ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুরান ঢাকা থেকে আবু মুসা গ্রেফতার

মেডিক্যালে চান্স পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে প্রতারণা

প্রকাশিত: ২৩:৫৯, ২৬ অক্টোবর ২০২১

মেডিক্যালে চান্স পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা সামনে রেখে স্বাস্থ্য অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তা বনে যেত আবু মুসা আনসারী। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা আসলে হয়ে যেত বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) উর্ধতন কর্মকর্তা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলেই ফেসবুকে উপাচার্যের সঙ্গে ছবি সাঁটিয়ে দিত। নিজেকে সংশ্লিষ্ট সেক্টরের উর্ধতন কর্মকর্তা পরিচয় দিতেই এমনটি করত মুসা। আর এভাবেই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের কাছে বিশ্বস্ততা অর্জন করে হাতিয়ে নিত মোটা অঙ্কের টাকা। এককভাবে একাধিক ফেসবুক আইডি খুলে দীর্ঘ দুই বছর ধরে অসংখ্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল মুসা। অবশেষে প্রতারণার শিকার এক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের দায়ের করা মামলায় রবিবার রাতে রাজধানীর গে-ারিয়ার নারিন্দা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগ। তার কাছ থেকে ইউজিসির ভুয়া ২টি পরিচয়পত্র, একাধিক ভুয়া এনআইডি কার্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্রের কপি জব্দ করা হয়। ডিবি বলছে, অসংখ্য শিক্ষার্থী প্রতারক মুসার প্রতারণার শিকার হয়েছে। মুসা প্রতারণার আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট, মার্কশীট কিংবা এডমিট কার্ড আয়ত্তে নিয়ে নিত। পরবর্তীতে কোন শিক্ষার্থী চুক্তি অনুযায়ী টাকা দিতে না চাইলে মূল্যবান ওইসব কাগজপত্র ফেরত না দেয়ার হুমকি দিত। ডিবি ওয়ারী বিভাগ জানায়, গত ১০ অক্টোবর এক ছাত্রী ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং তার ফল খারাপ হয়। পরবর্তীতে ১২ অক্টোবর গ্রেফতারকৃত মুসার সঙ্গে ওই ছাত্রীর মায়ের ফেসবুকে পরিচয় হয়। মুসা তখন ছাত্রীর মায়ের কাছে নিজেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেয় এবং ছাত্রীর রোল নম্বর নিয়ে তাৎক্ষণিক চেক করে জানায়, তার মেয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট ভালই হয়েছে। সরকারীভাবে চান্স পেয়েছে কিন্তু উর্ধতন কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে তাকে চান্স না দিয়ে অন্য কাউকে দেয়া হয়েছে। তিনি যদি মেয়েকে ডেন্টালে চান্স পাওয়াতে চান তাহলে এখন দশ লাখ টাকা দিতে হবে। ভিকটিমের কাছে এত টাকা না থাকায় মুসা বলে, এখন দুই লাখ টাকা দিন বাকি টাকা ডেন্টালে ভর্তির পরে দিলে হবে। অভিযুক্তের কথা বিশ্বাস না করায় তখন ভিকটিমের ইমোতে ইউজিসির একজন কর্মকর্তার পরিচয়পত্র পাঠায়। সেই সঙ্গে ভিকটিমের মনে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মোবাইলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে ফেক চ্যাটিং স্ক্রিনশট পাঠায়। এতে ভিকটিম কিছুটা আশ্বস্ত হলে মুসার সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে দেখা করে দুই লাখ টাকা প্রদান করেন। টাকা দেয়ার পরের দিন মুসাকে ফোন দিয়ে রেজাল্টের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, আজকের মধ্যেই উপরের মহলে আরও এক লাখ টাকা দিতে হবে নতুবা তার মেয়ের রেজাল্ট আগেরটাই বলবত থাকবে। তখন মুসার কথাবার্তা ভিকটিমের সন্দেহজনক মনে হলে তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অনুমান করেন। অপরদিকে মুসা ভিকটিমের কাছে টাকার জন্য বারবার ফোন দিতে থাকে এবং মেসেঞ্জারে ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে বলে, চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলে ভিকটিমের মেয়েকে কোথাও ভর্তি হতে দিবে না। এ ঘটনায় গত শনিবার যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা হলে মুসাকে গ্রেফতার করে ডিবি। গ্রেফতারকৃত মুসা অনেক প্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে মুসা জানায়, সে নিজেই একজন শিক্ষার্থী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এ্যান্ড টেলিভিশন ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তবে প্রযুক্তি সম্পর্কে তার ভাল ধারণা রয়েছে। রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক ফেসবুক আইডিও। কোন আইডির প্রোফাইলে ছাত্রলীগ নেতা, কোনটায় আওয়ামী লীগ নেতা, ইউজিসি ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উর্ধতন কর্মকর্তার পরিচয় লিখে রাখত। ঢাবির উপাচার্যের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের ভুয়া ছবি পোস্ট করত। তার গ্রামের বাড়ি বাকেরগঞ্জ। সে মাদ্রাসা থেকে ফাজিল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হয়। ডিবির ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, গত দুই বছরে অতিবাহিত হওয়া সব ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুসা প্রতারণা করে আসছিল। তার টার্গেট ছিল গ্রামের কিংবা গ্রাম থেকে ঢাকায় কোচিং করতে আসা শিক্ষার্থীরা। এখন পর্যন্ত তার প্রতারণার শিকার সাত শিক্ষার্থীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকার মতো আত্মসাত করেছে। তবে ভুক্তভোগীর সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হবে। মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, মুসা ফিক্সড চ্যাট তৈরি করত। অর্থাৎ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের সঙ্গে নিজের প্রশংসামূলক চ্যাট করত এবং তা শিক্ষার্থীদের পাঠাত। কোন শিক্ষার্থী চুক্তি অনুযায়ী অর্থ না দিলে তার মূল্যবান কাগজপত্র আটকে রাখত এবং তাকে কোথাও ভর্তি হতে দিবে না বলে হুমকি দিত। তার প্রতারণার বিষয়ে জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
×