ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

হিমাগারে রাখা আলুর লোকসান পোষাতে চান কৃষক

উত্তরে আগাম জাতের আলুর আবাদ শুরু, বাড়বে উৎপাদন

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২৬ অক্টোবর ২০২১

উত্তরে আগাম জাতের আলুর আবাদ শুরু, বাড়বে উৎপাদন

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ হিমাগারে রাখা আলুর লোকসান পুষিয়ে নিতে কৃষক আগাম জাতের আলু আবাদ শুরু করেছেন। বগুড়া অঞ্চলে আগাম আলুর আবাদকে বলা হয় ‘আগুর’। মাঠের আমন ধান পেকে কাটার উপযোগী হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের কৃষক ‘আগুর আলু’ এবং সবজি আবাদ শুরু করেছেন। প্রকৃত আলুর চাষ শুরু হবে অগ্রহায়ণের শুরুতে নবান্নের আমন মাড়াই-কাটাইয়ের পরই। অতীতে আলুর আবাদ প্রধান এলাকা ছিল বৃহত্তর বগুড়া। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলায় আলু ফলছে। কৃষির সার্বিক উন্নয়নে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় চারটি (বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর) আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর স্থাপিত হয়েছে। এবারের আলু মৌসুমে চারটি আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় তিন লাখ ৩১ হাজার ৭০৭ হেক্টরে আলু আবাদের টার্গেট করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন। বগুড়ায় আলু আবাদ সবচেয়ে বেশি হয় শিবগঞ্জ, সোনাতলা, গাবতলি ও নন্দীগ্রাম উপজেলায়। শিবগঞ্জের গুজিয়া গ্রামের কৃষক সোলায়মান জানালেন গত বছর তিন বিঘা জমিতে আলু আবাদ করে লাভ করেছিলেন। কিছু আলু হিমাগারের রেখেছিলেন। হিমাগার থেকে আলু বের করার পর লোকসান গুনেছেন। তার অবস্থা দেখে অন্য কৃষক হিমাগার থেকে আলু বের করেনি। লোকসান গোনা কৃষকরা ‘আগুর আলু’ আবাদ শুরু করেছে। সোলায়মান জানালেন বোরো রোপণের আগে এই আলু তুলতে পারলে লোকসান পুষিয়ে নেয়া যাবে। মৌসুমের আলু আবাদ তো আছেই। তার পথ অনুসরণ করছেন অনেক কৃষক। মোকামতলার এক হিমাগার মালিক জানালেন, হিমাগারে রাখা অর্ধেক আলু কৃষক উত্তোলন করেনি। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দুলাল হোসেন জানান, গত মৌসুমে বগুড়ায় টার্গেটের চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ করে ১৪ লাখ মে. টন উৎপাদিত হয়। বিক্রির পর কৃষক পরবর্তী মৌসুমের আগে বাজারে আলু ছাড়ার জন্য ৩৬টি হিমাগারে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন আলু সংরক্ষণ করে। এক সূত্র জানায়, এই আলুর অর্ধেক দাম ফেরত পাননি কৃষক। লাভের আশায় মৌসুমের আগে আগুর আলু আবাদ শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় আলু আবাদের টার্গেট করা হয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমি। উৎপাদন আশা করা হয়েছে ১৩ লাখ মে.টন। আগাম আলুর আবাদ করা হয়েছে অন্তত ১২ হাজার হেক্টরে। কৃষকরা আশা করছেন হিমাগারের আলুর লোকসান পুষিয়ে দেবে আগুর আলু। এই অঞ্চলে দেশী পাকরি গ্রানুলা কার্ডিনালসহ কয়েকটি জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। আগুর আবাদের বেশিরভাগই বগুড়ার সুস্বাদের আঠালো হাগরাই আলু। এই আলুর রং লাল ও আকারে ছোট। বগুড়া কৃষি অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আলু আবাদ হয় বগুড়া ও জয়পুরহাটে। এই দুই জেলায় এবারের টার্গেট প্রায় এক লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হবে অন্তত ২৪ লাখ মে.টন। আলু আবাদ সবচেয়ে কম হয় পাবনায়। এবারের টার্গেট ৯৮০ হেক্টর জমিতে ২১ হাজার ৫৬০ মে.টন উৎপাদন। রাজশাহী রংপুর ও দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে আলু আবাদ বেশি হয় দিনাজপুরে। এদিকে আলুর আবাদে কৃষক যন্ত্রে আলু আবাদের বেড় তৈরি করছে। অতীতে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে সমান্তরাল ঢিবির মতো করে বীজ বপনের বেড তৈরি হতো। বর্তমানে যন্ত্রই মাটি খুঁড়ে জমির নির্দিষ্ট স্থানে সমান্তরাল বেড তৈরি করে। বীজ বোনার মেশিনে সহজে আলু বীজ বপন করা যায়। অনেক কৃষক যন্ত্রে বেড তৈরি করে ম্যানুয়ালি হাতে আলু বীজ বপন করেন।
×