ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায়

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৬ অক্টোবর ২০২১

শেয়ারবাজারে বড় দরপতন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিককালের মধ্যে একদিনে সবচেয়ে বড় পতনের ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিনে বেশিরভাগ কোম্পানির দর কমায় বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। নয় দিনে প্রধান শেয়ারবাজারে প্রায় ৫শ’ পয়েন্ট সূচক কমেছে। টানা পতনে পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় আবারও রাস্তায় নেমে এসেছে তারা। শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আজ মঙ্গলবারও কর্মসূচীর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই সবচেয়ে বড় পতন। সরেজমিনে দেখা গেছে, সোমবার সূচকের বড় পতন দিয়ে শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেন। যা শুরুর সোয়া এক ঘণ্টার মাথায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। আর দুপুর ১২টা ৩৬ মিনিটে বেড়ে তা ১৬৪ পয়েন্ট কমে যায়। এই পতনের প্রতিবাদে মতিঝিলে বিক্ষোভ করেছে বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভকালে তারা দ্রুত শেয়ারবাজার স্থিতিশীল করে দেয়ার দাবি জানায়। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় বিনিয়োগকারীদের আন্দোলন দীর্ঘায়িত হয়নি। বিক্ষোভ কর্মসূচী থেকে আজ মঙ্গলবারও আন্দোলনের হুমকি দেয়া হয়েছে। শেয়ারবাজার গত সাত কার্যদিবস পর গত বৃহস্পতিবার উত্থানে ফিরলেও রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস আবার বড় পতন হয়। তবে সোমবার মাত্র আড়াই ঘণ্টায় ১৬৪ পয়েন্টের পতন সব ছাড়িয়ে যায়। পতনের মাত্রা এতটা তীব্র ছিল যে, বিনিয়োগকারীদের ২০১০ সালের আতঙ্ককে ফিরিয়ে দিয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির নজরদারি, সতর্কতা, বাজারে তারল্য বাড়ানো উদ্যোগ বা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ-কাজে আসছে না কিছুই। পুঁজিবাজারে টানা দরপতন থামছে না। বরং দুই দিনে প্রায় ২০০ পয়েন্ট সূচকের পতনে বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্ক বেড়েছে। টানা দরপতনে এখন কোম্পানির শেয়ারদর কমছে যাচাই বাছাই ছাড়াই। ভাল কোম্পানি, দুর্বল কোম্পানি, নির্বিশেষে পতন হচ্ছে। দরপতনের শতকরা হার ভাবিয়ে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। গত ১১ থেকে ১৯ অক্টোবর টানা সাত কর্মদিবস দরপতনের পর বিএসইসির কার্যালয়ে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনদের মধ্যে বৈঠক বসে। ওই বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি বাজারে ছড়িয়ে পড়া নানা গুজবের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। সেই সময় পুঁজিবাজারে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। আরও জানানো হয়, একটি ব্রোকারেজ হাউসের বিক্রির চাপে বাজারে সেদিন বড় দরপতন হয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, এখন নজরদারি অনেক শক্তিশালী। বাজারে কারসাজি করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এই বক্তব্যের পর তিন কর্মদিবসে পুঁজিবাজারের আচরণে স্পষ্ট হয় যে, সেদিনের বৈঠক শেষে যা বলা হয়, পুঁজিবাজারে পতনে আরও কারণ আছে আর তার সমাধান হয়নি। এই বৈঠক ও বক্তব্যের পর দিন বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান হলেও সেদিনও বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতনের কারণে উৎকণ্ঠা রয়েই গিয়েছিল। সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ভিআইপিবি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শহিদুল ইসলাম বলেন, সূচকের পতন বিনিয়োগকারীদের মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলে। ভালো একটি বাজার এভাবে পতনের মুখে পড়বে এটা হয়ত অনেক বিনিয়োগকারী আন্দাজ করতে পারেননি। বাজার আবার ঠিক হয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি। বলেন, লেনদেন যদিও বলা হচ্ছে কমে যাচ্ছে, তারপরও কিন্ত হাজার কোটি টাকা হাতবদল হয়েছে। এটিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ফলে বিনিয়োগকারীরা ধৈর্য ধরতে পারে, আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি না করে অপেক্ষা করতে পারে। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত কিছুদিন ধরে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরা যতটা শেয়ার কিনছেন তার থেকে শেয়ার বিক্রি করছেন বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের বিক্রি অনেক শেয়ারের দরপতনকে উস্কে দিয়েছে বলে জানায় ওই সূত্র। সক্রিয় বাজার কারসাজি চক্রগুলোও একই কাজ করছে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, চলতি এ দরপতনের কারণ বিষয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অন্ধকারে। নানাজন নানা মত দিচ্ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত। ক্রমাগত দরপতন থাকায় আরও দরপতনের ভয়ে তারা শেয়ার বিক্রি করছেন। এতে দরপতন ত্বরান্বিত হচ্ছে।
×