ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজমিরীগঞ্জে কালনী নদী থেকে বালু উত্তোলনে ফসলি জমি ও গ্রাম হুমকিতে

প্রকাশিত: ২১:৪৪, ২৫ অক্টোবর ২০২১

আজমিরীগঞ্জে কালনী নদী থেকে বালু উত্তোলনে ফসলি জমি ও গ্রাম হুমকিতে

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে বালু চক্রের সিন্ডিকেট। এবার রাতের আঁধারে নয় বরং প্রকাশ্য দিবালোকে কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে চলছে বালু উত্তোলন। প্রকাশ্য দিবালোকে বালু উত্তোলন করা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নীরবতায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এতে করে একদিকে সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের কামালপুর, রাহেলা, বদরপুর, নজরাকান্দা ও সৌলরীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ও ফসলি জমি নদী ভাঙণের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে কাকাইলছেওয়ের সাহানগর, নজরাকান্দা, উমেদনগর, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলিজমি। সরজমিনে আজমিরীগঞ্জ পৌরসভার নৌ-টার্মিনাল এলাকার বাঁশ মহাল ও লঞ্চঘাট সংলগ্ন কুশিয়ারার কালনী নদীর তীরে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। জানা যায়, হবিগঞ্জের ভাটি এলাকার বন্দর নামে খ্যাত আজমিরীগঞ্জ উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সীমানার মধ্যস্থল দিয়ে বয়ে যাওয়া কুশিয়ারার কালনী নদীর উত্তর-পশ্চিম তীরে ইটনা উপজেলা এবং পুর্ব-দক্ষিণ পাড়ে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার অংশ। কুশিয়ারার কালনী নদীতে রাতের আঁধারে দুইটি বড় ড্রেজার মেশিন ইটনার অংশে নোঙ্গর করা থাকলেও দিনের বেলা পূর্ব-দক্ষিণ তীরের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। উত্তলনকৃত বালু প্রতি ঘনফুট ৮ থেকে ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে সরকার যেমন হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। তার সাথে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর ধারাবাহিকতায়, গত জুলাই মাসের ১৫ তারিখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টরা নদী ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ভাঙ্গন রোধে প্রায় ৮৯ লাখ টাকার জিও ব্যাগ বরাদ্দ দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ২৬ নবেম্বর তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ নাঈমা খন্দকার একই জায়গা অর্থাৎ কুশিয়ারার কালনী নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের দায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন চালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ইদ্রিস মিয়ার ছেলে নিয়ামত উল্ল্যাহকে বালু- মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫ (১) ধারা অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ড্রেজার মেশিনের যন্ত্রাংশ পুড়িয়ে দেন। এছাড়া বিগত ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সাবেক সহকারী কমিশনার (ভুমি) উত্তম কুমার দাশ প্রায় ১৮ একর নদীর চর অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে উদ্ধার করেন। কিন্তু সোমবার (২৫ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদের অফিস থেকে প্রায় ২ কিলোমিটারের দূরে আবারও বালু খেকো চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠায় জনমনে নানা প্রশ্নের উদয় হয়েছে। ইটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ নাফিজা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি। এটা নিশ্চয়ই পাশ্ববর্তী উপজেলা আজমিরীগঞ্জ হতে পারে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি জানান কিছু দিন পূর্বে ইটনায় ধনু নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের মোবাইল কোর্টে মাধ্যমে ৪টি ড্রেজার মেশিন বোট ও একটি বড় স্টিল বডি জব্দ করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ড্রেজার মালিকদেরকে ২ লাখ টাকা ও স্টিল বডি মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুলতানা সালেহা সুমীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
×