ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার টুয়েলভে ॥ টাইগারদের চমৎকার নৈপুণ্য

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২২ অক্টোবর ২০২১

সুপার টুয়েলভে ॥ টাইগারদের চমৎকার নৈপুণ্য

মোঃ মামুন রশীদ ॥ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো পরাক্রমশালী দুটি দলকে হারিয়ে চরম আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে শঙ্কায় পড়ে টি২০ বিশ্বকাপের প্রাথমিক রাউন্ড থেকে ছিটকে পড়ার। সেই শঙ্কাকে উড়িয়ে, সমালোচকদের মুখে ছাই ঢেলে শেষ পর্যন্ত দোর্দ- প্রতাপেই সুপার টুয়েলভ পর্ব নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। পরপর দুই ম্যাচ ছিল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ও প্রাথমিক রাউন্ড পেরোনোর চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে ওমানকে ২৬ রানে হারিয়ে নিজেদের মনোবল ফিরে পাওয়া টাইগাররা ৮৪ রানের রেকর্ড গড়া ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছে পাপুয়া নিউগিনিকে (পিএনজি)। বৃহস্পতিবার দুুপুরে ওমানের মাসকাটে আল আমিরাত ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ২০ ওভারে ১৮১ রান তোলে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে। টি২০ বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এরপর সাকিব আল হাসান ৯ রানে ৪ উইকেট শিকারের মাধ্যমে টি২০ বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বাধিক ৩৯ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়া পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদিকে ছুঁয়ে ফেলেন এবং পিএনজি ১৯.৩ ওভারে ৯৭ রানে গুটিয়ে যায়। ফলে টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৮৪ রানে জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। তাই রানরেট (১.৭৩৩) অনেক বেশি থাকায় প্রাথমিক রাউন্ডে গ্রুপ ‘বি’ থেকে বাংলাদেশের সুপার টুয়েলভে ওঠা নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই আর গ্রুপের শেষ ম্যাচে ওমান-স্কটল্যান্ডের ফলাফল দেখার অপেক্ষা করতে হয়নি। পরপর দুই জয়ে উজ্জীবিত হয়ে দৃঢ় মনোবল নিয়েই আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিতব্য সুপার টুয়েলভ পর্বে উন্নীত হলো টাইগাররা। ২১ বছর ধরে টেস্ট খেলুড়ে দল হিসেবে বাংলাদেশের সামনে খুবই ছোট নাম স্কটল্যান্ড, ওমান ও পাপুয়া নিউগিনি (পিএনজি)। তাছাড়া এবার টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বরে অবস্থান নিয়েই গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আটে না থাকতে পারায় বরাবরের মতোই এবার প্রাথমিক রাউন্ডে খেলতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেট বিশ্বের বিশ্বাস এবং হিসাব ছিল প্রাথমিক রাউন্ডের ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ দলই উঠবে সুপার টুয়েলভে। কিন্তু শুরুতেই ধাক্কা খেয়ে উল্টো ছিটকে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশের। স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানে হেরে বাজেভাবে বিশ্বকাপ মিশন শুরু হয়। এ কারণে সুপার টুয়েলভে উঠতে হবে পরের দুই ম্যাচই হয়ে দাঁড়ায় বাঁচা-মরার লড়াই। ওমানে আগে কখনও খেলেনি বাংলাদেশ। পরপর ৩ টি২০ সিরিজ জিম্বাবুইয়ে, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে তাই চরম আত্মবিশ্বাসী ছিল টাইগাররা। স্বপ্ন জানিয়েছিল এবার অতীতের ৬ বিশ্বকাপে যে ব্যর্থতা তা কাটিয়ে দারুণ কিছু করার। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরাও সেই আত্মবিশ্বাস পেয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক নৈপুণ্যে। কিন্তু সেই দলটির প্রাথমিক রাউন্ড পেরোনোর জন্য ডু-অর-ডাই ম্যাচ হয়ে দাঁড়ায় ওমান ও পিএনজির বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচ। ওমানের বিপক্ষেও নানা ভুল-ভ্রান্তির পর অভিজ্ঞতার জোরে ২৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেটি মন ভরাতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থক ও দেশবাসীর। সমালোচনায় মুখর ছিলেন সবাই মাহমুদুল্লাহদের নিয়ে। তবে ওমানের বিপক্ষে জয়ে যেন হতচকিত ও বিবর্ণ বাংলাদেশ দল আবার উজ্জীবিত, মনোবলে বলীয়ান হয়ে রং ফিরে পায়। জিততে হবে আবারও, পিএনজি দুই ম্যাচ হেরে কোণঠাসা বাংলাদেশকে হারানোর স্বপ্নে বিভোর। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার টস জিতে আবার ব্যাটিং নেন মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সমালোচিত বাংলাদেশ, দুরুদুরু হৃদয়ের বাংলাদেশ দল উইকেট হারায় আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান নাইম শেখের (০)। তবে এদিন লিটন কুমার দাস নিজকে ফিরে পেয়েছেন, ওয়ানডাউনে ফেরা সাকিবও ব্যাট হাতে গর্জে ওঠেন। তারা দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন তারা ৪১ বলে। যদিও শুরুটা কোন কিছু হারানোর নেই এমন চিন্তাধারায় উজ্জীবিত পিএনজি বোলাররা দুর্দান্তই করেছিলেন। কিন্তু পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৫ রান ওঠে যা ভাল ভিত দেয়। লিটন ২৩ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২৯ রানে ফিরে যান। ড্যামিয়েন রাভুর চতুর্থ ওভারে ১৬, আসাদ ভালার দশম ওভারে ১৩ রানের কারণে ১০ ওভারে ২ উইকেটে ৭১ রান তুলে বড় ইনিংসের পথ তৈরি হয়। কিন্তু এদিনও মুশফিকুর রহিম ব্যর্থ হয়ে ৮ বলে ৫ রানেই সাজঘরে ফিরে যান। কিন্তু পরে মাহমুদুল্লাহ ও সাকিবের বিস্ফোরক মনোভাবে খেই হারিয়ে ফেলে পিএনজি বোলাররা। চ্যাড সোপারের ১৭তম ওভারে ১৯ ও ২০তম ওভারে ২০ রান বাংলাদেশকে নিজেদের টি২০ বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পাইয়ে দেয়। মাহমুদুল্লাহ চলতি আসরে এখন পর্যন্ত দ্রুততম ফিফটি পেয়ে যান ২৭ বলে। আফিফ হোসেনের (১৪ বলে ২১) সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়েন তিনি। মাহমুদুল্লাহ ২৮ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৫০ রানে এবং সাকিব ৩৭ বলে ৩ ছক্কায় ৪৬ রান করেন। ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ধর্মশালায় ওমানের বিপক্ষে ২ উইকেটে ১৮০ রান করেছিল বাংলাদেশ। এদিন ৭ উইকেটে ১৮১ রান তুলে নতুন রেকর্ড গড়ে। মাত্র ৬ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ২টি করে উইকেট নেন কাবুয়া মোরেয়া, আসাদ ভালা ও রাভু। বিশাল সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ১৭ রান করতে পারে পিএনজি, হারায় ৪টি উইকেট। তাসকিন, সাইফউদ্দিনের পেস আর সাকিবের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। কেউ দাঁড়াতেই পারেননি। এক সময় ২৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে চরম লজ্জার মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয় তাদের। অসহায় পিএনজি ব্যাটসম্যানরা প্রথম বাউন্ডারির হাঁকায় দশম ওভারে। ইনিংসের ৫৯তম বলে শেখ মেহেদিকে চার হাঁকান হিরি হিরি। তবে বিশ্বকাপ মিশন শেষ পর্যন্ত কিছুটা লজ্জা এড়িয়ে তারা শেষ করেছে ৮ নম্বরে নেমে কিপলিন ডোরিগার ৩৪ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৪৬ রান করার কারণে। তবু ১৯.৩ ওভারে ৯৭ রানে গুটিয়ে যায় তারা। সাকিব ৪ ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে ৪টি, সাইফউদ্দিন ও তাসকিন ২টি করে উইকেট নেন। তবে এমন ম্যাচেও বাঁহাতি নির্ভরযোগ্য পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন। ৮৪ রানের বিশাল জয়ে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের সুপার টুয়েলভ। প্রাথমিক রাউন্ডের ‘বি’ গ্রুপে সেরা দলের প্রমাণটাও দিয়ে দেয় এর মাধ্যমে। কারণ এটি টি২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোন দলের যৌথভাবে পঞ্চম সর্বাধিক ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। আর বাংলাদেশের টি২০ ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে বেলফাস্টে ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডকে ৭১ রানে হারানোই ছিল টাইগারদের বড় জয়। এমন একটি জয়ে সব সমালোচনা, শঙ্কাকে মিথ্যা করে এখন আরব আমিরাতে মর্যাদার সুপার টুয়েলভ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
×