ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনশনরত প্রেমিকা ও তার মা-বাবাকে মারপিট করে বিতারিত করেছে প্রেমিকের লোকজন

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১

অনশনরত প্রেমিকা ও তার মা-বাবাকে মারপিট করে বিতারিত করেছে প্রেমিকের লোকজন

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে দীর্ঘদিন প্রেম করার পর বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনরত প্রেমিকাসহ তার মা-বাবাকে বেধরক মারপিটের পর বিতারিত করেছে প্রেমিকের বাড়ির লোকজন। পরে পুলিশ প্রেমিকের বাড়ির সামনে থেকে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা প্রেমিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এসময় ছবি তুলতে গিয়ে পিটুনী খেয়ে আহত হয়েছে আরো এক সাংবাদিক। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাত ১০টার পর শহরের হাজীপাড়ায়। অসহায় প্রেমিকা বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর আগে প্রেমিকা কামরুন নাহার নেসা বিয়ের দাবিতে রবিবার বিকেল ৩টায় প্রেমিক সেরাজু মুনির নাহিদ -এর বাড়ি ঢুকে আমরণ অনশন শুরু করে। সন্ধ্যায় নাহিদের বাড়ির লোকজন মেয়েটিকে জোরপূর্বক তাদের বাড়ির বাইরে বের করে দেয়। এরপর সে বাড়ির গেটের সামনে বসে অনশন ও অবস্থান করতে থাকে এবং তাকে বিয়ে না করা পর্যন্ত কোথাও যাবেনা বলে ঘোষণা দেয়। এক পর্যায়ে প্রেমিকার মা-বাবাও সেখানে উপস্থিত হয়ে মেয়ের জন্য ন্যায় বিচার চেয়ে এলাকাবাসির কাছে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। এরপর রাত ১০টার দিকে প্রেমিক নাহিদের বাড়ি থেকে একদল ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ সেখানে উপস্থিত হয়ে প্রথমে তাদের অকথ্য ভাষায় চিৎকার করে গাল-মন্দ করতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর হামলা চালিয়ে বেধরক মারপিট করে। এতে প্রেমিকা-মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং তাঁর মা-বাবা আহত হয়। এসময় এক সাংবাদিক ঘটনার ছবি তুলতে গেলে তারা ওই সাংবাদিককেও বেধরক পিটেয়ে আহত করে। খবর পেয়ে সদর থানার এসআই পিযুষ কান্তি পুলিশসহ ঘঁটনাস্থল গিয়ে জ্ঞান হারানো মেয়েটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়। এঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্ঠি হলে সেখানে অসংখ্য উৎসুক লোকজন ভিড় করে। এসময় সদর থানার এসআই পিযুষ কান্তি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন, এব্যাপারে থানায় অভিযোগ করা হলে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে ভুক্তভোগী সদর উপজেলার মাদারগঞ্জ টেকনিক্যাল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী কামরুন নাহার নেসা সাংবাদিকদের জানায়, সে শহরের হাজীপাড়ায় একটি ম্যাসে থেকে পড়ালেখা করতো। মাস ছয়েক আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ্ম্যাসের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা মৃত নুহরত আলীর ছোট ছেলে সেরাজু মুনির নাহিদ -এর সাথে আলাপ পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরে তাদের সে সর্ম্পক গভীর থেকে গভীর অবস্থায় পৌঁছায় এবং প্রেমিক নাহিদ বিয়ের প্রলোভন দিয়ে তার সাথে দৈহিক সর্ম্পক গড়ে তোলে। কিন্তু গত কিছুদিন থেকে হঠাৎ করেই প্রেমিক নাহিদ তার সাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। পরে সে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তার প্রেমিকের অভিভাবকেরা তাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ কথা শুনে কামরুন নাহার বিয়ের দাবিতে রবিবার বিকেল ৩টা থেকে প্রেমিকের বাড়িতে আমরেণ অনশন শুরু করলে রাত ১০টার দিকে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটে। এর আগে প্রেমিকাকে দেখে তার প্রেমিক নাহিদ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে নাহিদের বড় ভাই রাসেল জানান, এই মেয়ের আগে দুইটি বিয়ে হয়েছিল। সেই তথ্য সে গোপন রেখে আমার ভাইয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু যখন আমার ভাই বিষয়টি জানতে পারে তখন থেকে সে এই মেয়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আমরা নিজেরাও কাজী অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। তাই জেনেবুঝে একজন বিবাহিত মেয়ের সাথে আমার ভাইয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এ ব্যাপারে কামরুন নাহার জানায়, আমার মা-বাবার চাপে এক প্রবাসীর সাথে টেলিফানে আমার একটি বিয়ে হলেও কিছুদিন পর নাহিদের অনুরোধে তা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে । আর মামলা দায়ের করলে তা চলবে বছরের পর বছর এবং মামলা চলাতে খরচ হবে অনেক টাকাপয়সা যা আমার গরীব মা-বাবার নেই। তাই এখন আমার মৃত্যু ছাড়া অন্য উপায় নেই।
×