর পাসপোর্টকে আরও আধুনিক করতে সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জার্মানির একটি কোম্পানির মাধ্যমে ই-পাসপোর্টের কাজ চলছে। এশিয়ার অনেক দেশই এ উদ্যোগ নেয়নি। মন্ত্রী বলেন, আমরা কারাগারে আসামিদের ‘ক্রিমিনাল ডাটাবেজ’ তৈরি করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছি। আমরা এ বিষয় কঠোর অবস্থানে রয়েছি। আমরা আগে শুনতাম আগুন নিভে গেলে নাকি ফায়ার সার্ভিস আসে। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক করা হয়েছে। যেকোন দুর্যোগে তারা দ্রুত সেবা দিতে পারে। কিন্তু যদিও ট্রাফিক জ্যাম একটা বাধা সেক্ষেত্রে বিভিন্ন এলাকায় জোন করে দেয়া হয়েছে। দেশের সব উপজেলায়ও ফায়ার স্টেশন করা হয়েছে এ গ্রেডের। আনসারকে আরও শক্তিশালী করা হবে যাতে তারা পুলিশের সহযোগী হিসেবে ভিআইপি নিরাপত্তা দিতে পারে। আমাদের ক্যাপাসিটি বাড়াচ্ছি। কারাগারকে সুন্দর ব্যবস্থায় নিতে যাচ্ছি। কোস্টগার্ডকে আরও আধুনিক করা হচ্ছে। আরও হেভি জাহাজ ও স্পিডবোট কেনা হবে। ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের বর্ডার রোডগুলো সংস্কার হচ্ছে। ওয়াচ টাওয়ার হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যাতে মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আমরা এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাব শীঘ্র। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মন্দিরে কোরান রাখা কোন হিন্দুর কাজ না আমি বলেছি। আমি দায়িত্ব নিয়ে, অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়েছে। যে ছেলেটি করেছে তাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আমরা মনে করছি, কিছুদিনের মধ্যেই এর পেছনের কারণ জানতে পারব। নোয়াখালীর ঘটনায়ও নাম জানা গেছে। এমন নামও শুনবেন যারা আপনাদেরও পরিচিত। রংপুরের ঘটনারও নাম জানা গেছে। আমরা শীঘ্রই জানাব।
×