ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাভাবিক হবে পানি প্রবাহ জলাবদ্ধতা কমবে

উদ্ধার করা হবে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৫ অক্টোবর ২০২১

উদ্ধার করা হবে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ এবার উদ্ধার হবে রাজধানী ঢাকার কণ্ঠহার বুড়িগঙ্গা নদীর আদি স্রোতধারা বা চ্যানেল। পুরনো ঢাকার সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশের উন্নয়নসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক খালের পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করা হবে। একইসঙ্গে যুগযুগ ধরে চলে আসা ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুপরিকল্পিতভাবে বুড়িগঙ্গার এ আদি চ্যানেলটি যে কোন মূল্যে পুনরুদ্ধার করে নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নাগরিক সেবাদানকারী এ সংস্থাটি। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দৈর্ঘের এ আদি চ্যানেলটির জমি অবৈধভাবে দখল করে ইতোমধ্যেই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ছোট বড় স্থায়ী অস্থায়ী নানা স্থাপনা। বুড়িগঙ্গার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখলকৃত সকল জমি পুনর্দখল করে চ্যানেলটিকে পুনর্খনন করা হবে। তবে কম জমি অধিগ্রহণ করে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এক পাড়ে বাঁধ থাকলে অপর পাড়ে বাঁধ তৈরি করে নির্মাণ করা হবে নানা অবকাঠামো। ইতোমধ্যেই দুপাশের নদীর জমির সীমানাও চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জমিকে কাজে লাগাতে নদীর দু’পাড়কে নাগরিকদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে তৈরি করতে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে আদি বুড়িগঙ্গাসহ রাজধানীর আশপাশের সকল নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে নৌ পরিহবন প্রতিমন্ত্রীসহ ঢাকার দুই মেয়রকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে সরকার। ইতোমধ্যেই সংস্থাটির পক্ষ থেকে একটি প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কর্তৃক সংশোধিত নতুন ডিটেইল এরিয়া ম্যাপ (ড্যাপ) এ সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে প্রকল্পটির বাস্তবায়নে কারিগরি ও কৌশলগত সকল সহায়তারও আশ্বাস দিয়েছে। এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সর্বাত্মক সহায়তা নেয়া হবে। নাগরিকদের স্বার্থে আদি বুড়িগঙ্গাকে পুরনো রূপে ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে হলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে খুবই ধীরগতিতে। খসড়া মাস্টারপ্ল্যান খসড়া জমা দেয়ার পর তা থমকে আছে। কবে নাগাদ চূড়ান্ত মাস্টারপ্লান বাস্তবায়ন হবে। তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারের জন্য মহাপরিকল্পনাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে নদীর স্রোতধারা ফিরিয়ে আনা হউক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর সরকারী হাসপাতাল মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় এই আদি চ্যানেলটি পুনরুদ্ধারে ডিএসসিসির তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনকে নির্দেশ দেন। পরে তা বেশি দূর এগোয়নি। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় সংশ্লিষ্টদেরকে আদি চ্যানেল নিয়ে মহাপরিকল্পনা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরে দায়িত্ব গ্রহণের পর আদি চ্যানেলটি বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নির্বাচিত হওয়ার পর কয়েকবার সরেজমিন পরিদর্শন করে নতুন করে উদ্যোগ নেন। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ, কামরাঙ্গীরচর হাক্কুল এবাদ ব্রিজ (লোহারপুল) রহমতবাগ, ব্যাটারিঘাট, কুড়ারঘাট, পূর্ব রসুলপুর, নবাবগঞ্জ সেকশন, কোম্পানীঘাট পাকা ব্রিজ ঘেঁষা থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেল পুনরুদ্ধার করলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই সমাধান হবে। এছাড়া অবহেলিত কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, হাজারীবাগ এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন ঘটবে। এতে অধিকতর বাসযোগ্য হবে। দখল প্রতিরোধ করার মাধ্যমে নদীটির পুরনো রূপে ফিরয়ে নেয়ার পর বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় ডিএসসিসি। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল উদ্ধারের জন্য ডিএসসিসি মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজিকে (এমআইএসটি) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে ও দক্ষিণ সিটিতে খসড়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। অতি শীঘ্রই তারা চূড়ান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খসড়া মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান তা ডিএসসিসিকে দিয়েছে। এ মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আদি চ্যানেল খনন, অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, মাস্টারপ্ল্যানের খসড়ার ওপর ভিত্তি করে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) প্রস্তুত করা হবে। পরে এটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জাতীয় নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রকল্পটি পাস করা হলে চূড়ান্ত কাজ শুরু করা হবে। তবে ডিএসসিসি সরকারের অর্থ সাহায্য না পেলেও নাগরিক স্বার্থে প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। বর্তমানে আদি চ্যানেলটি অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। সেখানে বিদ্যুতকেন্দ্র, পার্ক, খেলার মাঠ, আবাসিক ভবন, শিল্পকারখানা, মসজিদ, পাকা আধাপাকা বাড়ি, ক্লাবঘরসহ হাজারো স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে ডিএসসিসি অবৈধভাবে দখলকৃত কোন প্রকার স্থাপনাই রাখতে দেবে না, সকল জমিই পুনরুদ্ধার করা হবে। দখলকারী যত শক্তিশালীই হোক কাউকেই ছাড় দিতে রাজি নয় সরকার। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয়ে যৌথভাবে সকল জমি উদ্ধার করা হবে। মানচিত্র অনুযায়ী দখলকৃত সকল জমির সিএস এবং আরএস দেখে সকল জমি উদ্ধার করা হবে। আদি চ্যানেলের নদীর ¯্রােতধারা ঠিক রাখার জন্য তৈরিকৃত সকল প্রকার স্থাপনা যে কোন মূল্যে উদ্ধার করে উভয় পাড়ে তৈরি করা হবে পার্ক, মাঠসহ নানা নান্দনিক স্থাপনা। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে সিএস এবং আরএস দেখে ধাপে ধাপে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করা হবে। এরপর নদী-খাল দখল করে যত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। জানা গেছে, আদি চ্যানেলের দু’পাশের এলাকাগুলো হচ্ছে ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ শশ্মনঘাট, শহীদনগর, ঝাউচর, হাজারীবাগ সেকশন, কালুনগর, বউবাজার, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও সিকদার মেডিক্যাল কলেজ। এই নদীর পুরান ঢাকার মুসলিমবাগে আদি চ্যানেলটির শুরু থেকে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ সড়কের পশ্চিম পাশের খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গা পর্যন্ত সংযুক্ত করা হবে। চ্যানেলের দু’পাশে দৃষ্টিনন্দন সবুজ উন্মুক্ত স্থান ও বিভিন্ন রকম বিনোদন স্পট তৈরি করা হবে। আদি স্রোতধারা বা চ্যানেল স্রোতধারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যে কয়টি নিচু করা পাকা ব্রিজগুলো ভেঙ্গে ফেলা হবে। দু’পাশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক উঁচু করে নতুন করে ব্রিজ, ওভারপাস তৈরি করা হবে। প্রকল্প বস্তবায়নের জন্য ডিএসসিসির প্রকৌশলী, পরিকল্পনাবিদসহ সংশ্লিষ্টদের মতামত নেয়া হয়েছে। এদিকে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল নিয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ তাপসের বিশেষ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বুড়িগঙ্গা তীরের এলাকাবাসী। আদি চ্যানেল থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চ্যানেলটি খননের দাবিতে বিভিন্ন সময় সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করেছে পরিবেশবাদী এবং সামাজিক সংগঠন। নদীটির ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও ভবিষ্যত দখল রোধে চ্যানেলটি পুনরুদ্ধার করতে প্রয়োজনে আদি চ্যানেলের স্রোতধারা চলমান রাখার জন্য দখলকৃত স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা গেছে, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ এলাকার বিভিন্ন মৌজা ঘিরে বুড়িগঙ্গা নদীর আদি চ্যানেল। পরিকল্পিতভাবে আদি চ্যানেলটির নদীর বুক দখল করার জন্য নিচু করে কয়েকটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এতে দখলদার নদীর বুক ভরাট করে নদী স্রোতধারায় প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে। এরপর তারা তৈরি করে বিদ্যুত কেন্দ্র, পার্কসহ নানা স্থাপনা। এরপর থেকে এই চ্যানেলটি ময়লা-আবর্জনায় ভরা। চ্যানেলে পানি প্রবাহ নেই। জমে থাকা কালো পানিতে মশার লার্ভার স্তর বসেছে। এর মধ্যে কামরাঙ্গীরচরের সেকশন থেকে হাজারীবাগের কালুনগর পর্যন্ত আদি চ্যানেল অনেকটা ছোট খালে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কামরাঙ্গীরচর ব্যাটারীঘাট, পূর্ব রসূলপুর, পশ্চিম রসূলপর, কালুনগর থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত আদি চ্যানেলের তেমন কোন অস্তিত্ব বা চিহ্ন নেই। শুধু ছোট একটি খাল ঘুরে রায়েরবাজারের দিকে গিয়েছে। এ ব্যাপারে রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) প্রকল্প পরিচালক আশরাফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি দিয়ে আশির দশকেও নানা রকমের নৌকা, ইঞ্জিনচালিত বোট চলাচল করত। সিএসআর এস নক্সা অনুযায়ী এটিই আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল ছিল। আর নক্সা অনুযায়ী কামরাঙ্গীরচর ছিল অনেকটা দ্বীপের মতো। এই নদীটির সঙ্গে মোহাম্মদপুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল ও কাদিরাবাদ খাল সংযুক্ত রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে এই চ্যানেলটির অনেকটাই এখন অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। তাই সংশোশিত ড্যাপ অনুযায়ী এই চ্যানেলটিকে উদ্ধার করার জন্য বিশেষ সুপারিশ করেছি। এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নেয়া উদ্যোগকে টেকনিক্যালি ও কৌশলগত যে কোন প্রকার সহায়তা লাগলে তা আমরা করব। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এটি বেশ ভাল উদ্যোগ বটে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান জনকণ্ঠকে জানান, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল লালবাগ নবাবগঞ্জ বড় মসজিদ এলাকা থেকে নবাবগঞ্জ সেকশন পর্যন্ত আদি চ্যানেলে নদীর স্রোত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। তিনি জানান, এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বহু সময়ের ব্যাপার। তার আগে স্বল্প খরচে এসকেভেটর দিয়ে মাটি তুলে আগে চ্যানেলটির পানি স্রোত ফিরে আনা হউক। তিন যুগ আগে এই চ্যানেলের পানির কলধ্বনি এক থেকে দুই মাইল দূর থেকে শোনা যেত। এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অভিপ্রায় অনুযায়ী আমরা বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সেই অনুযায়ী আমরা মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজিকে (এমআইএসটি) দিয়ে প্রাথমিক জরিপের কাজ সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, রাজধানীর আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলেটি অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করব। কারণ, এর ফলে রাজধানীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই নাগরিক সেবা প্রদানে কোন কম্প্রোমাইজ করা হবে না। তাই প্রথমে আমরা আদি বুড়িগঙ্গায় স্থাপিত সকল অবৈধ অবকাঠামো উচ্ছেদ করব। প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ এই চ্যানেল পুনরুদ্ধার করলে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই সমাধান হবে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী নিজে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলটি উদ্ধার করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং অংশ হিসেবে এজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন একটি বিশাল প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক সমীক্ষাসহ প্রাথমিক কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। মন্ত্রী জানান, বুড়িগঙ্গার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অবৈধ দখলকৃত সকল জমি পুনর্দখল করে চ্যানেলটিকে পুনর্খনন করা নদীর স্রোতধারা ফিরিয়ে আনা হবে। এরপর প্রথমে কম জমি অধিগ্রহণ করে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। একপাশে বাঁধ থাকলেও অপর পাড়ে বাঁধ দেয়াসহ নির্মাণ করা হবে নানা অবকাঠামো। ইতোমধ্যেই দুপাশের নদীর জমির সীমানাও চিহ্নিত করার কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। উদ্ধারকৃত জমিকে কাজে লাগাতে নদীর দু’পাড়কে নাগরিকদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে তৈরি করতে হাতিরঝিলের আদলে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জানান, রাজধানীতে যারা ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ নদীর বুক দখল করে অবৈধভাবে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেছে তা উচ্ছেদ করা হবে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে সিএস এবং আরএস দেখে ধাপে ধাপে সমস্ত জায়গা চিহ্নিত করা হবে। এরপর নদী-খাল দখল করে যত অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশন সরকারের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। অবৈধ দখলধারী কাউকেই কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। তাজুল ইসলাম জানান, নদীর নাব্য রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল কিছুই করতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথমেই আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল উদ্ধার করতে চাই। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়স্থ গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ঢাকা শহরের চারপাশে নদ-নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভারি শিল্পকারখানাকে সরিয়ে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। আবার নদীর জমি কিনে বাসাবাড়ি তুলে ফেলেছে। এখন যে ব্যক্তি টাকা খরচ করে বাড়ি করেছেন তার তো দোষ নেই। সেগুলো সরাতে সময় লাগবে। তিনি জানান, দিনের পর দিন দখল হয়ে যাওয়া নদ-নদীর তীরভূমি উদ্ধার করছে সরকার। ২০০৯ সাল থেকে এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে গিয়ে নানা বেগ পেতে হয়েছে। এ কাজ করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মামলার কারণে এখনও এ উদ্যোগ শতভাগ বাস্তবায়ন করা যায়নি। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমাদের নৌপথ সচল করতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ১০ হাজার নৌপথ তৈরির কথা। আমরা এরইমধ্যে ৩ হাজার করেছি। এ কারণে বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টিতে এখন বেশি প্লাবিত হয় না। দশ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা গেলে জলাবদ্ধতা কমে আসবে। কমে যাবে নদ-নদীর ভাঙ্গন।
×