ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাশ্মীর থেকে কুমিল্লা ॥ পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা সর্বত্র সক্রিয়

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২২ অক্টোবর ২০২১

কাশ্মীর থেকে কুমিল্লা ॥ পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা সর্বত্র সক্রিয়

সম্প্রতি দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা যেভাবে কুমিল্লা থেকে রংপুর পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে, এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন বা আকস্মিক ঘটনা নয়। বাঙালীর আবহমানকালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য চরিত্রগতভাবে অসাম্প্রদায়িক হলেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাত সৃষ্টি করে দুই প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের ভেতর বৈরিতা, বিদ্বেষ, সংঘাত সৃষ্টি করার মতো ব্যক্তি ও গোষ্ঠী উপমহাদেশে সব সময় ছিল, যা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনকালে। ব্রিটিশদের ‘ডিভাইড এ্যা- রুল’-এর বিভাজন নীতির ধারাবাহিকতায় কলোনিকালে হিন্দুদের অধিকতর হিন্দু এবং মুসলমানদের অধিকতর মুসলমান বানিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিপরীতে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও হানাহানিকে উৎসাহিত করা হয়েছে, যার প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটেছে কবি ইকবাল, চৌধুরী রহমত আলী ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্র সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারতবর্ষকে দ্বিখ-িত করে কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টির মাধ্যমে। পাকিস্তানের জনক জিন্নাহ শেষ জীবনে আবিষ্কার করেছিলেন ভারতের দুই প্রধান ধর্মের অনুসারী হিন্দু ও মুসলমানরা দুটি পৃথক জাতি, তারা একদেশে একসঙ্গে থাকতে পারে না! ভারতবর্ষে যেহেতু হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সে জন্য সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র চাই। পাকিস্তান বানাতে গিয়ে ভারত বিভক্তিকালে জিন্নাহর সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের মাশুল দিতে গিয়ে ধর্মের নামে রাজনীতির যূপকাষ্ঠে উপমহাদেশের প্রায় কুড়ি লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে দুই কোটির বেশি মানুষকে। ‘পাকিস্তান’ নামকরণ করেছিলেন অক্সফোর্ডের ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী। ১৯৩৩ সালে তিনি পাঞ্জাব, আফগান প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানের ইংরেজী আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘পাকিস্তান’ বানিয়েছিলেন। তার পাকিস্তানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ বাংলার কোন স্থান ছিল না। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবেও ভারতবর্ষে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় একাধিক রাজ্য গঠনের কথা বলা হয়েছিল। বাংলায় মুসলিম লীগ ক্ষমতায় আসার পর পৃথক পৃথক রাজ্য (ঝবঢ়ধৎধঃব ঝঃধঃবং)-এর বহুবচনার্থের ‘ং’ অক্ষরটি অবলুপ্ত হয়ে যায়। এই শঠতা ও প্রতারণাই ছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের ভিত্তি। বাংলার সোহরাওয়ার্দী, শরৎ বসু, আবুল হাশিম প্রমুখ মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের কিছু নেতা বাংলাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করা এবং ধর্মীয় বিভাজনের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যে কারণে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির খেলায় কোটি মানুষের মৃত্যু ও বাস্তুচ্যুতির মূল্যে সম্পন্ন হয়েছে বঙ্গ বিভাজন। জিন্নাহর তত্ত্ব অনুযায়ী ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। জম্মু-কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হলেও সেখানকার মহারাজা ছিলেন হরি সিং এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরী মুসলমানদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন শেখ আবদুল্লাহ, যিনি তার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে জিন্নাহর কট্টর সমালোচক এবং পাকিস্তান আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় ব্রিটিশশাসিত ভারতে বড় ছোট মিলিয়ে ৫৮৪টি দেশীয় রাজ্য ছিল, যেগুলো ব্রিটিশ শাসনের অধীনে বিশেষ মর্যাদা ভোগ করত। সবচেয়ে বড় রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর (আয়তন: ৮৪,৪৭১ বর্গমাইল)-এর মহারাজা স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন। এই উদ্দেশ্যে ১২ আগস্ট (১৯৪৭) পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে ‘স্থিতাবস্থা চুক্তি’ও স্বাক্ষর করেছিলেন। মহারাজার সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি লংঘন করে পাকিস্তান ২২ অক্টোবর উপজাতিদের ছদ্মবেশে সৈন্য পাঠিয়ে জম্মু-কাশ্মীর দখল করার উদ্যোগ নেয়। ‘অপারেশন গুলমার্গ’ নামে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের উপজাতীয় দোসরদের যৌথ হামলায় জম্মু-কাশ্মীরে তখন ৩৫ হাজার নিরস্ত্র মানুষের প্রাণহানি ঘটে। হাজার হাজার নারীধর্ষণ, গৃহে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ঘটনাও ঘটে; যা বিশাল পরিসরে ১৯৭১ সালে সংঘটিত হয়েছিল বাংলাদেশে ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর নামে। ২২ অক্টোবরের অভিযানে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী যখন রাজধানী শ্রীনগরের কাছাকাছি চলে আসে, তখন ভারতের সাহায্য লাভের জন্য মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের ভারত অন্তর্ভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন (২৭ অক্টোবর ১৯৪৭)। ততদিনে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পাকিস্তান দখল করে নিয়েছিল। ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হামলা ও গণহত্যার দিনটি কাশ্মীরীরা তখন থেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে। বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিতে আয়োজিত সুইজারল্যা-ে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’র একাধিক অনুষ্ঠানে আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে ‘ইউনাইটেড কাশ্মীর পিপলস ন্যাশনাল পার্টি’র চেয়ারম্যান সরদার শওকত আলী জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তানের গণহত্যার স্বীকৃতি এবং এর বিচার দাবি করেছেন। গত ৭০ বছর ধরে কাশ্মীর পুনর্দখলের লক্ষ্যে পাকিস্তান সেখানে মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রফতানি করছে। ১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে হিন্দুনিধন যজ্ঞের হোতা ছিল পাকিস্তানী ‘মুজাহিদীন’রা। কাশ্মীরে এখন হিন্দু নেই বললেই চলে। কাশ্মীরের মতো বাংলাদেশকে হিন্দুশূন্য করার প্রক্রিয়া পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতির অনুসারীরা ’৪৭-এর পর থেকেই গ্রহণ করেছে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সরকারের আদমশুমারী ও সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৪১ সালে বর্তমান বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫১-এর আদমশুমারীতে দেখা যাচ্ছে এই জনসংখ্যা কমে ২২ শতাংশ হয়েছে। ১৯৬১-র শুমারিতে ১৮.৫০ শতাংশ, ১৯৭৪-এর শুমারিতে ১৩.৫০, যা ২০১১-এ দাঁড়িয়েছিল ৮.৫৪ শতাংশে। ১৯৭৪ এবং ২০১১-এর শুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যায় ধস নামার কারণ- ১৯৬৪-এর দাঙ্গা, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭৫-এর পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির উত্থান। বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যার এই ধারাবাহিক নিম্নগতি প্রধানত পাকিস্তানের ধর্মীয় দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভিন্ন অভিব্যক্তির কারণেই ঘটেছে। ১৯৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান ভেঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের রাজনীতিকে বাংলাদেশের মাটিতে কবর দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা না করলে ১৯৭২-এর সংবিধান থেকে রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান নীতি- ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ মুছে ফেলে, ধর্মের নামে রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সংবিধানের পাকিস্তানীকরণ সম্ভব হতো না। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে পাকিস্তানী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কবর দিলেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান কবর খুঁড়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ড্রাকুলারূপী প্রেতাত্মাকে বের করে এনেছে। জামায়াতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিএনপি যখনই সুযোগ পেয়েছে, যে কোন অজুহাত সৃষ্টি করে হিন্দুদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে খালেদা জিয়ার বিএনপি যখন ক্ষমতায় তখন ভারতের সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারীরা অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছিল। ভারতে একটি মসজিদ ভাঙ্গার অজুহাতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা ৩৬০০ মন্দির ভেঙেছিল। তখন পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা দুই শতাংশের নিচে হলেও সেখানেও কম মন্দির ভাঙ্গা হয়নি। জামায়াত-বিএনপি জোটের এই হিন্দুনিধন যজ্ঞের চরম রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। আমি ২০০১ সালের সংখ্যালঘু নির্যাতনের একজন প্রত্যক্ষদর্শী শুধু নই, ভুক্তভোগীও বটে। নির্বাচনকেন্দ্রিক নজিরবিহীন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লেখার জন্য আমাকেসহ বহু সাংবাদিককে গ্রেফতার ও কারানির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। সাহাবুদ্দিন কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় দশ হাজার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে ২০১১ সালের আদমশুমারিতে হিন্দু জনসংখ্যা কমে সাড়ে আট শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকারী চাকরি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে সব বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করা হতো, তা বহুলাংশে অপসারণ করা হয়েছে। সংবিধানে প্রজাতন্ত্রের চার মূলনীতি পুনঃস্থাপিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদ দিলে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নির্বিঘ্নে তাদের পূজা ও অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব পালন করছিলেন। যে কারণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়ে ১০.৩ শতাংশ হয়েছে এবং এই উর্ধগতি অব্যাহত রয়েছে। কারণ, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের ঘটনা কমেছে এবং বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনকালে যারা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। গত কয়েক বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা সারাদেশে অত্যন্ত শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে উদ্যাপিত হচ্ছিল। জামায়াত-হেফাজতের অনুসারী মোল্লারা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়াজে দুর্গাপূজার উৎসবে মুসলমানদের যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ফতোয়া দিলেও সাধারণ মুসলমানদের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সুযোগ পেলে পূজাম-পে গিয়েছেন। বলেছেন- ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’ এটা বাঙালীর হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অভিব্যক্তি। ১৯৭১-এ বাংলাদেশকে যারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত রাখার জন্য ইসলামের নামে নৃশংসতম গণহত্যা ও নারীধর্ষণসহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যারা বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের তালেবানী আফগানিস্তান বা জেনারেল জিয়াউল হকের পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাতে চায়, তারা বাঙালী সংস্কৃতির যে কোন সম্প্রীতির অভিব্যক্তি ধ্বংস করবে, এটাই স্বাভাবিক। পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের ওয়াজে, জুমার নামাজের খুতবায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইসলামী টিভি ও ব্লগে ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত ও ভিন্ন জীবনধারার অনুসারী মানুষদের পাশাপাশি ভারত ও হাসিনা সরকারের প্রতি বিষোদ্গার একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকারের প্রশাসনে পাকিস্তানী প্রেতাত্মা সব সময় ছিল, এখনও আছে। গত এক দশকে আওয়ামী লীগেও এসব প্রেতাত্মার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস কেন অব্যাহত রয়েছে, এটাও তার একটা কারণ। শেখ হাসিনার সরকার সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে পারেনি, এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের শাস্তি দিতেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে প্রধানত প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে। তবে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্য সরকার দায়ী এ কথা বলা পাকিস্তানী প্রেতাত্মাদের পক্ষাবলম্বন করারই নামান্তর। দুর্গাপূজার দু’মাস আগে পাকিস্তান তাদের পোষা মৌলবাদী সন্ত্রাসী তালেবানদের আফগানিস্তানে ক্ষমতায় বসিয়েছে, যা বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস সংঘটনে উৎসাহিত করেছে। কুমিল্লার ঘটনার আগেও বহু জায়গায় প্রতিমা ভাঙ্গার খবর পত্রিকায় দেখেছি। বাংলাদেশে যারা সন্ত্রাসী রাজনীতির ধ্বজাধারী, যারা হিন্দুদের রক্তপান করে মৃত পাকিস্তানকে ড্রাকুলার মতো পুনরুজীবিত করতে চায়, তারাই এবার দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক তা-ব চালিয়েছে। আব্বাসীদের মতো ওয়াজী সন্ত্রাসীরা যেভাবে কুমিল্লার ঘটনাকে উপলক্ষ করে শেখ হাসিনার সরকারকে হিন্দু ও ভারতের দালাল আখ্যায়িত করে উৎখাতের হুমকি দিচ্ছে, বাংলাদেশে তালেবান, আলকায়দার মতো ইসলামী হুকুমত কায়েমের কথা বলছে, তাদের গ্রেফতার না করে শুধু মাঠপর্যায়ের কিছু খুচরা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করলে কোন ফল হবে না। ১৯৬৪ সালে কাশ্মীরের এক মসজিদ থেকে মহানবীর এক গাছি চুল চুরি হয়েছে- এমন গুজব রটিয়ে এদেশে হিন্দুদের ওপর নারকীয় হামলার কথা আমরা ভুলে যাইনি। কুমিল্লার ঘটনা আরও পরিকল্পিত। জামায়াত- হেফাজতের জঙ্গী হুজুরদের অজুহাতের অভাব হয় না। তাদের পেছনে রয়েছে পাকিস্তানের আইএসআই-এর ইন্ধন। বিভিন্ন ওয়াজে ‘গাজওয়ায়ে হিন্দ’-এর নামে যাবতীয় উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা বন্ধ করতে না পারলে বাংলাদেশে শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে অর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের মানচিত্র হারিয়ে যাবে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনকালে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ যদি জাতির পিতার আদর্শ উপেক্ষা করে পাকিস্তানের প্রেতাত্মাদের রাজনৈতিক ও অন্যান্য সুযোগ প্রদান অব্যাহত রাখে, তাহলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশ ও জাতির জন্য আগামীতে সমূহ দুর্যোগ অপেক্ষা করছে। ২১ অক্টোবর ২০২১
×