ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তুচ্ছ ঘটনায় টেকনাফে বৌদ্ধ বিহারে হামলা, অগ্নিসংযোগ

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১

তুচ্ছ ঘটনায় টেকনাফে বৌদ্ধ বিহারে হামলা, অগ্নিসংযোগ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রংপুরের পীরগঞ্জের ঘটনায় আরও দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে গ্রেফতারকৃত ১৩ আসামিকে সোমবার তিনদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এদিকে, কক্সবাজারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং স্থানীয় মাদক কারবারিরা উপজাতি তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় সালিশ ডেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ১০ নারী-পুরুষকে মারধর করেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, এই ঘটনার পরে স্থানীয় বৌদ্ধবিহারে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। অন্যদিকে কুমিল্লার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার নথি সোমবার সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত দোষীদের খুঁজে বের করে অবিলম্বে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। খবর স্টাফ রিপোর্টার নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের। টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ে উপজাতি তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও মাদক কারবারিরা সালিশে ডেকে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ১০ নারী-পুরুষকে বেদম মারধর করেছে। পরে বৌদ্ধবিহারে হামলা এবং অগ্নিসংযোগও করেছে তারা। আহতদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং কাটাখালী অরণ্য বৌদ্ধ বিহারে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর চাকমা লোকজনের অভিযোগ, এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাট, তার সহোদর ইয়াবা ডন কায়সারসহ ২০ জন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হোয়াইক্যং কাটাখালী চাকমাপল্লীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক তরুণীকে ইভটিজিং করলে প্রতিবাদ জানায় অভিভাবকরা। এনিয়ে বিচারে বসে সমাধান করা হবে বলে কয়েকজন চাকমাকে ডাকা হয়। বিতর্কিত ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল সম্রাট ও তার ভাই ইয়াবা গডফাদার কায়সার বৈঠকস্থলে নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। মাদক কারবারিদের মারধরে মাথা ফেটে যায় চাকমা নারীপুরুষের। পরক্ষণে অরণ্য বৌদ্ধবিহারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। অরণ্য বৌদ্ধবিহারের কর্মকর্তা অন্তর চাকমা বলেন, ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল ও তার ভাই কায়সার সালিশের কথা বলে ডেকে এনে আমাদের বিহারে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তাদের সঙ্গে প্রায় ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী ও মাদক কারবারি হামলা চালিয়ে আমাদের ১০ নারী-পুরুষকে আহত করেছে। হামলার বিষয়ে ১নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল স¤্রাট বলেন, সালিশে বাগবিত-ার এক পর্যায়ে উপজাতিদের মারধর করা হয়েছে। তবে বিহারে অগ্নিসংযোগের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সেখানে কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষকে মারধর করা হয়েছে। বাকিটা আমি অবগত নই। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, মূলত ইভটিজিংকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। যেখানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, সেটা বৌদ্ধবিহারের একটি অংশ। তবে কারা অগ্নিসংযোগ করেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোমবার সকালে কক্সবাজারের বৌদ্ধ হিন্দু খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে টেকনাফ থানায় ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। তবে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মুন্না বলেন, হোয়াইক্যংয়ে তোফায়েল নামে কোন ছাত্রলীগ কর্মীকে আমি চিনি না। সে যে কমিটির ওয়ার্ড সভাপতি দাবি করছে সেটি অবৈধ। প্রায় দু’বছর আগে উপজেলা ছাত্রলীগ কর্তৃক সেই কমিটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এছাড়া তোফায়েলসহ যাদের নাম এসেছে, তারা ছাত্রলীগের কেউ নয় বলে দাবি করেন তিনি। জানা গেছে রংপুরের পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মামলায় ১৩ আসামির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার বিকেলে পীরগঞ্জ আমলি আদালতের বিচারক ফজলে এলাহী খান এ আদেশ দেন। এর আগে আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালতের সাধারণ নিবন্ধক শহিদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নতুন করে ১৩ জন আসামির তিন দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ। এর আগে ৩৭ আসামিকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের মামলায় নতুন করে ১৩ জনের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন চাওয়া হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এই তেরজনকে ঘটনার পরদিন ১৮ অক্টোবর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে, সে কারণে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আবদুল্লাহ আল মামুন (২৩) ও ওমর ফারুক ওরফে টনেট (২৪) নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রবিবার ২৪ অক্টোবর রাতে ওই দুজনকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার দুজন ছাত্রশিবিরের কর্মী জানিয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, গ্রেফতার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ওমর ফারুক ঘটনার রাতে পেট্রোল নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাদুল্যাপুর থেকে পীরগঞ্জে এসে হামলায় অংশ নেন। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র জানান, বড় করিমপুর মাঝিপাড়া গ্রামে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় চারটি মামলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা তিনটি মামলা এবং হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ঘটনায় আরেকটি মামলা। সোমবার সকাল পর্যন্ত এসব মামলায় ৬৬ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এদের মধ্যে ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেয়া ও সহিংসতার ঘটনা উস্কে দেয়ার অন্যতম হোতা পরিতোষ সরকার, উজ্জ্বল হোসেন, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা সৈকত ম-ল ও মসজিদের ইমাম রবিউল ইসলামসহ অনেকেই রয়েছেন। তারা আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে নিজেদের জড়িত থাকার দায় স্বেচ্ছায় স্বীকার করেছেন। কুমিল্লা ॥ নগরীর একটি পূজাম-পে কোরান অবমাননার ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়ের করা মামলা তদন্তের জন্য নথি সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার কোতোয়ালি থানা থেকে মামলার নথি এবং উদ্ধার হওয়া কোরান শরিফ ও হনুমানের গদাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য আলামত সিআইডির নিকট হস্তান্তর হয়। এদিকে ৭ দিনের পুলিশ রিমান্ডে থাকা ঘটনার অন্যতম আসামি ইকবাল হোসেন ও অপর ৩ আসামিকেও সিআইডি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বলে একটি সূত্র জানায়। সোমবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানার ওসি আনওয়ারুল আজিম জানান, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে মামলার নথিসহ আলামত হস্তান্তর হয়। কুমিল্লা ॥ পূজা ম-পকা-ে প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও তদন্তের আগেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হয়রানি করা হয়। এতে প্রকৃত অপরাধীরা রক্ষা পেয়ে যায়। এ কারণে দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। সোমবার দুপুরে কুমিল্লা টাউনহলের মুক্তিযোদ্ধা কর্নারে সুজন কুমিল্লার আয়োজনে ‘রাষ্ট্র ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠায়, শুদ্ধাচার চর্চার বিকল্প নেই’ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে করণীয় শীর্ষক নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক আরও বলেন, গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় পূজা ম-পে যে ঘটনা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দোষীদের খুঁজে বের করে সঠিক বিচারের দাবি জানান। এতে সাধারণ কোন নাগরিক যেন হয়রানির শিকার না হন, এই বিষয়ে সরকারের নিকট দাবি জানান।
×