ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পানি নামতে শুরু করলেও কমেনি ভোগান্তি, খাবার ও বিশুদ্ব পানির সংকট

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২২ অক্টোবর ২০২১

তিস্তার পানি নামতে শুরু করলেও কমেনি ভোগান্তি, খাবার ও বিশুদ্ব পানির সংকট

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট ॥ কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রেজাউল।বুধবারের বন্যায় তার ছোট মনিহারী দোকানটি বানের পানিতে ভেসে গেছে। দোকানে রক্ষিত মালামাল পানিতে পড়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুঁজি হারিয়ে সাহায্যের আশায় দিগবিদিক ছুটছেন তিনি। একই গ্রামের আলমগীরের থাকার এক মাত্র ঘরটি বানের পানিতে ভেসে গেছে। রুদ্রেশ^র গ্রামের মর্জিনা, জোসনা ও সেকেন্দারের বসত ভিটা ভেঙ্গে গেছে। তাদের এখন আশ্রয় হয়েছে উঁচু রাস্তায় । এলাকায় তেমন কোন কাজও নেই। উপজেলার কাকিনা বাজার এলাকায় মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবাররের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরন করবেন এমন সংবাদে ত্রানের আশায় তারাও সকাল দশটায় স্কুল মাঠে উপস্থিত হয়েছেন। দুপুরে বানভাসী এসব মানুষ জানায়, বাহে, দিনটাই চলি গেইল, আশায় আশায় আসছিনু। যদি কপালোত সাহায্য জুটে। এলা দেখি লিস্টত হামার নাম নাই। এখানে দেড় হাজার মানুষকে চাল, ডাল, চিনি ও শুকনো খাবার দেওয়া হয়। তারা জানাই, তাদের বাড়িতে এখনও পানি আটকে আছে। টিউবওয়েল ঢুবে গেছে। পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে গেছে। গরু ছাগল নিয়ে তারা রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। এমন চিত্র জেলার হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের তিস্তা তীরবর্তী গ্রামগুলোয়। সরকারী এক হিসাবমতে জেলায় ২৯ হাজার ৭১৩ টি পরিবারের ১ লাখ ১৭ হাজার ২৫২ জন লোক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। উঠতি আমন আবাদ ২ হাজার ৯৭৫ হেক্টর সহ ভুট্টা, আলু ও চীনা বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীন রাস্তা ঘাট ভেঙ্গে প্রায় ২২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেসরকারী হিসাব মতে ক্ষতির এই পরিমান অনেক বেশি হবে। দুপুরে মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত ত্রান সামগ্রী সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ত্রান প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান বলেন, বন্যায় যারা ঘর বাড়ি হারিয়েছেন সরকার তাদের পাকা ঘর নির্মান করে দিবেন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান। তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই বিষয় নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে। ডিসেম্বেরের মধ্যে এর অনেক কিছুই দৃশ্যমান হবে। তিস্তা পাড়ের মানুষজনের দূর্ভোগের জন্য ব্যারেজ কতৃপক্ষকে দায়ী করে লালমনিরহাট ২ আসনের সাংসদ ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন জানান, ব্যারেজের ৪৪টি গেটের মধ্যে ৭টি গেট খুলে না দেওয়ায় এই অবস্থার স্বৃষ্ঠি হয়েছে। গেটগুলো কেন খোলা হয়নি তার কারন তিনি জানতে চান। ত্রান বিতরন অনুষ্ঠানে ত্রান সচিব মোহাম্মদ মোহসিন, জেলা প্রশাসক আবু জাফর, পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানাসহ প্রশাসনের উধ্বর্তন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। গত বুধবারের একদিনের বন্যায় লন্ডভন্ড হয় লালমনিরহাটের নদীপাড়ের গ্রামগুলো। ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে থাকা জেলার ৪টি উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী বিস্তর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। ভেঙ্গে যায় ব্যারেজের ফ্লাড বাই পাস।
×