ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জাসদের গোলটেবিল আলোচনায় ১৪ দল নেতৃবৃন্দ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জাসদ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনা সভায় ১৪ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছেন, বিএনপি যতদিন সাম্প্রদায়িক শক্তির মাথার ওপর ছাতা ধরে রাখবে, ততদিন সাম্প্রদায়িক হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। পাকিস্তানপন্থী জামায়াতকে নিষিদ্ধ এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। সাম্প্রদায়িক হামলার অপকর্মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ॥ রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এমপি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য অধ্যাপক ড. সুশান্ত দাস, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, সহ-সভাপতি কাজল দেবনাথ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো করানো হচ্ছে ভাড়াটিয়া, মতলবাজদের দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন করোনা মোকাবেলা করা হচ্ছে, যখন রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা চলছে- তখন সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটানো হচ্ছে। আসলে সরকারকে বিব্রত করতে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে এগুলো করা হচ্ছে। তিনি বলেন, হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা-ভাংচুর স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের অংশ। এদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে জাসদ সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এ হামলার একটা সুদূর প্রসারিত পরিকল্পনা রয়েছে। এটা শুধু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নয়, এটা রাষ্ট্রের ওপর হামলা। এটা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের লড়াই নয়, এটা অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির লড়াই। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য দ্রুত সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব অসাম্প্রদায়িক দল রয়েছে, সেগুলোতে ‘স্বাধীনতা বিরোধীদের’ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, আগামীতে এই অগ্রবাদীদের হামলা হবে না, সেটার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এটা নিশ্চিত করাই এখন আমাদের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপি যতদিন পাকিস্তানীপন্থী জামায়াতকে মাথার ওপর ছাতা ধরে রাখবে ততদিন এ হামলা থেকে দেশ নিরাপদ থাকবে সে নিশ্চয়তা দিতে পারি না। সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রয়োজন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সংঘবদ্ধচক্র মানুষকে বিভাজন করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের সেই নীলনক্সা কখনই সফল হবে না। তিনি বলেন, আজ যে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, ধর্মীয় সহাবস্থানকে নষ্ট করছে তাদের সমূলে উৎপাটন জরুরী হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা আমাদের মতো অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক ঘটনা। সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ হতে হবে বাংলার মুজিব আদর্শের উত্তরাধিকারদের দ্বারা; তাহলে বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্যে জাতি-ধর্ম-বর্ণ সম্মিলিতভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াস সফল ও সার্থক হয়ে উঠবে। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিহীন বাংলাদেশ অন্ধকার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় দেশে এমন ঘটনা ঘটবেই। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের যদি ডিএনএ টেস্ট করা হয়, তাহলে কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ডিএনএ টেস্ট করা হবে না? প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। তিনি বলেন, আজকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে। এগুলো ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ করতে হবে। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ভাই ভাই, একসঙ্গে চলব, একসঙ্গে লড়ব। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সুফি মতাদর্শের লোকজন মাজারে মাজারে সংঘটিত হচ্ছি। আমাদের ওপর আঘাত আসলে আমরাও পাল্টা আঘাত করব। প্রতিরোধ করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকব না।
×