ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সঠিক পরিকল্পনার অভাব

প্রকাশিত: ২১:২৫, ২৬ অক্টোবর ২০২১

সঠিক পরিকল্পনার অভাব

ডেমু ট্রেন নিয়ে শুরুতেই বিপত্তি ছিল। এগুলো মোটেও যাত্রীবান্ধব ছিল না। স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেনের সিঁড়ি আড়াই ফুট উঁচু থাকায় যাত্রীদের ওঠা-নামায় সমস্যা হতো। নারী, শিশু এবং বৃদ্ধদের তো ওঠাই কঠিন ছিল। ট্রেনের ভেতরের কাঠামোও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কিংবা যথেষ্ট পরিমাণ আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ না থাকায় যাত্রীদের দুঃসহ গরম সহ্য করতে হতো। এসব সীমাবদ্ধতা নিয়েই ২০ সেট ট্রেন যাত্রা শুরু করে। স্বল্প দূরত্বের যোগাযোগের লক্ষ্যে চীন থেকে কেনা হয়েছিল ডেমু ট্রেনগুলো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জ রুটে দুই সেট ট্রেন দিয়ে উদ্বোধন করা হয় এই সার্ভিস। পর্যায়ক্রমে ঢাকা-টঙ্গী, ঢাকা-জয়দেবপুর, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, সিলেট-আখাউড়া, কমলাপুর-আখাউড়া, চট্টগ্রাম-কুমিল্লা, নোয়াখালী-লাকসাম, লাকসাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-নাজিরহাট, পার্বতীপুর-লালমনিরহাট, পার্বতীপুর-পঞ্চগড় রুটে বাকি ট্রেনগুলো চালু হয়। বিশ সেট ডেমু ট্রেন কিনতে বাংলাদেশ রেলওয়ে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ২০১১ সালে। প্রথমে এর ব্যয় ধরা হয় ৪২৬ কোটি টাকা। পরে ব্যয় দাঁড়ায় ৬৫৪ কোটি টাকায়। কেনার সময় ট্রেনগুলো ২৫ থেকে ৩০ বছর চলার নিশ্চয়তা দেয়া হয়। মাত্র সাত বছরেই ট্রেনগুলো অচল হয়ে যায়। বর্তমানে ১৭টি ট্রেন পড়ে রয়েছে অচল হয়ে। এগুলো মেরামতেরও কোন সুযোগ নেই। কয়েকটি ট্রেন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় এতে লতাপাতা গজিয়ে গেছে। তিনটি ট্রেন চলছে খুঁড়িয়ে। এগুলোও যে কোন সময় অচল হয়ে যাবে। রেলের হিসাব অনুযায়ী এই ট্রেনগুলো গত সাত বছরে আয় করেছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই ব্যয় হয়েছে ট্রেন ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ ক্রয়কৃত অর্থের এক টাকাও ফেরত পায়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। যে কারণে ট্রেনগুলো কেনা হয়েছিল সেই যাত্রীসেবার উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি। অধিকন্তু সরকারের এতগুলো টাকা গেছে পানিতে। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী কোন প্রকার সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই ট্রেনগুলো কেনা হয়। ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার কারণে শুরুতেই ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা। নিয়ম না মেনে ট্রেনগুলো চালানোরও অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে সরবরাহকারী কোম্পানিকেও ধরতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। শুধু ডেমু ট্রেন নয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিসি) শত শত বাস নষ্ট হচ্ছে। নতুন কেনা বাসগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে অচল হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গাচোরা শরীর নিয়ে রাস্তায় বিআরটিসির কিছু বাস চলতে দেখা যায়। সরকারী মালিকানাধীন এসব বাসের এমন করুণ দশা কেন এই প্রশ্নের কোন জবাব নেই। ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুইডেন থেকে কিছু ভলবো কোম্পানির দ্বিতল বাস কেনা হয়েছিল। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যাত্রীবান্ধব এবং আরামদায়ক বাসগুলো দাপটের সঙ্গে রাস্তায় চলেছে অনেক বছর। যাত্রীদের এখনও সেই বাসগুলোর কথা মনে আছে। পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সময় কেনা বাসের তুলনায় এগুলোর দামও খুব বেশি ছিল না। বিআরটিসিকে এমন বাস আর কখনই কিনতে দেখা যায়নি। ডেমু ট্রেন কিংবা বাস জাতীয় সম্পদ। কম টাকায় পাওয়া গেলেই এগুলো কেনা ঠিক নয়। দ্রুত অকেজো হয়ে গেলে পুরোটাই লোকসান। যাত্রীবান্ধব এবং টেকসই হয় তা ভালভাবে যাচাই-বাছাই করেই এগুলো কেনা সমীচীন।
×