ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছায়ানটের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ছায়ানটের প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্মের নামে চলছে অধর্ম। মৌলবাদের বিষাক্ত নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ধর্মের বিভাজন টেনে রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থিরতার পথে ঠেলে দিচ্ছে অপশক্তি। সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। কুমিল্লা, নোয়াখালী, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা হয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। সেই সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে ভিন্ন ভাষায় প্রতিবাদ জানালো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে ও কথনে সাজানো ছিল সে আয়োজন। ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াও’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সোমবার রাতে সম্প্রচারিত হয় ছায়ানটের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে। ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুনের কথনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর সাম্যের কবি কাজী নজরুলের বাণীকে কণ্ঠে তুলে নেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত রায়। পাঠ করেন ‘তোমার বাণীরে করিনি গ্রহণ ক্ষমা কর হজরত’ শীর্ষক কবিতা। অস্থির সময়ে দৃঢ় সংকল্পের প্রত্যয়ে লাইসা আহমদ লিসা গেয়ে শোনানÑ আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে/আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে...। রবীন্দ্রনাথের বাণীকে আশ্রয় করে আব্দুল ওয়াদুদ পরিবেশিত গানের শিরোনাম ছিল ‘আর নহে, আর নয়/আমি করি নে আর ভয়’। এছাড়াও একক কণ্ঠের পরিবেশনায় গান শোনান খায়রুল আনাম শাকিল। একক গানের মাঝে আসে সম্মেলক সঙ্গীতের উপস্থাপনা। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘আমরা মিলেছি আজ মায়ের ডাকে’। এরপর ‘ধর্মমোহ’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন সুমনা বিশ্বাস। ধর্মের ভেদরেখা ছাপিয়ে সম্প্রীতির বারতায় সুমন মজুমদার পরিবেশন করেন ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মুসলমান’ শিরোনামের সঙ্গীত। ‘পুব-পশ্চিম’ শিরোনামের কবিতা থেকে পাঠ করেন জহিরুল হক খান। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক সমাজের আকাক্সক্ষায় চন্দনা মজুমদার শুনিয়েছেন ‘এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে’ শীর্ষক সঙ্গীত। সম্মেলক সঙ্গীতের পরিবেশনায় বাঙালিত্বের জয়গান গেয়ে শিল্পীরা গেয়ে শোনায়Ñ যশোর, খুলনা, বগুড়া, পাবনা, ঢাকা, বরিশাল, নোয়াখালী/তারা হিন্দু নয়, মুসলিম নয়, তারা শুধু বাঙালী...। এছাড়াও সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু’ ও ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ’ শিরোমের গান। জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। ‘শেখ রাসেলের গল্প’ ॥ গত ১৮ অক্টোবর ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন। এ বছরই প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে উদ্যাপিত হয়েছে দিবসটি। গান কবিতাসহ নানা আয়োজনে শিশু রাসেলে নিবেদিত হয়েছে অফুরান ভালবাসা। সেই ¯্রােতধারায় সোমবার বিকেলে ‘শেখ রাসেলের উদ্যাপন উপলক্ষে ‘শেখ রাসেলের গল্প’ শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনাসভার আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। সেমিনারে বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে শিশু রাসেলের সহজ-সরল জীবনের কথা। উচ্চারিত হয় রাসেলের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেদনার্ত অনুভূতির কথা। প্রকাশিত হয় রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাবনার কথা। সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. জেবউননেছা। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. জেবউননেছা বলেন, ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকার ধানম-ির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন শেখ রাসেল। ‘রাসেল’ নামের আরবি অর্থ ‘প্রশংসনীয় পথ প্রদর্শক’। বড় বোন শেখ হাসিনার হাত ধরেই হাঁটতে শিখেছিল সে। বড় বোনকে ডাকতো ‘হাসুপা’ বলে। অত্যন্ত সহজ সরল ও মিশুক প্রকৃতির ছিল শেখ রাসেল। তার ইচ্ছে ছিল বড় হয়ে সামরিক কর্মকর্তা হবে। দুই বোন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘সবকিছু নিয়ে আমার বাবা মা ও ছোট্ট ভাই রাসেলকে ফিরিয়ে দিলে আমরা আর কিছু চাই না। আমরা সব দিয়ে দিবো।’ ৪৬ বছর ধরে দুই বোন রাসেলের জন্য চোখের পানি ঝরিয়ে যাচ্ছেন। দিন আসে দিন যায়, রাসেল আসে না। হাসুপা বলে ডাকে না। চকচকে এক জোড়া চোখে শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে হয়তো হতে পারত পথনির্দেশক। তবে শেখ রাসেল হারিয়ে গেলেও ফিরে আসবে শত কোটি শিশুর মাঝে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোঃ আবুল মনসুর বলেন, ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনকে শেখ রাসেল দিবস পালন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যক্তি রাসেলের গুণাবলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে পৌঁছে দেয়া। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেতনা তাঁর ভেতরে ছেলেবেলা থেকেই তৈরি হয়েছিল। অন্য শিশু থেকে ভিন্নত বৈশিষ্ট্যের। রাসেলের মধ্যে শিশু নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য খেয়াল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শিশু রাসেলের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতেন বঙ্গবন্ধু। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, পরিবারের কাছ থেকেই দায়িত্ববাধ, চিন্তা-চেতনার ধারা ও সৌজন্য শিক্ষা পেয়েছে শেখ রাসে। পরিবার থেকে। বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিবের চারিত্রিক গুণাবলি ও উন্নত মানসিকতা শেখ রাসেলের মধ্যে ছিল। সুন্দরবন রক্ষার দাবিতে পথসভা ও নাটিকা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট থেকে জানান, সুন্দরবন রক্ষায় বাগেরহাটে শূন্য কার্বনভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবিতে পথসভা ও নাটিকা হয়েছে। সোমবার দুপুরে বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থা ও প্রাণ বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে বাগেরহাট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘ফিরিয়ে দেও পৃথিবী’ নামের একটি নাটিকা করা হয়। নাটিকার মাধ্যমে তরুণ যুবরা মাটি, বায়ু ও পানি দূষণমুক্ত রাখার পাশাপাশি শূন্য কার্বনভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবি জানায় অভিনেতারা। বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার বিভিন্ন যুব সংগঠনের সদস্যরা নাটিকায় শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। পরে শূন্য কার্বনভিত্তিক টেকসই উন্নয়নের দাবিতে পথ সভায় বক্তব্য দেন, বাঁধন মানব উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এএসএম মঞ্জুরুল হাসান, সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম, বাঁধনের মুশফিকুল ইসলাম রিতু, মামুন আহমেদ, ফারজানা ববি, চৈতি রায়, নাজমা সুলতানা প্রমুখ। আয়োজকরা বলেন, সুন্দরবন বাংলাদেশে ফুসফুস। কিন্তু মানুষ নানা কারণে সুন্দরবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সুন্দরবনকে রক্ষার জন্য বাগেরহাটে কার্বন নিঃসরণ বন্ধের কোন বিকল্প নেই। তাই বাগেরহাটে শূন্য কার্বনভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার দাবিতে আমরা এই সচেতনতামূলক আয়োজন করেছি। ভবিষ্যতে আমাদের এই ধরনের আরও কর্মসূচী রয়েছে।
×