ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিমত ॥ সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে চাই সম্পর্কের সুস্থতা

প্রকাশিত: ২১:১৯, ২৭ অক্টোবর ২০২১

অভিমত ॥ সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে চাই সম্পর্কের সুস্থতা

মানবজীবন অনির্দিষ্ট পরিসীমায় আবদ্ধ। কোনটাই মানুষ আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ৎবংবধৎপয পড়াতে বলেছিলেন যে, সামাজিক কোন বিষয় একেবারে ভুল বলতে পারবে না। কারণ, তার পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতেই পারে যা আমাদের ভেবে, নিরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে। এরপর আসি সম্পর্কের বিষয়ে। সম্পর্ক যাই হোক যার সঙ্গেই হোক, তার নির্দিষ্ট একটি বা বহু উদ্দেশ্য রয়েছে। এই উদ্দেশ্য তখনই সফল হবে যখন পারস্পরিক উদ্দেশ্য এক হবে বা সব থেকে ভাল উদ্দেশ্যকে দুজন মানুষ সমর্থন করে এগিয়ে যাবে। আর এই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পথে যদি কেউ ভুল করে বা ভুল বোঝে, তাহলে একজন আরেকজনকে বুঝিয়ে তাদের আসল উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দেবে, ভুল সংশোধনের চেষ্টা করবে। এক্ষেত্রে ভুলকে অবশ্যই বাড়তে দেয়া যাবে না। আসল বিষয় হলো সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখা। মানুষ পরিবর্তনশীল। সে জানে যে, আজ সে যার সঙ্গে সম্পর্কে জড়াচ্ছে, তার পরিবর্তন হতেই পারে বা তাকে ছেড়ে উদ্দেশ্য পরিবর্তন করতেই পারে। তাও সে সম্পর্ক চায়, বিশ্বাস গড়ে তুলতে চায়, ভালবাসতেও চায়। যখন সে তা পুরোপুরি পেরে ওঠে, তখন সে তাই বিশ্বাস করে আর বলে তার সম্পর্ক অটল। কারণ, সে নিশ্চিত হয়ে যায় যে তার সম্পর্কে পারস্পরিক বিশ্বাস রয়েছে। এত কথা কোনভাবেই আবেগী মনোভাবে নয় বরং রাষ্ট্রীয় উৎপাদনশীলতার কথা ভেবেই বলছিলাম। কারণ পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র এগুলোর প্রতিটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে এরিস্টটল ছাড়াও বহু বিজ্ঞানী বলে গিয়েছেন নানা মতবাদ। এই তিনটে বিষয় একেবারেই গদবাঁধা নয় বরং একেকটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিষ্ঠান। পরিবার কখনই সম্পর্কের বাইরে গিয়ে নয়। জীবনকে আমরা পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় এসব যত ধাপেই ভাবি না কেন এর উদ্দেশ্য একই কোথাও না কোথাও। কারণ, ব্যক্তি হিসেবে আমাদের যা জীবনের উদ্দেশ্য, তাই সমাজ এবং রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়েই বেশির ভাগ মানুষ জীবনযাপন করেন। সম্পর্ক শব্দটার সঙ্গে কোথাও বিরোধিতা শব্দটাকে বোধ হয় মেলানো যায় না। আর ভুল হলো সম্পর্কের সৌন্দর্য। সম্পর্কে দরকার সামঞ্জস্যতা, মানিয়ে নেয়া (ভালর সঙ্গে)। যে ভাল করছে, তার ভালটাকে উৎসাহ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বিশ্বাস মজবুত করতে হবে। ভালকে অন্য কোন তুচ্ছ বা ছোট শব্দ দিয়ে অসম্মান করাটা সম্পর্কের উদ্দেশ্যকে অসফল রাখার জন্য কম যথেষ্ট নয়। আমাদের দেশে বিয়ে ভাঙ্গা নিয়ে বিচিত্র লোকের বিচিত্র কথা। কিন্তু সহজে মেনে চলার মতো টোটকা খুব কম লোকই বলেন। ধর্মীয় ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেন, স্বামীকে মানে না বলেই তো যত অশান্তি। কেউ বলেন, পুঁজিবাদী সমাজই এর জন্য দায়ী। কারোর মতামতকেই অশ্রদ্ধা না করেই আমি বলতে চাই যে, এসব কথা সমাজকে নতুন করে গড়বে না। বরং এমন কিছু শেখান বা বলুন যা বাস্তবধর্মী এবং মানুষ সহজে গ্রহণ করবে। জীবনে সকলেরই একান্তই ব্যক্তিগত কিছু কথা থাকে, পরিস্থিতি থাকে। সেগুলো আমরা অপরপাশের লোকেরা বুঝি না। আর বুঝলেও সবসময় করার কিছু থাকে না। কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে যদি আমরা নিজের দিকে তাকিয়ে কথা বলি? ছোটবেলা থেকে নিজের জীবনের ঘটনাগুলো মনে করি? আজকাল আত্মসমালোচনার কথা মনে করিয়ে দিতে হয়, কোথাও কোথাও কোর্সও চালু হয়েছে এ সংক্রান্ত। এটা খুব ভাল দিক বটে। একইসঙ্গে এটি সমাজের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বর্তমান টানাপোড়েনকেও ইঙ্গিত করে। তাই পড়ড়ঢ়বৎধঃরড়হ দরকার। ঝুঁকি এবং সুযোগ সুবিধাকে যাতে জোটবেঁধে লালন করা যায়। মানবজীবনই হয়ত এমন এক সুন্দর জায়গা, যেখানে মানুষ নিজেই পূর্বানুমানের অযোগ্য বিষয়কে অনুমানের যোগ্য করে নেয়। ওটাকেই তারপর তার সম্পর্কের সংস্কৃতি বানিয়ে ফেলে। সব সম্পর্কের উদ্দেশ্য পাশে থাকা, সঙ্গে থাকা হলেও পৎরঃবৎরধ আলাদা। কারণ, একেকজনের জীবনের বাস্তবতা একেকরকম। কারও বাস্তব কেউ ভোগ করে না এবং সামাল দেয় না। তাই সম্পর্কগুলো তুলনাহীন থাকাই ভাল। কারণ, এটা সামাজিক বিষয়বস্তু (ংড়পরধষ ভধপঃ), প্রতিযোগিতার বাজার (সধৎশবঃ পড়সঢ়বঃরঃরড়হ) নয়। হ্যাঁ, তবে ভাল কিছু দেখে মানুষ ভাল শিখতে পারে, মানে পুনর্বিনিয়োগ করতে পারে। ঝড়পরধষ ভধপঃ ংঁনংঃরঃঁঃব এবং পড়সঢ়ষবসবহঃ দুটোই হতে পারে। যেমন, একজন আরেকজনের হয়ে ঢ়ৎড়ীু দেয়া, সমস্যায় পাশে থাকা। একে অন্যের প্রতি যতœশীল হতে হবে। সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য দরকার সহনশীলতা, যাতে নতুনত্বকে বরণ করে নেয়া যায়। সবটাতে ভালর দিকটা খুঁজে বের করতে হবে। যাতে সম্পর্ক পষবধহ ধরৎ এবং ংধভব ংঃৎববঃ এর মতো হয়। যার জন্য পড়ষষবপঃরাব বভভড়ৎঃ দরকার, নড়হফরহম দরকার, দৃঢ় মনোবল দরকার। আমরা যা করছি, তাতে লাভ বা ক্ষতি কি হবে, মাথায় রেখে করাই বোধ হয় ভাল। পৃথিবীতে মানুষ এসেছেই সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, তাই সম্পর্কই হোক সব থেকে বড়। মানুষে মানুষে সম্পর্কের গুরুত্ব বাড়ুক। ভাগ্যর ওপরে কিছুই নেই। তাই পড়সঢ়বঃরঃরড়হ আর ংবষভরংযহবংং এর কবলে সম্পর্কগুলো না পড়ুক। তবে সবাই বিশ্বাস, ভরসার মূল্য দেয় না। যারা এমনটি করে তাদের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখাই শ্রেয়। অবশ্য আমাদের নিজেদেরও ভুল নেই বা হবে না এমন নয়। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। ডগলাস ম্যাকগ্রেগর পাঁচটি চাহিদার সোপান দিয়েছেন। আমার মতে তার পঞ্চম নম্বরটি- ংবষভ ধপঃঁধষরুধঃরড়হ যা আমরা জীবনের শুরু থেকে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে পেতে চাই। যখন সম্পর্ককে ঘিরে পরিবার গড়ে ওঠে, সেখান থেকেই সমাজ পরিবর্তনের ডাক ওঠে। বিভিন্ন পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে নাড়া দেয় রাষ্ট্রকে। সুস্থ সংস্কৃতি গড়তে সম্পর্কে সুস্থতা আনতে হবে। কারণ জীবন নিজেই একটি বড়সড় প্রকল্প। এর পলিসি যেমন হবে, কার্যক্রম প্রায় তেমনই হবে। অগ্রগতি? সে তো আমাদের জীবনই বলে দেবে। লেখক : শিক্ষার্থী বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়
×