স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের সাফল্য আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বাংলাদেশে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কঠোর ও সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পুলিশ।
এ ধরনের তথ্য প্রকাশ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম। ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে এক নিরাপত্তা সমন্বয় সভায় এ কথা বলেন তিনি। ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামসহ ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেল অংশগ্রহণ করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন-সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ বৈশ্বিক সমস্যা এবং শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য হুমকি স্বরূপ। সন্ত্রাসবাদ কোন ধর্ম, জাতি, বিশ্বাস, সংস্কৃতি, নৃগোষ্ঠী বা সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। সন্ত্রাসবাদ মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য অপরাধ। বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। সভায় উপস্থিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কনসাল জেনারেলসহ সকলকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে শফিকুল ইসলাম বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ঢাকা মহানগরবাসীর জানমাল ও সম্পত্তি রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ডিএমপি। এ ইউনিটে তিন শতাধিক বিসিএস ক্যাডারসহ ৩২ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিটের মধ্যে সাইবার ইউনিট, সোয়াট, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট, স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ, সাইবার সিকিউরিটি টিম, ওয়ান স্টপ পুলিশ সার্ভিস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ইউনিট। তিনি আরও বলেন, কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় ২০১৩ সাল থেকে ডিএমপি কমিশনারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে একজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ৯৭৯ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে গঠিত ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবসময় কূটনীতিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করছে। কূটনীতিকদের বিভিন্ন স্থাপনাসহ কূটনৈতিক এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ। এ বিভাগের অফিসার ও ফোর্স ২৪ ঘণ্টা কূটনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তরিকতা এবং পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার কূটনীতিকদের নিরাপত্তায় পুলিশ যেভাবে কাজ করছে তার জন্য ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। ঢাকা মহানগরকে নিরাপদ রাখতে পুলিশ দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তাছাড়াও কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা হিসেব পুলিশ অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি আইটিও প্রথমেই কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ তথা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। ডিএমপির পক্ষ থেকে দৃঢ় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করায় গত ৫ বছরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ২০১৬ সালের ঘটনার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গৃহীত কার্যক্রমের জন্য প্রধানমন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। সম্প্রতি রাজারবাগে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পুলিশ বেসবল টিম ও ঢাকার জাপান কমিউনিটির মধ্যকার বেসবল খেলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ খেলার মাধ্যমে বন্ধুত্ব আরও গভীর হয়েছে। এক সময় বাংলাদেশ পুলিশ বেসবল খেলায় চ্যাম্পিয়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পুলিশের সেবার প্রশংসা করে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের ডিন আর্চবিশপ জর্জ কোচেরি বলেন, আমরা যখন পুলিশের নিকট সহায়তা চেয়েছি, আমাদের প্রয়োজনে সহযোগিতা করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগ। কূটনীতিকদের সার্বিক নিরাপত্তায় এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রধান মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন- ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার পর ঢাকা মেট্রোপলিট পুলিশ দৃঢ় নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে। গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা মোতাবেক ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটসহ অন্যান্য সকল ইউনিট সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আশরাফুল ইসলাম। ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তারা এ মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন।