ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ধামরাইয়ে বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে দিল সন্তানরা

প্রকাশিত: ১৪:০২, ২০ অক্টোবর ২০২১

ধামরাইয়ে বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে দিল সন্তানরা

সংবাদদাতা ধামরাই, ঢাকা ॥ ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়নের রশ্মিমপুর গ্রামের মরিয়ম বেগম নামে এক শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে সন্তানরা গাড়ি থেকে ফেলে দিলেন একটি বাজারের পাশে। এলাকাবাসী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে একটি বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। ডাক্তার, ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ীসহ ওই বৃদ্ধা মায়ের ৮ ছেলে মেয়েদের, সবাই সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত। তারপরও কোনো ছেলের বাড়িতেই তার মাথা গুঁজবার ঠাঁই হলো না। তার পিতার দেওয়া ১৫ বিঘা জমি সন্তানদের লিখে না দেওয়ায় এ পরিণতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রামবাসী। শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্ব নিলেন গ্রামবাসী। সরেজমিন জানা যায়, ওই গ্রামের প্রয়াত মোঃ আসুরুদ্দিন সরকার নামে এক ব্যক্তি ছিলেন। তাঁতশিল্পসহ কয়েকশ বিঘা জমি ছিল আসুরুদ্দিন সরকারের। তাই একমাত্র মেয়ে মরিয়ম বেগমের সুখের কথা ভেবে তাকে ১৫ বিঘা জমি লিখে দিয়ে বিলাসবহুল একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে বিয়ে দেন। এরপর জামাতা মোঃ আব্দুস সালামকে ঘর জামাই হিসেবে বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরবর্তীতে মরিয়ম বেগম ৬ ছেলে ও ২ মেয়ে সন্তানের জননী হন। প্রত্যেক সন্তানকেই তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আক্তারুজ্জামান একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা। ছোট ছেলে ডাঃ মোঃ হুমায়ুন কবীর বিসিএস কর্মকর্তা (ডাক্তার)। তিনি একটি সরকারি আবাসিক হাসপাতালে কর্মরত। সাখাওয়াত হোসেন সাকী ও আব্দুল্লাহেল বাকী নামকরা ব্যবসায়ী ও আলমগীর হোসেন বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি করেন। তাদের কারও সংসারে কোনো অভাব অনটন নেই। শুধু বৃদ্ধা মাকে ভরণ পোষণ করতে যেন তাদের অভাবের শেষ নেই। ক্ষুধার জ্বালায় সদা ছটফট করেন এই বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম। ক্ষুধার যনত্রণা মেটাতে ঘুরে বেড়ান এদিক-সেদিক। না খেয়ে তার বাক শক্তি হারিয়ে ফেলার উপক্রম হয়ে গেছে। সন্তানদের কাছে বিষয়টি বারবার বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসার কথা বলে গাড়িতে তুলে স্থানীয় বঙ্গবাজারের পাশে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। তার গোঙানির শব্দ পেয়ে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মোঃ আব্দুল লতিফের বাড়িতে নিয়ে সেবা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বৃদ্ধার ছেলে মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, আমার মায়ের অনেক বয়স হয়েছে। তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের নিয়ে এমন মিথ্যাচার করছেন। আমরা তাকে যথেষ্ট ভরণ পোষণ দিচ্ছি ও সেবাযতœ করছি। মোঃ আব্দুল লতিফ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, বৃদ্ধার ছেলেরা যদি তার এত ভরণ পোষণ দিচ্ছে ও সেবাযতœ করছে তাহলে তার এ করুণদশা কেন? শুধু তাই নয়, গ্রামবাসী মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় বঙ্গবাজারের পাশের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিচ্ছেন কেন?
×