এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে খুন করতে ওসি প্রদীপের নির্দেশে মেরিন ড্রাইভ সড়কে বড় বড় ড্রাম ফেলে ব্যারিকেড দেয়া হয়। সিনহার প্রাইভেটকার শামলাপুর চেকপোস্টের ওই ব্যারিকেডে আটকা পড়ে। তখন সিনহাকে গাড়ি থেকে নামতে বলা হয়। মেজর সিনহা দু’হাত উঁচু করে নেমে গাড়ির পাশে দাঁড়ান। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইন্সপেক্টর লিয়াকত পরপর তিনটি গুলি ছোড়েন সিনহার বুকে। তখন দাঁড়ানো অবস্থা থেকে মাটিয়ে লুঠিয়ে পড়েন মেজর সিনহা। ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে আসার পর আগে থেকে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা সেই ড্রামগুলো সড়ক থেকে আমরা সরিয়ে ফেলি। সোমবার আদালতে দাঁড়িয়ে সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষীরা এসব কথা বলেন। সোমবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে এ সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। সকাল সোয়া ১০টার দিকে ৩৬ নং সাক্ষী এসআই আমিরুল ইসলামকে দিয়ে সাক্ষী শুরু হয়। তিনি সিনহার মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে। তখন তিনি ওই সময়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় কর্মরত। সাক্ষ্য গ্রহণের ৬ষ্ঠ দফার প্রথম দিনে ৮ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়। এসআই আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি মেজর সিনহার লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করি। স্থানীয় অপর এক সাক্ষী বলেন, যে মাইক দিয়ে সিনহাকে ডাকাত বলে আখ্যা দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছিল। যে মাইকে পাড়া প্রতিবেশীকে জড়ো হতে আহ্বান জানানো হয়েছিল, সেই মাইকটা আমার জিন্মায় দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ষষ্ঠ দফা সাক্ষ্যগ্রহণ সোমবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ চলবে বুধবার পর্যন্ত। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় মামলার অন্যতম আসামি টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রিজনভ্যানে পুলিশ পাহারায় আদালতে আনা হয়। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, সোমবার ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য হাজির করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জনের সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। এরআগে পঞ্চম দফায় মামলার ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ মামলায় মোট ৮৩ জন সাক্ষী রয়েছেন। ষষ্ঠ দফায় ২৫-২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৪ সাক্ষীকে সমন পাঠিয়েছেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি এ তথ্য জানিয়েছেন।
সোমবার ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আদালতে হাজির করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আসামিপক্ষ সবসময় তাতে ব্যাঘাতের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মামলার অন্যতম আসামি বরখাস্ত ওসি প্রদীপের আইনজীবী মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীকে রিকলের আবেদন করেছেন। এটি মামলার গতিশীল কার্যক্রমকে স্থবির করার পাঁয়তারা বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের পিপি ফরিদ। উল্লেখ্য গত বছর ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খান।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: