ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির মডেল শহর সৈয়দপুর

প্রকাশিত: ১৬:০৯, ২০ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির মডেল শহর সৈয়দপুর

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী ॥ সৈয়দপুরে সাম্প্রদায়িক মতার্দশের উর্ধ্বে ‘সম্প্রীতি’ নামক বৃক্ষের শাখা প্রশাখা হয়ে একত্রে বসবাস করছেন এ জনপদবাসিরা। সুদীর্ঘ কাল এভাবে অতিক্রান্ত হলেও কখনই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আর এ কারণে শান্তির জনপদ হিসেবে খ্যাতী অর্জন করেছে এ জনপদ। জানা যায়, ভারতের কুচ বিহার থেকে আগত মুসলিম সৈয়দ পরিবার প্রথমে এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। পরে ওই পরিবারের নামানুসারে প্রথমে সাইয়্যেদপুর পরে সৈয়দপুর নামকরণ করা হয়। মুলতঃ ১৮৭০ সালে রেলওয়ে কারখানাকে কেন্দ্র করে সৈয়দপুর শহরের গোড়া পত্তন হয়। আর কারখানায় কর্ম সুত্রে পাকিস্তান ও ভারতের বিহার, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, আসাম, পশ্চিম বাংলা, রাজস্থান, কাশ্মিরের বিভিন্ন ভাষাভাষি ও ধর্মের লোকের এ জনপদে আগমন ঘটে। ত্বদানিন্তন বৃটিশ থেকে পূর্ব পাকিস্তান আমলে এটি রেলওয়ে সিটি শহর ছিল। নানা কারনে বিলুপ্ত হলেও বর্তমান সরকারের আকাশ, রেল ও সড়ক পথের আঞ্চলিক ও আন্তজার্তীক যোগাযোগ ব্যাবস্থা দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ শহরে রুপ নিয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও মতাদর্শ নিয়ে শান্তির বীজ বপনে একত্রে বসবাস করছেন এ জনপদবাসি। সুত্র মতে, ছোট এ উপজেলায় রয়েছে ৪১৭ টি মসজিদ, ২টি চার্চ ও ৮৪ মন্ডপ। স্ব-স্ব ধর্মালম্বীরা শান্তিপুর্ণ ভাবে তাদের ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য প্রার্থনা বা ইবাদত করছেন। বুধবার (২০ অক্টোবর) ঈদে মিলাদুন্নবী (স:)এর দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ জশনে জুলুসে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আনন্দ শোভাযাত্রা করেন। উৎসবের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয় এ দিবসসহ অন্যন্য সকল ধর্ম দিবস। বিশেষ করে গোলাহাট এলাকার ঐতীহ্যবাহি চিনি মসজিদ। এর পাশেই খ্রিষ্টানদের কবরস্থান। মসজিদে চলছে ইবাদত। পাশে খ্রিষ্টানরা রীতি অনুযায়ি তাদের স্বজনদের সমাহিত করছেন কবরস্থানে। এছাড়া এ শহরের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের পাশে সনাতন ধর্মালম্বীরা তাদের সবৃবৃহৎ দুর্গাৎসবে জাকজমক ভাবে পালন করেআসছেন। আর শতাব্দিকাল এ ভাবেই অতিবাহিত হলেও কখনই কেহ প্রশ্ন তোলেনি। সকল ধর্মালম্বীরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে নিজ ধর্ম শান্তিপুর্ন ভাবেই পালন করছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ফাউন্ডেশনের সৈয়দপুর উপজেলা মাঠ কর্মকর্তা মো: সাদিকিন আলম জানান, প্রায় ৯০ ভাগ ইসলাম ধর্মের অনুসারির এ জনপদে ধর্ম নিয়ে বিগ্রহের ঘটনা কখনই ঘটেনি। শান্তিপুর্ণ ভাবেই সকলে নিজ নিজ ধর্ম পালন করছে। সৈয়দপুর চার্চ কমিটির সাধারন সম্পাদক নিকোলাস গোমেজ জানান, এখানে প্রায় ৬ শত খ্রিষ্টধর্মালম্বী স্বতস্ফুর্ত ভাবে বড়দিন, গুড ফ্রাইডে ও ষ্টার সানডে জাকজমক ভাবে উদযাপন করেন। কখনই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কারণ আমরা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের হলেও সকলে প্রতিবেশি স্বজন। সুখ,দু:খ ভাগাভাগি করে যুগের পর যুগ একত্রে অতিবাহিত করছি। একই মত প্রকাশ করেন সৈয়দপুর হিন্দু কল্যান সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট তুষার কান্তি রায়। তিনি জানান, ধর্মীয় প্রতিটি উৎসব পালনে সকল সম্প্রদায়িরা পারস্পারিক সহযোগিতায় পালন করছি। দেশের কোন এলাকার বিছিন্ন ঘটনার প্রভাব কখনই পরেনি। এতে সকলে মোরা শান্তিপুর্ন ভাবে বসবাস করছি। আর এতেই এ জনপদ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতির মডেলে পরিণত হয়েছে।
×