ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ১০ উইকেটের রেকর্ড জয়

ভারতকে উড়িয়ে দুর্দান্ত শুরু পাকিস্তানের

প্রকাশিত: ০১:০৩, ২৫ অক্টোবর ২০২১

ভারতকে উড়িয়ে দুর্দান্ত শুরু পাকিস্তানের

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ইতিহাস গড়লেন বাবর আজম। এমন ইতিহাস যা ১৯৯২-এর বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ইমরান খানও পারেননি! যে কোন ঘারনার বিশ্বকাপে এই প্রথম কোন ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে হারাল পাকিস্তান! পারেননি মিসবাহ উল হক, শহীদ আফ্রিদি কিংবা সরফরাজ আহমেদ; অবশেষে ‘সেনসেশনাল’ বাবরের হাত ধরে প্রায় তিরিশ বছরের অপেক্ষার অবসান। দুবাইয়ে উন্মাদনার ম্যাচে ১০ উইকেটের রেকর্ডগড়া জয়ের পথে বিরাট কোহলিদের স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে টি২০ বিশ্বকাপ মিশন শুরু করল আসরের অন্যতম ফেবারিট পাকিস্তান। রবিবার উত্তাপ ছড়ানো এ ম্যাচে মাঠের লড়াইয়ে ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বিতার ছিটেফোঁটা! টস হেরে ব্যাটিং পাওয়া ভারত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে করে ১৫১ রান। জবাবে ১৭.৫ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান (১৫২/০)। অবিচ্ছিন্ন ওপেনিং জুটিতে খেলা শেষ করে উল্লাসে মেতে ওঠেন বাবর আজম (৬৮*) ও মোহাম্মদ রিজওয়ান (৭৯*)। বিশ্বকাপে তো বটেই সর্বোপরী টি২০তে উইকেটের হিসাবে ভারতের বিপক্ষে এটিই পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি (৩/৩১)। ১৫১ রানের ভাল পুঁজি নিয়েও ভারত এতটুকু লড়াই করতে পারবে না, কে ভেবেছিল? জাসপ্রিত বুমরাহ, ভুবনেশ্বর কুমার, বরুন চক্রবর্তীদের নিয়ে রীতিমতো ছেলে খেলা করলেন বাবর ও রিজওয়ানরা। রিজওয়ান ৫৫ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ এবং অধিনায়ক বাবর ৫২ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৭.৫ ওভারে দুজনে মিলে তুলে নেন ১৫২ রান, যে কোন উইকেট জুটিতে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের এটি নতুন রেকর্ড। এর আগে তিন সংস্করণ মিলিয়ে দুই দলের মুখোমুখি ২০০তম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ভারতের শুরুটা ছিল খুব বাজে। ইনিংসের চতুর্থ বলেই প্রায় ইয়র্কার ডেলিভারিতে রোহিত শর্মাকে (০) এলবিডব্লিউ করে দেন আফ্রিদি। ভারত ওপেনার পান গোল্ডেন ডাকের তেতো স্বাদ। বাঁহাতি এই পেসার নিজের পরের ওভারে আরেকটি দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন লোকেশ রাহুলকে (৩)। তৃতীয় ওভারে ৬ রানেই ভারত হারায় দুই ওপেনারকে। ওই ওভারে আফ্রিদিকে পুল করে ছক্কায় ওড়ানোর পর বেশিক্ষণ টেকেননি সূর্যকুমার যাদব (১১)। হাসান আলির বলে উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের দুর্দান্ত ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে মাত্র ৩৬ রান। চাপে পড়া দলের হাল ধরেন কোহলি ও ঋষভ পন্থ। অধিনায়ক কোহলি শুরু থেকে ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। আফ্রিদিকে ছক্কায় ওড়ান তিনি মিড অনের ওপর দিয়ে। দারুণ কিছু শট খেলেন ক্রেজি পন্থও। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পরপর দুই বলে ছক্কা মারেন হাসান আলিকে। পরের ওভারে স্পিনার শাদাব খানকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার (৩০ বলে ৩৯ রানের) ইনিংস। ভাঙ্গে ৪০ বলে ৫৩ রানের জুটি। পন্থের ইনিংসটি ২টি করে ছক্কা ও চার দিয়ে সাজানো। ১৫তম ওভারে ভারতের রান স্পর্শ করে এক শ’। কোহলি হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৪৫ বলে। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ায় চাপের মুখে নেমে ফিফটি করেছিলেন তিনি। আফ্রিদির স্লোয়ারে আগেই ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে কোহলির ইনিংস শেষ হয় ১৯তম ওভারে। ৪৯ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো তার ৫৭ রানের ইনিংসটি। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজা (১৩ বলে ১৩) ও হার্দিক পান্ডিয়া (৮ বলে ১১) তুলতে পারেননি প্রত্যাশিত ঝড়। পাকিস্তানের এলোমেলো ফিল্ডিংয়ে তবু শেষ ৫ ওভারে ৫১ রান পায় ভারত। জাদেজার (১৩) সঙ্গে ৪১ রানের জুটির ২৭ রান একাই করেন কোহলি। রাহুল, রোহিত এবং কোহিল-তিন তারকার উইকেট নেয়া আফ্রিদিকে ম্যাচসেরা বেছে নিতে খুব একটা ভাবতে হয়নি। ৪৪ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন হাসান আলি। ১৯৯২-২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৭ ম্যাচ, ২০০৭-২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ- সর্বোপরি ১২ হারের পর অবশেষে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে এলো পাকিস্তানের বহু কাক্সিক্ষত এই জয়! অধিনায়ক হিসেবে নিজের নামটা স্মরণীয় করে রাখলেন বাবর আজম। সংক্ষিপ্ত স্কোর : ভারত- ১৫১/৭ (২০ ওভার; রাহুল ৩, রোহিত ০, কোহলি ৫৭, সুর্যকুমার ১১, পন্থ ৩৯, জাদেজা ১৩, হারদিক ১১, ভুবনেশ্বর ৫*, শামি ০*; আফ্রিদি ৩/৩১, হাসান আলি ২/৪৪, শাদাব ১/২২, রউফ ১/২৫) পাকিস্তান- ১৫২/০ (১৭.৫ ওভার; রিজওয়ান ৭৯*, বাবর ৬৮*; ভুবনেশ্বর ০/২৫, বুমরাহ ০/২২, শামি ০/৪৩, বরুন ০/৩৩) ফল : পাকিস্তান ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান)।
×