ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আজ ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই টাইগারদের

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৭ অক্টোবর ২০২১

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আজ ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই টাইগারদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টি২০ বিশ্বকাপের মতো মর্যাদার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা মনোযোগী হয়েছেন কথা বলার দিকে। তাদের সব মনোযোগ যে যুক্তি, তর্কের মাধ্যমে কথায় জেতা, তা ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে। অথচ কথার চেয়ে কাজ বেশি হলেই সমালোচকদের জবাব দেয়া হয়ে যেত। কুসুম কুমারী দাশ লিখেছিলেন,‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলে তেমন ছেলেদেরই প্রয়োজন আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। বিশ্বকাপ মঞ্চে এর আগে দুইবার ইংলিশদের হারিয়েছে বাংলাদেশ। সেটি ওয়ানডে ফরমেট, টি২০ ক্রিকেটে তো পরস্পরের দেখাই হয়নি। মরুর দেশে আবুধাবির আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে এই ফরমেটের একেবারে বিশ্বকাপেই দেখা হচ্ছে আজ বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায়। ওয়ানডে বিশ্বকাপে জেতার স্মৃতিটা জাগিয়ে তুলে টি২০ বিশ্বকাপেও কি জয় ছিনিয়ে আনতে পারবেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরা? সামর্থ্য আছে, তবে কথার চেয়ে ক্রিকেটাররা যদি কাজে তা দেখিয়ে দিতে পারেন মাঠে তাহলেই হয়তো সম্ভব হতে পারে। আর ইংল্যান্ডের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে নিখুঁত বোলিংয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন। চলতি বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশ দল ঠিক ছন্দে নেই। প্রাথমিক রাউন্ডে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে হার দিয়ে শুরু, সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে প্রায় সমশক্তির তারুণ্যে ভরপুর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরাজয়। তাই সমালোচনাটা তীব্র হয়েছে। তবে জবাব দিয়েছেন দলের অভিজ্ঞতম তিন ক্রিকেটার- সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিম। এ নিয়ে ৭ বিশ্বকাপের সবগুলোই খেলছেন তারা। অথচ দলের পারফর্মেন্স যখন অগোছালো, ক্রিকেটাররা যখন ধারাবাহিকতার অভাবে ভুগছেন তখনই এ ৩ সিনিয়র ক্রিকেটার সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে মাঠের খেলার বাইরে মনোযোগ দিয়েছেন। এবার টি২০ বিশ্বকাপে প্রথমবার খেলছেন ৮ ক্রিকেটার। সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের কার্যক্রমেই তারা প্রভাবিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। অবশ্য সাকিব শুরু থেকেই ফর্মে আছেন, মাহমুদুল্লাহ ব্যাট হাতে খারাপ করছেন না এবং মুশফিক সবেমাত্র রানে ফিরেছেন। তবে বোর্ড প্রধান ও ক্রিকেটপ্রেমীদের মন্তব্যের জবাবে তারা যে কথার লড়াই শুরু করেছেন সেটি এক অস্থির পরিবেশের তৈরি করেছে দলের মধ্যে। এর ভেতর স্বাভাবিক পারফর্মেন্স দেখিয়ে ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো বড় রকমের অগ্নিপরীক্ষা হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। ওপেনিং জুটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার টুয়েলভ পর্বের প্রথম ম্যাচে শুরুটা অবশ্য দারুণ ছিল এবং পাওয়ার প্লে থেকেও যথেষ্ট রান এসেছে। তবে টানা ব্যর্থ লিটন দাস এদিনও ১৬ বলে ১৬ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। টি২০ ক্রিকেটের আগ্রাসন তার মনোভাবে ছিল না। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ২টি সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন যা দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তীব্র সমালোচিত এবং টানা ব্যর্থতায় এখন মানসিক চাপে থাকা লিটনকে আজ সাইডবেঞ্চে বসা লাগতে পারে। ব্যাটিং লাইনে খুব বেশি বিকল্প নেই বাংলাদেশ দলে। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী সৌম্য সরকার আছেন ওপেনিংয়ের একমাত্র বিকল্প। লিটন বাইরে গেলে সৌম্যকে যদি না আনা হয়, সেক্ষেত্রে নাইম শেখের সঙ্গে অন্য কাউকে পরীক্ষায় নামাতে হবে আজ। পেস আক্রমণে এখন পর্যন্ত চলতি আসরে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি মুস্তাফিজুর রহমান। কিছু উইকেট পেলেও স্লোয়ার, কাটারের জাদু দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন ডেথ ওভারে। লঙ্কানদের কাছে হারের পর আজ দ্বিতীয় ম্যাচে একাধিক পরিবর্তন আসবে তা নিশ্চিতই। সৌম্য দলে না আসলে শামীম হোসেন পাটোয়ারির বিশ্বকাপ অভিষেক হতে পারে। সেক্ষেত্রে নাইমের সঙ্গে শেখ মেহেদি বা আফিফ হোসেনকে দেখা যেতে পারে ওপেনিংয়ে। এমনকি সাকিবও হতে পারেন ওপেনার। ফর্মে নেই নুরুল হাসান সোহানও। আশার কথা মুশফিক ফর্মে ফিরে ১১ টি২০ ইনিংস পর আরেকটি অর্ধশতক পেয়েছেন। বাকিরা নিজেদের ফিরে পেলেই ভাল হবে দলের জন্য। তবে ইংলিশদের বোলিং লাইনে লেগস্পিনার আদিল রশিদ ও অফস্পিন অলরাউন্ডার মঈন আলী বড় চ্যালেঞ্জ হবেন আত্মবিশ্বাসের অভাবে থাকা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য। আর বাংলাদেশী বোলারদের জন্য উল্টোটা, তাদের চ্যালেঞ্জ হবে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে ভাল করা। জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, ডেভিড মালান, লিয়াম লিভিংস্টোনরা বর্তমান বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। কিন্তু বাংলাদেশের বোলাররা লঙ্কানদের বিপক্ষে যে অগোছালো বোলিং করেছেন, তাতে করে কঠিন চ্যালেঞ্জেই থাকতে হবে আজ। তাই গিবসন বলেছেন,‘আমরা যদি তাদের চ্যালেঞ্জ জানাতে চাই এবং শেষ পর্যন্ত খেলাটি জিততে চাই তবে আমাদের সেরা খেলাটা থাকতে হবে। আমরা জানি যে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ খুব শক্তিশালী। তাদের বিপক্ষে মূল চাবিকাঠি হলো নিখুঁত বোলিং করে নিজেদেরকে রক্ষা করা।’ এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোন টি২০ খেলেনি বাংলাদেশ দল। অথচ এটি হতে চলেছে ১৩৬৮তম আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ। সে কারণে বিশ্বকাপ মঞ্চেও প্রথমবার সাক্ষাত হতে চলেছে দু’দলের। অথচ এটি সপ্তম বিশ্বকাপ। আবুধাবির এই মাঠে বাংলাদেশ দল ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ খেলেছে। ওয়ানডে ফরমেটের ৩ ম্যাচে দুইবারই জয় পেয়েছে। তবে টি২০ খেলা হয়নি। আর ইংলিশরা এই মাঠে ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত খেলেছে ৪ ওয়ানডে যার ৩টিই জিতেছে। ২০১২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি২০ খেলে জিতেছে ৫ রানে। তাই মাঠটির সঙ্গে বাংলাদেশের চেয়ে ইংলিশদের পরিচয়টাই বেশি আছে। এদিক থেকে যেমন বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ইংলিশরা তেমনি র‌্যাঙ্কিংয়ে বর্তমান বিশ্বের এক নম্বর ইয়ন মরগানরা। গত আসরের রানার্সআপরা শুধু বোলিং শক্তি দিয়েই বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বিপর্যস্ত করে প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে। তাই মাঠের বাইরের ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত ও ব্যর্থতায় ন্যুব্জ বাংলাদেশের বিপক্ষে হট ফেবারিট ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ দলের একমাত্র ইতিবাচক দিক কিংবা অনুপ্রেরণার বিষয় হতে পারে ২০১১ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়। ওয়ানডের সেই স্মৃতি টি২০ ক্রিকেটে আনতে পারলে হয়তো সাফল্য ধরা দিতেও পারে। হেরে গেলে সেমিফাইনালে ওঠার যে উচ্চাকাক্সক্ষা দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা, তা অনেকখানিই ভেস্তে যাবে।
×