ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৫২ কোটি টাকা সাশ্রয়

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ২৪ অক্টোবর ২০২১

পায়রা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৫২ কোটি টাকা সাশ্রয়

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পায়রা সেতু রবিবার সকালে উদ্বোধণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধণী ঘোষনার আগে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেছেন, করোনার ঝুঁকিতেও এ সেতুর কাজ অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাই সচেষ্ট ছিলেন। সময়বর্ধন এবং নানাবিধ জটিলতার মধ্যেও প্রকল্পের পূর্ত কাজের চুক্তি মূল্য থেকে ৫২ কোটি ২৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। নির্মানশৈলীর দিক থেকে নান্দনিক শোভামন্ডিত এই সেতুটি ইতোমধ্যে স্থানীয় মানুষের নজর কেড়েছে। বিশেষ করে রাতের আলোকিত সেতু মানুষকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। লাস্ট ফেরি ॥ ১৮ বছর ধরে লেবুখালিতে ফেরি চালিয়েছেন জাকির হাওলাদার। পায়রা সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হওয়ায় রবিবার থেকে এই নৌপথে শেষবারের মতো ফেরি চালিয়েছেন তিনি। এই দক্ষ চালকের হাত ধরে শেষ হলো একটি অধ্যায়ের। এই পথে আর কখনও দেখা মিলবে না ফেরির। লেবুখালী ঘাট থেকে রবিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে শেষ ফেরিটি নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন জাকির। ঘাট ছাড়ার আগে ছলছল করে ওঠে জাকিরের দুই চোখ। এক যুগেরও বেশি সময়ের পেশাগত জীবনের কতোশত স্মৃতি মনে পরে যায় তার। এখান থেকে চলে যেতে হবে সেই বিচ্ছেদ যেমন তাকে পোড়াচ্ছে আবার যাত্রীরা সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাবে সেই আনন্দেও তিনি ভাসছেন। পুরো যৌবণই তার এখানে কেটেছে জানিয়ে জাকির হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, এখন বগায় ফেরি চালাতে হবে। এখান থেকে সাতদিন পর চলে যাব। অনেক স্মৃতি এখানে। কষ্ট লাগছে, কিন্তু ভালোও লাগছে। এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কষ্ট শেষ হয়েছে পায়রা সেতুর মাধ্যমে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। প্রথম টোল দিল যে গাড়ি ॥ লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর উদ্বোধণ হওয়া সেতুতে প্রথম টোল দিয়ে উঠেছে ডলফিন পরিবহন নামের একটি বাস। সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রশাসনের গাড়িগুলো পার হওয়ার পর সেতুতে ওঠে কুয়াকাটা থেকে বরিশালগামী যাত্রীবাহি এ বাসটি। বাসের চালক আব্দুস সাত্তার জনকণ্ঠকে বলেন, সব সময় ফেরিতেই পায়রা নদী পাড়ি দিতাম। সেতু উদ্বোধণের দিন সেতুতে ওঠার প্রথম সুযোগ হারাতে চাইনি। আমি প্রথম বাস নিয়ে সেতু দিয়ে এসেছি। স্বপ্নের সেতু নির্মান থেকে শুরু করে উদ্বোধণের জন্য তিনি (সাত্তার) প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে টোলের টাকা বেশি বলে তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে বলেন, পায়রা সেতুতে প্রথম টোল হিসেবে আমি ৩৪০ টাকা দিয়েছি। ফেরির চেয়ে এই টোলের খরচ বেশি। তাই টোলের টাকা কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করছি। সেতুর টোল প্লাজার কর্মী সজীব দাস জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবার সকাল থেকে ফেরি দিয়েই যানবাহন পার হচ্ছিল। সেতুর উদ্বোধনের ঘন্টা খানেক পর টোল প্লাজা খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সেতু দিয়েই গাড়ি চলাচল করছে। উল্লেখ্য, বরিশাল বিভাগে এই প্রথম ফোরলেনের পায়রা সেতু নির্মিত হয়েছে। আর এ সেতু পারপারের টোল আদায়ে যে ডিজিটাল টোলপ্লাজা নির্মান করা হয়েছে সেটিও প্রথমবারের মতো বিভাগের কোন সেতুতে সংযুক্ত হয়েছে। এছাড়া সেতুর বরিশালপ্রান্তে ওজন স্কেল বসানো হয়েছে। সেই সাথে দেশের কোন সেতুতে প্রথমবারের মতো ‘ব্রিজ হেলথ মনিটরিং সিস্টেম’ সংযোজন করা হয়েছে। ফলে বিভিন্ন দুর্যোগ বা ওভারলোডেড গাড়ি চলাচলের ফলে ব্রিজের যাতে কোনো ধরনের ক্ষতি না হয়, তার (ক্ষতির) পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।
×