ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০২১

১৫ হাজার গ্রাহকের টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা ॥ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘নিলীমা বহুমুখী সমবায় সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। সোমবার সকালে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কদমতলী এলাকায় সমিতির প্রধান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে কয়েক শ’ গ্রাহক। এ ঘটনায় নিলীমা বহুমুখী সমবায় সমিতির এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে গ্রাহকরা। ভুক্তভোগীরা জানায়, কদমতলী এলাকার মোমিন নামে এক ব্যক্তি কয়েক বছর আগে নিলীমা বহুমুখী সমবায় সমিতি চালু করে। গত কয়েক বছরে এই প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার। সোমবার সকালে অনেক গ্রাহকের পাওনা টাকা দেয়ার তারিখ ছিল। সকালে গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা নিতে এসে দেখে অফিস বন্ধ। এমনকি প্রতিষ্ঠানের ওপরের তলায় মোমিনের বাসায়ও তালা বন্ধ দেখা যায়। প্রতিষ্ঠান ও বাসায় কাউকে না পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ সময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। গ্রাহকরা জানায়, মাসিক ৬শ’ টাকা করে সঞ্চয় করলে ২ বছর শেষে অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। সেই টাকা আত্মসাত করে রবিবার রাতে কার্যালয়ে তালা দিয়ে পালিয়েছে প্রতারক মোমিন। রহিমা নামে এক গ্রাহক বলেন, ‘এখানে আমি, মেয়ে, ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে জামাই, নাতিসহ পরিবারের ২৮ জন সদস্য টাকা জমিয়েছি। এর মধ্যে ৫ জনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় সোমবার তাদের টাকা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে এসে দেখি কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। আমাদের পরিবারের প্রায় ১০ লাখ টাকা জমা ছিল।’ সালেহা বেগম নামে এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এখানে টাকা জমিয়েছি। প্রায় ১ লাখ টাকা আমার পাওনা। আজকে টাকা দেয়ার কথা ছিল। এসে দেখি তালা বন্ধ। পরে জানতে পারি রবিবার গভীর রাতে প্রতিষ্ঠানের মালিক আমাদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সুরুজ নামে আরেক যুবক বলেন, প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহকের ২ বছরে ৩৬ হাজার করে টাকা সংগ্রহ করলে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা নিয়ে মোমিন উধাও। এদিকে ঘটনার পর পরই গ্রাহকরা সীমা নামে সমিতির এক কর্মীকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। আটক সীমা জানায়, প্রায় ১৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে আর প্রতি বইয়ে ১৬ হাজার করে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট কত তা আমি সঠিকভাবে বলতে পারব না। তিনি আরও জানান, গত সপ্তাহে আমাকে অফিস থেকে কাজ করতে মানা করে দেয়। এরপর থেকে আমি অফিসে আসি না। আজ হঠাৎ কিছু গ্রাহক আমার বাসায় এসে বলে অফিস বন্ধ কেন, এ কথা বলে আমাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে। এসে দেখি এই অবস্থা, মোমিন ভাই কোথায় আছে বা টাকা-পয়সা কি করেছে তা আমি জানি না। এ ঘটনার ব্যাপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, এসব ক্ষেত্রে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। কোথায় টাকা রাখছি, তার ব্যাকগ্রাউন্ড কি, অনুমোদন আছে কিনা? এগুলোা যাচাই করেই টাকা জমা দেয়া উচিত। তবে উপজেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক মোঃ রফিকের মাধ্যমে জানতে পারি, এই প্রতিষ্ঠানটি উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। রেজিঃ নম্বর ৩৪৭।
×