ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্প্রীতি সমাবেশ ৭১ সংগঠনের ৭ দফা

সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি

প্রকাশিত: ২৩:১৮, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াসী সংগঠনগুলো। সোমবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক ৭১টি সংগঠনের অংশগ্রহণে গঠিত সম্প্রীতি বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত এক সম্প্রীতি সমাবেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি ৭ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের পর থেকে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক হামলাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। এ সময় উপস্থিত সবার কণ্ঠেই ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্প্রীতি সমাবেশে একাত্মতা জানায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অসাম্প্রদায়িক ৮৯টি সংগঠন। সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের সঞ্চালনায় এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মেলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক উপাচার্য কামরুল হাসান খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নাছিম আখতার, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান লাল্টু, প্রজন্ম-৭১- এর সভাপতি আসিফ মুনির তন্ময়, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, রমনা কালী মন্দিরের সভাপতি উৎপল সাহা, খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের মহাসচিব উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘের সভাপতি রেভারেন্ট মার্টিন অধিকারী, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের মহাসচিব পি আর বড়ুয়া, ধমব্রাজিক বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু সুনান্দ সুপ্রিয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদ বিভাগের ডিন অরুণ গোস্বামী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষালসহ দেশবরেণ্য বিশিষ্টজনরা। এ সময় সভাপতির বক্তব্যে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক দর্শন বিনষ্টের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ে আমরা উদ্বিগ্ন। যে নিরাপত্তাহীন এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। হাজার বছরের সম্প্রীতির সংস্কৃতি ধ্বংস করতে ৭৫ সালের পর থেকে চলছে পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং আঘাত। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি বারবার যে উত্থান ঘটেছে তা রোধ করা না গেলে দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক ভবিষ্যত রক্ষা করা কঠিন হবে। তাই আজ প্রয়োজন প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। একই সঙ্গে সম্প্রীতির পবিত্র বাণী প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়াও অত্যন্ত জরুরী। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য বীর শহীদরা আত্মহুতি দিয়েছিলেন। শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায় সেজন্য শুভবোধ সম্পন্ন সকলকে একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘটে যাওয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক দর্শন বিনষ্টের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ে আমরা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহে যে নিরাপত্তাহীন এক ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ধ্বংসের চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আজকের সমাবেশ এসব কর্মকা-ের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে। সম্প্রীতি বাংলাদেশের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, পদ্মা-মেঘনা যমুনা তীর ঘেঁষা জনপদের হাজার বছরের সম্প্রীতির সংস্কৃতি ধ্বংস করতে ’৭৫-পরবর্তী কাল থেকে চলছে পরিকল্পিত চক্রান্ত এবং আঘাত। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি বারবার যে উত্থান ঘটেছে তা রোধ করা না গেলে দেশে গণতান্ত্রিক ও মানবিক ভবিষ্যত রক্ষা করা কঠিন হবে। তাই আজ প্রয়োজন প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ। একই সঙ্গে এই ভূখ-ের চিরায়ত সম্প্রীতির পবিত্র বাণী প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দেয়া এখন অত্যন্ত জরুরী। আজকের এই সম্মিলিত সম্প্রীতি সমাবেশ সেই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। এ সময় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক. ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, নতুন প্রজন্মের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত করতে অভিভাবকদের পাশাপাশি শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে সেখানেই প্রতিরোধ করতে হবে। আমার মনে হয় এটি এক ধরনের রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা। এখন রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে এক মঞ্চে আসতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে নির্মূল করতে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। এই অপশক্তি অন্য কোন গ্রহ থেকে আসেনি। তারা এ জনপদের মানুষ। তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আইশৃঙ্খলা বাহিনীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব নিতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ নুজহাত চৌধুরী বলেন, নিজের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা লালন করুন। তার জন্য শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। সাংস্কৃতিক আন্দোলন করতে হবে। চলুন এক সঙ্গে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এসময় বঙ্গবন্ধু পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ মতিউর রহমান লাল্টু বলেন, বাঙালীর জাতীয়তার ইতিহাস চিরায়ত অসাম্প্রদায়িকতার এক অবিনাশী গল্প। আমাদের জাতীয় জীবনে যখনই অন্ধকার এসেছে আমরা জেগে উঠেছি। আমরা রুখে দাঁড়িয়েছি সম্মিলিতভাবে। পরাজিত করেছি সাম্প্রদায়িক দানবদের। প্রতিবারে বুকের রক্তে লিখেছি এক অনাগত ভূমির জন্য নতুন কবিতা। আমাদের যূথবদ্ধ, মিলিত চেষ্টার সামনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে শকুনের দল। সাম্প্রতিক সময়ের বেদনাদায়ক ঘটনাগুলো আবারও আমাদের দাঁড় করিয়েছে চিরচেনা পুরনো শত্রুর মুখোমুখি। তবে আমরাও প্রস্তুত। জয় আমাদের হবেই। সমাবেশে সরকারের কাছে সাতটি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, সেই সঙ্গে অতীতের ঘটনারও দ্রুত বিচার শেষ করতে হবে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ঘটনা বন্ধে প্রশাসনকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে, সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর এবং উপাসনালয় সংস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদসহ শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক মূল্যবোধ ও সহনশীলতার বিষয় অন্তর্ভুক্তিরও দাবি জানানো হয় পাশাপাশি বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সবশেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও উস্কানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়। সম্প্রীতি সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণাকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, প্রজন্ম একাত্তর, উদীচী, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন (ঢাকা, বাংলাদেশ), বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ সংঘ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন, মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট, বাংলাদেশ পথ নাটক পরিষদ, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয় হেপাটোলজি এলামনাই এ্যাসোসিয়েশন, হিন্দু হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ মোর্চা, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চিকিৎসা সহায়ক কমিটি (একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি), বিবেকানন্দ শিক্ষা ও সংস্কৃতি পরিষদ, ল’ ইয়ার্স সম্প্রীতি, মুক্তচিন্তা এবং যুক্তিবাদ চর্চা ফোরাম, ইন্টার রিলিজিয়া হারমনি সোসাইটি, মাইনরিটি রাইটস ফোরাম, বঙ্গবন্ধু অভিযাত্রিক, স্বাধীনতা সরকারি চাকরিজীবী জাতীয় পরিষদ, বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট, গৌরব ৭১, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বঙ্গবন্ধু সমাজ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন একটিভিস্ট ফোরাম উল্লেখযোগ্য।
×