ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনে দুই শতাধিক অবৈধ করাতকল

প্রকাশিত: ১৫:৫২, ২৬ অক্টোবর ২০২১

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সংরক্ষিত বনে দুই শতাধিক অবৈধ করাতকল

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সংরক্ষিত বন এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ করাতকল। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের তালিকা অনুযায়ী সংরক্ষিত বনে করাতকলের সংখ্যা ১০১টি। তবে স্থানীয়দের দাবি অবৈধ করাতকলের সংখ্যা দুই শতাধিক। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও কাঠ ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় এসব করাতকল পরিচালিত হয়। বনের ভিতরে অবৈধ করাতকল থাকার কারণে সংঘবদ্ধ কাঠ চোরেরা সামাজিক বনায়নের গাছ রাতের আধারে কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। অথচ দেখার কেউ নেই। উপজেলা বন কমিটির সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান অবৈধ করাতকলের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযানের দাবি জানান। স্থানীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায় রয়েছে বটতলী, ঝড়কা, চৌরাসা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী এই ৬টি বিট। এই রেঞ্জের আওতাধীন বন বিভাগের পরিমান ৮৮.৪৫ বর্গ কিলোমিটার। আর ৪৯টি মৌজায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৯ হাজার ১০৬ একর। আর বিশাল এই বনভূমিতে রয়েছে শাল, সেগুন, গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামাজিক বনায়নের গাছ। বন আইনে সংরক্ষিত বন এলাকার ১০ কি.মি মধ্যে করাতকল স্থাপনের বিধি নিষেধ রয়েছে। কিন্তু বিধি নিষেধ অমান্য করে সংরক্ষিত শাল গজারির বন ঘেঁষে, সামাজিক বনায়নের ভেতর অবৈধ করাত কল স্থাপন করা হয়েছে। এসব করাতকলে অবাধে কাটা হচ্ছে হয়েছে শাল, গজারিসহ সামাজিক বনায়নের কাঠ। স্থানীয় প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়েই চলে এসব করাত কল। বছরের পর বছর এসব অবৈধ করাতকল পরিচালিত হলেও স্থানীয় প্রশাসনের কোন অভিযান না থাকায় সংরক্ষিত বন এলাকা বিরান ভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। সংরক্ষিত বন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধলাপাড়া, সাগরদীঘি, দেওপাড়া, গারোবাজার, মাকরাই, ছনখোলা, বটতলা, নলমা, কুশারিয়া, পেচারআটা, মাইধারচালা, কাজলা, দেওজানা, চাপড়ি, মুন্সিগঞ্জ, মানিকপুর, বোয়ালীহাটবাড়ী, শহরগোপিনপুর, জোড়দিঘী, মুরাইদ, লক্ষিন্দর, সিংহেরচালা, শিবেরপাড়া, মালেঙ্গা, মোমিনপুর, বগা ও ফকিরচালা এলাকায় বেশীর ভাগ অবৈধ করাতকলগুলো স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, বনের ভিতরে স্থাপিত এসব করাতকলের প্রায় অধিকাংশের মালিক কাঠ ব্যবসায়ীরা। আর কাঠ চোরদের সাথে করাতকল মালিকদের রয়েছে দহরম মহরম সর্ম্পক। সংঘবদ্ধ কাঠ চোরদের কারো কারো করাত কল রয়েছে আবার কেউ অংশীদার। অর্থাৎ করাতকল মালিক ও কাঠ চোররা মিলেমিশে সংরক্ষিত বনের গাছ নিধনের কাজে নিয়োজিত। অবৈধ করাতকলের বিষয়ে পৌর করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হালিম মিয়া বলেন, ঘাটাইল উপজেলায় মোট করাতকল রয়েছে ২০৩টি এর মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ২৮টি করাতকলের। অবৈধ্য করাতকলের কারণে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অপরদিকে নির্বিচারে বনের গাছ কাটার কারণে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। অবৈধ করাতকলে উচ্ছেদের জন্য দ্রুত অভিযানের দাবি জানান তিনি। ঘাটাইল উপজেলা চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, বনের ভিতর স্থাপিত অবৈধ করাতকল বন্ধ করার বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্গলা কমিটি, উপজেলা বন কমিটি ও উপজেলা পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। অতিদ্রুত অবৈধ করাতকল উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ধলাপাড়া রেঞ্জের আওতায় ১০১টি অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব অবৈধ করাতকলের তালিকা স্থানীয় প্রশাসন ও উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে প্রদান করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×